Thursday, November 21, 2024

৩টি কবিতা | শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় | উত্তর শিলালিপি


শেষের উপদেশ


ভগ্নকায়, উপহাসে উপদেশ দেন বুদ্ধ তথাগত: দিয়া 

জ্বালাও নিজের বুকে; পাঁজরে দীপক রাগ, জ্বলেপুড়ে হও

সতত আনন্দময়—থাক না স্বসই নথি, স্বদাখিলা; কাগজ-কালির 

দাস কেন হবে? তারচেয়ে, বল্গা খোলো বল্কলের—

        আত্মদীপে মল্লিনাথ            স্বটীকে স্বনাথ হও,

               বাও ডিঙা মুক্তছন্দে অনন্ত তিমিরে।


প্রশ্নে-প্রশ্নে


অনেক খেলেছি আমি গড়াপেটা খেলা—

থলি-হাতে লোকেদের দেখে, ডেকে-ডেকে,

আলাপে খেজুরে প্রীতি, বলিনি গড়িয়াহাটে, ভোরকার ঝোঁকে

কিংবা সাঁঝে, ‘বাজারে যাচ্ছেন বুঝি?’ মেছুনির ঝুলি

ছিল খালি, তাও কি করিনি আমি বরফ-কবর বেলে, ফলুই, ট্যাংরার

দরদাম, বাজারে বিশ্বাসে? 

টেবিলে বার্নিশ ছিল, হাঁকিনি কি তা-ও,

‘দর্পণ কোথায় ঘরে? কোন্ দেশে আরশিনগর?’ 

খেললাম গড়াপেটা ঢের; চেলে যাব আরও কত।


আরশোলা


অল্পে অল্পে দিবাযাম মরি রোজ, সকলেই তাই। 

মরণের বাড়া সাধু, সহজে সৎ আর কী সংসারে। 

তাও কী আশ্চর্য, খোদ সত্যবদ্ধ দ্বিতীয় কৌন্তেয়,

বলেননি, সেই কবে দ্বাপরের পর্বে:

‘অহরহ যায় জীব, জন্তু-পশু, শমনসদনে,

লাসের উৎকট বাসে কেবলই ঘোলায় সুবাতাস,

তবু হেরো মানুষের কাণ্ডজ্ঞান—গর্দভ বিরাট,

ভাবে কিনা, যাক শত্রু, দমশোষ আততায়ী, পরে পরে, আমি

থাকি তোফা, হেসে-খেলে, দিব্য জেগে-বেঁচে কল্পে-কল্পে

কালান্তরে’। করুণ ও ফাঁকিজুকি, আত্মতঞ্চকতা

মেশায় আরক লাল, ঝাঁঝালো গরল, আমাদের

রতিস্বাদে। আর তাই, রক্তঘেমো নাটমঞ্চ হতে 

যুধিষ্ঠির, হ্যামলেট, মাল্যবান কিংবা প্রুফ্রকের  

নিরাপদ বিদায়েও স্বস্তি নেই। গেছে বয়ে মহাভারতের কাল,

নাড়ীর গভীরে বুঝি, শিরায়-শিয়ায় হাওয়া এতোলবেতোল,

মাথার কন্দরে ঝরে টিপ্ টাপ্, এল-ব’লে মহাবরষার 

রাঙা জল। কাঁপি ভোরে, রাতজাগা স্বপ্ন শেষ হলে,

আতঙ্কের নাটকের অন্তঅঙ্ক পেরিয়ে গেলে কি, কৃষ্ণ পর্দা   

নেমে এলে, দর্শক-আসন জুড়ে শুঁড়ে-শুঁড়ে করতালি দেবে

শুধু, পারমাণবিক রশ্মিরোধী-খোলে খুশ্, উড়ুক্কু আর্‌শোলা?

No comments:

Post a Comment