Sunday, August 9, 2020

চার্লস সিমিক-এর কবিতা

অনুবাদ: শৌভিক দে সরকার

যুদ্ধ


মহিলাটির কাঁপতে থাকা আঙুলগুলো

আহতদের লিস্ট বেয়ে নামছিল

বরফ পড়ার প্রথম সন্ধ্যাবেলা


হিম হয়ে যাওয়া একটা বাড়ি, খুব লম্বা একটা লিস্ট


আমাদের সবার নাম ওই লিস্টটাতে ছিল। 


পিকনিক 


প্লেগের সময় পিকনিক যে রকম হয় 

সে রকমই একটা দিন আজ

মুরগির মাংস, ভাত

টেবিলের ওপর সসেজ, চিংড়ি


আনন্দে লাল হয়ে যাওয়া লাল, ডুমো ডুমো মুখ

পুরনো একটা বুড়ো গাছের ছায়া,

তেতে ওঠা দুপুরের আঁচ

মাছিরাও ঝিমিয়ে পড়ছে বারবার

মদে টলে যাচ্ছে মাথা

মেয়েরা বুক খুলে দিচ্ছে

ছেলেরা জামা খুলে খালি গায়ে বসে আছে


সবাইকে হঠাৎ খুব সুন্দর লাগছে

এমনকি ঘাসের ওপর কুকুরদের সঙ্গে

শুয়ে থাকা মেয়েটাকেও,   

হাসিতে ফেটে পড়ছে মেয়েটা

নাক থেকে রক্ত বের হওয়া শুরু হয়েছে সবে।


অনেকগুলো শূন্য


গোটা ক্লাসের সামনে চুপ করে দাঁড়ালেন মাস্টারমশাই

ফ্যাকাসে, ঠোঁট বন্ধ করে থাকা বাচ্চারা

ওনার পেছনের ব্ল্যাকবোর্ডটা পৃথিবী থেকে 

অনেক আলোকবর্ষ দূরের আকাশের মতো কালো


মাস্টারমশাই স্তব্ধতাই ভালবাসেন

অনন্তের স্বাদ লেগে থাকে এর ভেতরে 

তারারাও বাচ্চাদের পেন্সিলের গায়ের দাঁতের দাগগুলো ভালবাসে  

একবার শোনো ওদের, হাসতে হাসতে বললেন মাস্টারমশাই


কাকতাড়ুয়া


ভগবানকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কিন্তু শয়তান থেকেই গেছে 


এবছর টম্যাটোগুলো দেখার মতো হয়েছে

ওদের একবার কামড়ে দ্যাখো, মার্থা

ঠিক যেভাবে পাকা আপেলে কামড় দাও

প্রত্যেকটা কামড়ের পর একটু নুন


যদি টম্যাটোর রস তোমার গাল বেয়ে

খোলা বুকের ওপর এসে পড়ে

রান্নাঘরের সিঙ্কে ওপর ঝুঁকে দাঁড়াও


ওখান থেকে তুমি তোমার স্বামীকে দেখতে পাবে

ফাঁকা মাঠের মধ্যে থমকে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা

ফুরিয়ে যাওয়া একটা চিন্তার সামনে 

কাকতাড়ুয়ার মতো মেলে দিচ্ছে দুটো হাত।  

-------------------------------------------------------------------------

কবি পরিচিতি: সমকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কবি চার্লস সিমিকের জন্ম ১৯৩৮ সালে যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেড শহরে। ১৬ বছর বয়সে তিনি তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমেরিকায় চলে এসেছিলেন। ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ, ‘হোয়াট দা গ্রাস সেইস’। ‘নাইট পিকনিক’, ‘হোটেল ইনসোম্যানিয়া’, ‘আনএন্ডিং ব্লুজ’ তাঁর বিখ্যত কাব্যগ্রন্থ। ১৯৯০ সালে ‘দা ওয়ার্ল্ড ডাজ নট এন্ড’-এর জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন সিমিক। এছাড়া গ্রিফিন ইন্টারন্যাশনাল পোয়েট্রি প্রাইজ, ওয়ালস স্টিভেনস অ্যাওয়ার্ড- এর মতো পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাম্পশায়ারে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পাশাপাশি ‘প্যারিস রিভিউ’ পত্রিকার কবিতা বিভাগ সম্পাদনা করেছেন তিনি।

-------------------------------------------------------------------------

অনুবাদকের পরিচয়: নব্বইয়ের দশকের কবি ও অনুবাদক শৌভিক দে সরকার। জন্ম ১৯৭৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে। ‘একটি মৃদু লাল রেখা’, ‘যাত্রাবাড়ি’, ‘দখলসূত্র’, ‘অনুগত বাফার’ উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ। অনুবাদ করেছেন রবের্তো বোলানিওর কবিতা, খুলিও কোর্তাসারের কবিতা,  রুদ্রমূর্তি চেরানের কবিতা, মার্টিন এস্পাদার কবিতা, নামদেও ধাসালের কবিতা, সদত হসন মণ্টোর ‘স্যাম চাচাকে লেখা চিঠি’, ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকার নাটক ‘বেরনার্দা আলবার বাড়ি’ ইত্যাদি।

4 comments: