Showing posts with label কবিতা. Show all posts
Showing posts with label কবিতা. Show all posts

Thursday, November 21, 2024

৩টি কবিতা | শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় | উত্তর শিলালিপি


শেষের উপদেশ


ভগ্নকায়, উপহাসে উপদেশ দেন বুদ্ধ তথাগত: দিয়া 

জ্বালাও নিজের বুকে; পাঁজরে দীপক রাগ, জ্বলেপুড়ে হও

সতত আনন্দময়—থাক না স্বসই নথি, স্বদাখিলা; কাগজ-কালির 

দাস কেন হবে? তারচেয়ে, বল্গা খোলো বল্কলের—

        আত্মদীপে মল্লিনাথ            স্বটীকে স্বনাথ হও,

               বাও ডিঙা মুক্তছন্দে অনন্ত তিমিরে।


প্রশ্নে-প্রশ্নে


অনেক খেলেছি আমি গড়াপেটা খেলা—

থলি-হাতে লোকেদের দেখে, ডেকে-ডেকে,

আলাপে খেজুরে প্রীতি, বলিনি গড়িয়াহাটে, ভোরকার ঝোঁকে

কিংবা সাঁঝে, ‘বাজারে যাচ্ছেন বুঝি?’ মেছুনির ঝুলি

ছিল খালি, তাও কি করিনি আমি বরফ-কবর বেলে, ফলুই, ট্যাংরার

দরদাম, বাজারে বিশ্বাসে? 

টেবিলে বার্নিশ ছিল, হাঁকিনি কি তা-ও,

‘দর্পণ কোথায় ঘরে? কোন্ দেশে আরশিনগর?’ 

খেললাম গড়াপেটা ঢের; চেলে যাব আরও কত।


আরশোলা


অল্পে অল্পে দিবাযাম মরি রোজ, সকলেই তাই। 

মরণের বাড়া সাধু, সহজে সৎ আর কী সংসারে। 

তাও কী আশ্চর্য, খোদ সত্যবদ্ধ দ্বিতীয় কৌন্তেয়,

বলেননি, সেই কবে দ্বাপরের পর্বে:

‘অহরহ যায় জীব, জন্তু-পশু, শমনসদনে,

লাসের উৎকট বাসে কেবলই ঘোলায় সুবাতাস,

তবু হেরো মানুষের কাণ্ডজ্ঞান—গর্দভ বিরাট,

ভাবে কিনা, যাক শত্রু, দমশোষ আততায়ী, পরে পরে, আমি

থাকি তোফা, হেসে-খেলে, দিব্য জেগে-বেঁচে কল্পে-কল্পে

কালান্তরে’। করুণ ও ফাঁকিজুকি, আত্মতঞ্চকতা

মেশায় আরক লাল, ঝাঁঝালো গরল, আমাদের

রতিস্বাদে। আর তাই, রক্তঘেমো নাটমঞ্চ হতে 

যুধিষ্ঠির, হ্যামলেট, মাল্যবান কিংবা প্রুফ্রকের  

নিরাপদ বিদায়েও স্বস্তি নেই। গেছে বয়ে মহাভারতের কাল,

নাড়ীর গভীরে বুঝি, শিরায়-শিয়ায় হাওয়া এতোলবেতোল,

মাথার কন্দরে ঝরে টিপ্ টাপ্, এল-ব’লে মহাবরষার 

রাঙা জল। কাঁপি ভোরে, রাতজাগা স্বপ্ন শেষ হলে,

আতঙ্কের নাটকের অন্তঅঙ্ক পেরিয়ে গেলে কি, কৃষ্ণ পর্দা   

নেমে এলে, দর্শক-আসন জুড়ে শুঁড়ে-শুঁড়ে করতালি দেবে

শুধু, পারমাণবিক রশ্মিরোধী-খোলে খুশ্, উড়ুক্কু আর্‌শোলা?

Sunday, January 28, 2024

কৃষ্ণমোহন ঝা-র কবিতা | অনুবাদ: দেবলীনা চক্রবর্তী

কৃষ্ণমোহন ঝা-র জন্ম ১৯৬৮ সালে বিহারের মধুপুরায়। হিন্দি এবং মৈথিলী ভাষায় কবিতা লেখেন। তাঁর হিন্দি কবিতা সংগ্রহ 'সময় কো চিরকর' ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এবং মৈথিলী ভাষায় 'একটা হেরায়েল দুনিয়া' ২০০৮ প্রকাশিত হয়। বিদ্যাপতির পদের একটি সংকলন 'ভনই বিদ্যাপতি'র সম্পাদনা করেন তিনি এবং হিন্দি কবিতার ইংরেজি সংকলন 'হোম ফ্রম এ ডিসটেন্স'-এর একজন সহযোগী সম্পাদক কৃষ্ণমোহন ঝা। এছাড়া বহু পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কবিতা ইংরেজি, অসমিয়া, বাংলা, মারাঠি, তেলেগু, উর্দু এবং নেপালি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে তিনি 'কানাইহা স্মৃতি সম্মান' এবং 'হেমন্ত স্মৃতি কবিতা পুরস্কার' পান। ২০০৩ সালে এবং ২০১৩ সালে 'কীর্তি নারায়ণ মিশ্র সাহিত্য' পুরস্কার পান। বর্তমানে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান। 

মূল হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ দেবলীনা চক্রবর্তী


মৃৎ পাত্র

(শক্তি চট্টোপাধ্যায় স্মরণে)


আবার আসবো ফিরে এমন কথা বলব না

কারণ আমি যে কোথাও যাব না


কুয়াশার ওই পারে

হয়ত ভাষার কোনও জীবন হতেও পারে 

তবু আমার উচ্চারিত শব্দ

এইখানেই 

কার্তিকের ভোরে

ধানের শীষ থেকে ঝরে পড়বে

টুপটাপ 


আমার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা

আমার ঝরে যাওয়া অশ্রু ও স্বেদজলের সঙ্গে 

এই বেদনা তটের উপরে ভাপ হয়ে উঠবে

আর যেখানে আমার জন্ম 

সেই বিদগ্ধ আকাশে মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াবে


আমার আত্মা ও মজ্জাস্থিত সমস্ত দৃশ্যপট

এই ধুলোমাটি, এই ক্ষেতখামার 

এই ঘরদুয়ারে আপন সত্তা খুঁজতে 

বারবার আসবে 

এখানে ছাড়া আমার আমিকে

আর কোথায় পাবে খুঁজে 

আদৌ কোথায় যাবে!


আর যদি একান্তই যেতে হয়

স্বপ্ন-দৃষ্টি ও বাসনা ছাড়া 

কী করে আর কতটুকু বাঁচা সম্ভব 

তাহলে তাকে কি বলা যায় 'চলে যাওয়া'?


এসেছি যখন থাকব এখানেই....


আষাঢ়ের ঘনঘোর বৃষ্টিতে

ধরণীর উচ্ছ্বসিত অবিরাম গন্ধ বিধুরতায়


সোঁদা মাটির অন্ধকার ঘরে

প্রতিদিন দুপুর ছেয়ে থাকা

সূর্য কিরণে


চিড় ধরা আয়নার গায়ে 

বারেবারে নিশ্চুপে ছুঁয়ে যাওয়া

ধুলোর এক একটি কণা'তে 


এসেছি যখন, এখানেই রয়ে যাব 

আমি যাব না কোথাও


---------------------------------------------------------


জীবনানন্দ দ্বিতীয়


আমি ছাড়া আর কেই বা জানে

যে তোমার ভাগ্যে 

না তো কার্তিকের ভোরে শিশির নিমজ্জিত 

বৈজয়ন্তী ফুলের মতো দুর্লভ প্রেমী এসেছে

না অখণ্ড লালিমায় গড়া কাব্য সৌন্দর্য্য নিয়ে প্রেম এসেছে 


আর তুমি ছাড়া আর কে বা জানে

যে আমার ভাগ্যে 

না তো বিদ্যুৎ লতার মতো ঝলমলে রাত এসেছে

না তো এই মৃৎ পাত্র পেয়েছে 

গাঢ় অমৃতের ও শিউলি ফুলের মতো আশ্রয়


আমি জানি যে

তুমি নাটরের বাসিন্দা নও

না আমার জন্ম বরিশালে


মাঝরাস্তায় 

ট্রামের ঘড়ঘড় শব্দ দেখে শুনে 

কাছে যাওয়া তো দূরের কথা

রূপসী বাংলার সজল ভূমি স্পর্শ করার সুযোগ হয়নি এখনও 


কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায়

আমার বুকের ওপর ভয়ঙ্করভাবে 

পিষে দিয়ে যায় কিছু 

সে ট্রাম নয় তো আর কি!

Saturday, June 17, 2023

কবীর চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

প্রশ্ন


হাতের উপর হাত রেখেছি, ঠোঁটের ফাঁকে বিষ, 

এইটুকুতেই প্রেমের কথা শেষ হলে কি চলে?

মন মেজাজের আবেশটুকু

তৃষ্ণা হয়ে ভিজতে ভিজতে 

শরীরজুড়ে নামলো এসে এক আষাঢ়ের জলে।

হাতের উপর হাতটি রাখা, আঙুলরা একজোট, 

এমন সময়ে শরীর কি তোর ছুটির কথা বলে?


ভাবিস না আর তার কথাটি, দেখবি ও সব খালি

মন-ভুলোনো ঘর-ফুরোনো প্রেম পিরিতির ধুলো, 

প্রতীক্ষাতেই থাকবি যদি

একলা বসে নিরবধি, 

কার দুয়ারে আস্তে আস্তে জমবে স্মৃতিগুলো?

হাতের উপর হাত রেখে দেখ, চোখের নীচে কালি, 

এই আকালে ঠোঁটদুটি তোর কার অন্ধকার ছুঁলো?


হাতের উপর হাত রেখেছি, ঠোঁটের ফাঁকে ঝড়,

দুটি জিভের এক সহবাস, স্বাদ কি পড়ে মনে?

আষাঢ় গেছে, শ্রাবণ গেছে

নিরুদ্দেশের অন্বেষণে,

এক ফালি মেঘ একরোখা তাও ফুঁসছে ঈশান কোণে।

হাতের উপর হাতের বসত, অনির্বাণ অধর, 

এমন সময়ে অপেক্ষাতে শরীর কি দিন গোনে?


নেটিভিটি


আজ ভোরের ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারেরা

আর পাশের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ কিশোরবাবু

এসেছেন

নবজাতক শিশুটিকে দেখতে। 


এখনও কথা ফোটেনি আধো-আধো বুলিতে, 

দীঘির মত স্বচ্ছ চোখে সে অবাক হয়ে দেখছে দুনিয়াটা।

ভাষা নেই, স্মৃতি নেই, শ্লেষ নেই, 

তবু তাকে দেখবে বলেই এসেছে 

ফড়িং আর মৌমাছি,

রুই কাতলা তেলাপিয়া আর

পাড়ার সবচেয়ে ডাকসাইটে হুলো বেড়ালটা। 


রাষ্ট্রপতি কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন,

তাঁর হেলিকপ্টার নামবে সামনের মাঠে

তাড়াহুড়ো করে বানানো জোড়াতালি হেলিপ্যাডে।

শতদল ক্লাবের চেয়ারম্যান দেবাশিসবাবু

আর বাবাই বলে যে ছেলেটা 

পাড়ায় সব্বার টিভি সারায়,

সবাই এসেছে নবজাতককে দেখতে। 


রিকশা থেকে হন্তদন্ত হয়ে নেমেছেন জ্যোতিষার্ণব, 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সাহেব অবশ্য

ট্রামেই এসেছেন, 

বেসামাল ধুলোবালি উড়িয়ে এসেছে হেমন্তের হাওয়া,

আর আকাশে টিকিট না কেটেই ঢুকে পড়েছে

অকালের মেঘ।


হালকা বৃষ্টি এসেছে সকাল থেকেই, 

তার সঙ্গে মিষ্টির দোকানের মালিক অমিতদাও 

দুই মেয়ে আর স্কুলের বন্ধু রনিকে নিয়ে এসেছেন

নবজাতককে দেখবেন বলে।


এ নবজাতকের কথা লেখা আছে 

আদিম কবিতার খাতায়। 

পৃথিবীর কোনো এক অনির্দিষ্ট যুগে

সমুদ্রের গর্ভ থেকে উঠে আসবে এই শিশু, 

আকাশের বুক চিরে ছুটে যাবে আশ্চর্য উল্কা, 

আর পূবের দিগন্ত থেকে উপহার নিয়ে আসবে

তিনজন বেরসিক বুড়ো। 


আর ঠিক তখনই এই নবজাতক

দেয়ালা করতে করতে

রচনা করবে এক নতুন পৃথিবী।

তার এক পা থাকবে মহাকাশে, 

অন্য পা থাকবে আগ্নেয়গিরির অতলে,

আর সে দু’ হাত বাড়িয়ে খেলতে খেলতে

হয় পৃথিবীতে গড়ে তুলবে অতুলনীয় এক স্বর্গরাজ্য, 

নয় সবকিছু ধ্বংস করে

আবার নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে বসবে। 


দাড়ির গল্প


পঞ্জিকাতে লগ্ন দেখে সেলুন দিলাম পাড়ি, 

বাড়ি এবং হাঁড়ির পরেই সবসে প্যায়ারা দাড়ি!

দাড়ি ব্রহ্মা, দাড়ি বিষ্ণু, দাড়ি মহেশ্বর, 

আল্লাতালা, গড, যীশু সব দাড়ির মাতব্বর। 


সেই দাড়িটিই কাটতে হবে, পাষাণ সমাজ বলে;

আধকামানো গাল নিয়ে কি আপিস যাওয়া চলে?

ক্ষুরটি হাতে যতই কাছে আসেন পরামানিক, 

বিষণ্ণতায় দাড়ির কথাই ভাবছি বসে খানিক। 


কারোর দাড়ি লম্বামাফিক, কারোর দাড়ি খাটো, 

কারোর দাড়ি ছাগল-সমান, থুতনি আঁটোসাঁটো।

এক একজনের দাড়ির ডগা পিছনপানে মোড়া, 

কারোর দাড়ি গোঁফের সঙ্গে এক্কেবারে জোড়া। 


হরেক রকম দাড়ির বাহার দেখতে যাবো কোথা? 

এই জগতের যতেক মহান মানুষ দাড়ির হোতা। 

মার্ক্স, ফ্রয়েড, শোপেনহাউয়ার, লেনিন এবং র্যালে, 

মাথায় যাঁদের বুদ্ধি, তাঁদের দাড়িও থাকে গালে।


আমার দাড়ি কামায় যে’জন, সে’জন সুজন বটে, 

থুতনি জুড়ে রাখছি দাড়ি, মগজ থাকুক ঘটে। 

টাকা কামাই সাধ্য কোথায়? দাড়িই কামাই ব্লেডে।

কমুক টাকা, বাড়ুক দাড়ি, দাড়িরই পে-গ্রেডে। 


ঢিল মারো


মৌমাছির চাকে ঢিল মারো,

ইচ্ছে করেই। 


বহু দিন, বহু যুগ, বহু মুহূর্ত ধরে

ভন ভন ভন ভন শব্দে 

বড় ব্যস্ত হয়ে পড়েছো ভায়া।

দিনের বেলা সমস্যা না হলে'ও,

রাত বিরেতে খাওয়ার পালা শেষ করে

শুতে গেলে

অন্ধকার নিঝুম নিস্তব্ধ রাত্তিরে

ঐ একটানা একঘেয়ে ভন ভন শব্দটা

তোমার বিরক্তিকর লাগে না?


হাতের কাছেই পাটকেল আছে, 

পাঁচটি মধ্যবিত্ত কলমপেষা আঙ্গুলে 

জীবনে প্রথমবার

কোনো কিছুকে শক্ত করে চেপে ধরো,

এক চোখ বন্ধ করে নিশানায় টিপ করে নাও, 

অর্জুনের সেই পাখির চোখের মত।

তারপর বেশী না ভেবে, 

ইচ্ছেটা কেটে পড়বার আগেই

ধাঁই করে ঢিলখানা ছুঁড়ে মারো 

চাকের গায়ে, 

যেখানে হাজার হাজার মৌমাছি, 

না কি ভীমরুল, না কি বোলতা, 

ভন ভন শব্দে যে যার নিজের বাচালতাটুকু, 

নিজের অন্ধ বিশ্বাসটুকু ক্রমাগত জাহির করে চলেছে, 

বিবাদ বিতর্কের তোয়াক্কা না করে। 


মতামতের চাকে ঢিল মারো, 

ইচ্ছে করেই। 

শত সহস্র হুলের খোঁচা সহ্য করো, 

সহ্য করো নির্বোধ গালিগালাজের বিষের জ্বালা,

সহ্য করো ধর্মের দংশন, 

সহ্য করো ভদ্রলোকের ক্লীব তিরষ্কার,

সহ্য করো শ্রেণীহিংসার যাতনা, 

সহ্য করো, সহ্য করো ভাই,

দাঁতে দাঁত চিপে, জিভ কামড়ে 

সব সহ্য করেই

মতামতের চাকে ঢিল মারো, 

দেখোই না,

মধু মেলে কি না মেলে।

Saturday, March 4, 2023

দীপ্তি নাভালের কবিতা | অনুবাদ: দেবলীনা চক্রবর্তী

১৯৫৭ সালে পঞ্জাবের অমৃতসরে জন্মেছেন দীপ্তি নাভাল। পালামপুরে (হিমাচল) পড়াশোনা। পরে নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি এবং ম্যানহাটনের কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন। হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী। বড়পর্দায় অনেক সফল চরিত্র উপহার দিয়েছেন। শ্যাম বেনেগালের ছবি 'জুনুন' দিয়ে বলিউডে পা রেখেছিলেন। এই যাত্রার আসল সূচনা হয়েছিল ১৯৭৯ সালে 'এক বার ফির' ছবির মাধ্যমে। এই ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পান। তিনি একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। সংবেদনশীল কবি। তাঁর কবিতার বই 'লামহা-লামহা' খুবই জনপ্রিয়।

তিনি একজন প্রশংসনীয় অভিনেত্রীর পাশাপাশি একজন চিত্রকর এবং ফটোগ্রাফার। দীপ্তি নাভালের বাবা তাঁকে চিত্রশিল্পী বানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার মন চলে গিয়েছিল অভিনয় ও কবিতায়। যদিও, তিনি ছবি আঁকতেন এবং তাঁর শিল্পকলা প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি মাঝে মধ্যেই হিমাচল থেকে লাদাখের বিভিন্ন পাহাড় পর্বতে ট্রেকিং করতে ভালবাসেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজান। গানের প্রতিও রয়েছে তার গভীর অনুরাগ। মহিলা ও শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়ানোর উদ্দেশ্যে একটি চ্যারিটেবিল ট্রাস্ট গঠন করেছেন। 

গুলজার সাহেব দীপ্তি সম্বন্ধে বলেছেন 'দীপ্তি সেই পথ অনুসরণ করে যেখানে তাঁর সৌন্দর্য চেতনা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং সে বাঁচে তাঁর আপন শর্তে। তাঁকে দেখে মনে হয় ভীষণ বাস্তবধর্মী, ভীষণ ব্যবহারিক কিন্তু সে একদমই তাঁর বিপরীত। তাঁর স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার লক্ষ্যে দৌড়চ্ছে আর তাঁর বাস্তব সেই স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করে চলেছে।'  

 

অজানা পথ 


অজানা পথে 

চলো আরও কিছুদূর হেঁটে যাই

কোন কথা না বলে 


নিজের নিজের নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গে নিয়ে

প্রশ্ন উত্তরের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে

রীতিনীতির কাঁটাতার পেরিয়ে

এসো আমরা পাশাপাশি চলি

কিছুই না বলে

হেঁটে যাই অনেকটা দূর


তুমি বিগত দিনের 

কোনও প্রসঙ্গ উত্থাপন করো না 

আমিও ভুলে যাওয়া 

কবিতার ছত্র না উচ্চারণ করে

কে তুমি

কে বা আমি 

এই সমস্ত কথা 

আর কিছুই না বলে ...


চলো আরও অনেকটা দূর 

অজানা পথে আমরা হেঁটে যাই 


একাকী রাত 


ঠান্ডা! একাকী রাত 

আর সে

হেঁটে যাচ্ছিল অনেকক্ষণ 

স্মৃতির চাদর গায়ে জড়িয়ে!


মিটি মিটি আলো 


কিছু মিটি মিটি আলো 

আর তুষার শৃঙ্গ থেকে গড়িয়ে আসা জোৎস্না 

সমস্ত চরাচরে যেন একটিই সুর প্রতিধ্বনিত


নীরবতার তো এমনি শব্দ 

হয় তাই না...

তুমিই তো বলেছিলে! 


এমনই প্রশান্তি যেন বাকি কোন কিছুই সত্যি নয়


এই রাত চুরি করেছি আমি 

আমার জীবন থেকে আমারই জন্য 


মসৃণ ঢালের ওপর  


মসৃণ ঢালে মেষপালকদের প্রাত্যহিক শোরগোল শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে 

দিন যেন নিশ্চুপে পার হয়ে যাচ্ছে খুব পাশ ঘেঁষে

সাদা শিখরে দিগন্ত তার গোধূলি রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে

কোমল হাওয়ার গুনগুনানি ভেসে যাচ্ছে 

সমতলের মেঠো পথে আবার জলের ধারার মতো

সরু পথের আঁকা বাঁকা চলনে

খেলে বেড়ায় পড়ন্ত সূর্যের শেষ কিরণ এখনও পর্যন্ত

দেখে মনে হয় যেন গলানো কাঁচের চাদর বিছানো 


অনুরণিত হচ্ছে শোনো কোনও এক মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি 

আর সামনের ওই টিলা থেকে ভেসে আসছে গির্জার প্রার্থনা স্তব

আরো দূর থেকে কোন এক মসজিদের আজানের স্বর আন্দোলিত হচ্ছে 


এ এক সংযোগের সন্ধ্যা, আগে তো কখনও দেখিনি

হয়ত এমন এক সন্ধ্যার প্রতীক্ষাতেই ছিলাম 

স্থির হয়ে আছি চলতে চলতে 

প্রকৃতি ও ঈশ্বরের ঔদার্য এর আগে 

অবনত হই এই সান্ধ্যকালীন উপাসনার কাছে



আমি দেখেছি দিনকে রাত্রিতে বদলে যেতে  


আমি দেখেছি দূরে কোনও পর্বতের পায়ের কাছে

যখন সাঁঝ চুপিচুপি তার আস্তানা বানিয়ে নেয়

আর ভেড়ার দল তাড়িয়ে নিয়ে 

মেষপালকেরা সুরু কাঁচা পাকদন্ডি বেয়ে পাহাড়

থেকে নিচে নেমে যায়


আমি দেখেছি পাহাড়ের ঢালের ছায়া বাড়তে থাকে

তখন আরও নীচের ঘাঁটিতে 

সে এক একলা ছাতা ও চশমা

ছুঁয়ে নিতে চায় শেষবেলার সূর্যকে


হুঁ, দেখেছি এবং শুনেওছি

এই ঠান্ডা উপত্যকায় কখনও কোথাও 

প্রতিধ্বনিত হয় 

মোহন বাঁশির সুর ....


তখন 

এখানেই কোথাও কোনও না কোনও পাহাড়ের 

গায়ে হেলান দিয়ে থাকা দেবদারু গাছের নীচে

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি 

একটা আস্ত দিনকে দেখেছি রাত্রিতে বদলে যেতে। 


বেচারা মানুষগুলি 

 

সব মানুষ মাত্রই একই নজরে দেখে

নারী আর পুরুষের

সম্পর্ককে

কেননা তাদের যেন কোনও নাম দিতে পারে! 

ওই নামের ঘেরাটোপে আটকে থাকে

বেচারা মানুষগুলি! 


একটি কবিতা 


'এত গুমরে গুমরে থাকো..

সহজ কেন হও না তুমি!'

সহজ হতে গেলে কি জানো 

অনেকগুলি বছর পিছনে যেতে হবে

আর সেখান থেকেই শুরু করতে হবে

যেখানে কাঁধে ঝুলি নিয়ে

স্কুল যেতে শুরু করেছিলাম

এই মুহূর্ত মন বদল করে

যখন নতুন মন মেজাজ তৈরি করব 

আর তারপর যেদিন 

সহজ সরল হয়ে 

খিলখিলিয়ে

দমকে দমকে 

কোনো কথায় হেসে উঠব

তখন আমায় চিনতে পারবে তো?


আমার স্নায়ুর ভিতরে এক সুর আছে


আমার স্নায়ুর ভিতরে এক সুর আছে

এক মহাজাগতিক ছন্দ এখানে প্রবাহিত হচ্ছে


তুমিও শুনতে পাবে, যদি তুমি 

তোমার আঙুলের সুচাগ্র দিয়ে স্পর্শ করো 


তুমি কি তাকিয়েছ ওই তারাদের দিকে 

আর দেখেছো তাদের? দৃষ্টির বাহির হয়ে? 


এখানে যে শব্দ আছে, শুনতে পাও?

যখন স্পর্শ করো নুড়ি-- পাথর,

শুকনো পাতা বা বাতাস!


তুমি কি অনুভব করো এভাবেই

তোমার আত্মার আংশিক স্বচ্ছতাকে?


যখন তুমি হেঁটে যাও 

তখন ছুঁয়ে দেখো পৃথিবীকে?


সেভাবে জীবনকে ছুঁয়ে দেখো, যেভাবে বেচেঁ আছো


ছুঁয়েছ কি?

কখনও তুমি....

Tuesday, August 9, 2022

পাঁচটি কবিতা | ইকারো ভালদেররামা | স্প্যানিশ থেকে বাংলা অনুবাদ: জয়া চৌধুরী

মূলের যত কাঁপন (Tremores del origen)


অব্যর্থ সত্য।

অব্যর্থ সত্যি কি?

            (কোরান ৬৯, ১) 


একটি অস্তিত্বহীন বইও দৃঢ়ভাবে বলে থাকে

যিনি বুদ্ধের পথে হাঁটেন

তাঁকে শান্ত হতে শিখতে হয়।

“আলোকিত কন্ঠ-- অস্তিত্বহীন বইটি বলে থাকে--

হল জলের নীচে থাকা পদ্ম যেন”।

এই ভাবনা (নিগূঢ় মৃগ যেন)

সেই মহান অতীন্দ্রিয় কবি আল তুরাইয়েকের 

সাঙ্গীতিক বুনন-– যিনি রাঙিয়ে 

তোলেন, আরবী জীবনীকারদের মতে

তিনি কখনও অস্তিত্ববান ছিলেন না--

“শব্দের খোলবিশেষ

                আকাশের নিচে থাকা প্রাণীরা

ওদের আগলে রাখি মূলের যত কাঁপন থেকে।


এখানে-- আমার গভীরতম জলে--

কবিতারা পুষ্পিত হয়”।



শব্দের বিশুদ্ধ দুধ (Leche pura del sonido)


তিনি চলমান এবং একই সঙ্গে অচল

                  (শ্রীভগবদ্গীতা ত্রয়োদশ অধ্যায়, ১৫)


শব্দের বিশুদ্ধ দুধ

তোমার পায়ের মাঝে খোলা আকাশ,

নরকের ওইপারে

যেখানে সব কিছুর জন্ম। 


শীর্ষসুখ, আলোর তীর ঘেঁষে

মহাজাগতিক পশু 

এসো প্রার্থনা করি--


যিশুখ্রিস্টের নাভিকুণ্ডলী, 

স্বর্গীয় কোষের খাদ্য,

নারীর গর্ভপুষ্পে স্বর্গের মূল।

স্তন্যপায়ী কুমারী, স্তন্যপায়ী ঈশ্বর,

স্তন্যপায়ী রহস্য--

এসো নগ্ন হই।


স্তন্যপায়ী কুমারী, স্তন্যপায়ী ঈশ্বর,

স্তন্যপায়ী রহস্য--

এসো স্তন্যপান করি। 


তোমার ক্রিয়ায় যদি সারস গর্ভবতী হয় 

যার উষ্ণতা নেমে আসে আমাদের উপর--

শতাব্দী জুড়ে শতাব্দী থেকে আসা কলম ও সঙ্গীত, 

বাগানের বিষাক্ত দাতুরা গাছে থাকা কলম ও সঙ্গীত।



অন্য পাখিটি (Otro pájaro)


যে স্বপ্ন আমি দেখেছি আপনারা তা শুনুন

                (জেনেসিস ৩৫, ৬)


পাখিটির গভীর অন্দরে

গায় গান

যে ঘুমায় অন্য পাখিতে,


আমার স্বপ্নের কম্পনশীল 

রামধনু জঙ্গলে। 



কেরুবিন, ঈশ্বরে মহিমা রক্ষক দেবদূত (Querubín)


দেবদূতেদের দেখবে তুমি

          (কোরান ৩৯, ৭২)


জাগুয়ারের বেদীর উপর

একজন দেবদূত আমাকে তাঁর দেহ নিবেদন করেছিলেন,

তাঁর ছায়াহীন পশুমাংস।

তাঁকে বলেছি-- “তুমি ধূলিকণা, হবে সূর্য

এবং নাড়িভুঁড়ি, যারা আমার উপর রাজত্ব করে 

তারা তোমায় গ্রহণ করে। তুমি প্রবেশ করো, আমার অন্দরে,

                                      প্রগাঢ় অদ্ভূত জীব, আনন্দ কর”!


সেসময়, এমনই ছিল-

রাত্রি উন্মোচিত হয়েছিল তার হলুদ চোয়ালে,

এবং একটি পাখি ঘোষণা করেছিল তার অনুষ্ঠান-- 

কাইউহ, কাইউহ,

কাইউহ, কাইউহ।


(আকাশ-নীল অণু চর্বণ করতে করতে)

তখনই আমার দাঁতেরা জয় করেছিল,

অ্যানাকোন্ডার, চামান পশুর, ভেড়ার, তেলাপোকার, অশ্বের,

হাতি, সীগাল, গ্রহদের,

জাগুয়ারের বেদীর উপরে থাকা এক রহস্য,

স্বর্গের দেবদূতেরা পুষ্টি গ্রহণ করেন,

জঙ্গলে জন্মেছিল যে সব জীবন্ত প্রাণ 

আলোর সর্বভুক বিচ্ছুরণ থেকে।


চলো প্রার্থনা করি--

পুতুমাইয়ো নদীতীরের ইন্ডিয়ান দেবদূত,

ব্যাঘ্রদেবতা যিনি গ্রাস করেন মহাবিশ্ব,


প্রবেশ করো আমার ভেতরে,

                  আনন্দ কর! 



ছাগনন্দিনী (Niña cabra)


সকলেই আমার ভিতর

          (শ্রীভগবদ্গীতা নবম অধ্যায়, ৪)


তুমি, ছাগ নন্দিনী,

নামহীন, রাজনন্দিনী, 

বিচরণরত, 

সাদা পশম, অরণ্যের নিস্তব্ধতা,

আলোর ধ্বংসাবশেষ,

এসো              আমার দৃষ্টির ভিতর নিয়ে এসো--

নিদ্রামগ্ন বাদুড় ভরা বাগানে--

বিস্ময়কর শিং যত,

তীক্ষ্ণ হীরকেরা

যারা আহত করেছিল বন্য পশুদের

হলুদ ফুসফুস।


ছাগনন্দিনী,

আমার কুয়াশার কুয়াশা

নক্ষত্রমাতা এবং ইউনিকর্নের আতংক,

ফিরিয়ে দাও আমার শরীরে 

                       তার পাশব প্রশ্বাস।




-------------------------------------------------------------------------

কলম্বিয়ান কবি ইকারো ভালদেররামা। স্প্যানিশ ভাষায় লেখেন। একই সঙ্গে তিনি গায়ক ও প্রযোজক। সারা পৃথিবী ঘুরে বেরিয়েছেন। সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়ার সংস্কৃতি তাঁর বিশেষ ঝোঁক। কিছুদিন আগে কলকাতা পোয়েট্রি কনফ্লুয়েন্সে তিনি থ্রোট সিঙ্গিং পরিবেশন করেন।

Saturday, July 2, 2022

কবিতায় ভস্মীভূত এক কবি: কে সচ্চিদানন্দনের কবিতা | অনুবাদ: অরিত্র সান্যাল

[কবিকে তাঁর মূল ভাষায় পড়তে না পারার দুঃখ একটি পবিত্র অনুভূতি। এতে পাঠকের বিবেক অটুট থাকে। এই অশ্রু-ঝলোমলো বিশ্বাস নিয়েই কবি কোইয়ামপারাম্বাথ সচ্চিদানন্দনকে অনুবাদ করে ফেলা। কবি লেখেন মালায়লম ভাষায়, পরে অনুবাদ নিজেই করেন ইংরেজিতে। সেই ইংরেজি থেকে বাংলায়, খঞ্জপদক্ষেপে, কবিতাগুলিকে বয়ে আনবার কাজটি অপরাধের হল কি না – তা আর কবেই বা কে জানতে পেরেছেন!

জুন মাসের অগ্নিদাপট চলছে বাইরে। অ্যান্টনিম পত্রিকার উদ্যোগে শহরে কলকাতা পোয়েট্রি কনফ্লুয়েন্সে যোগ দিতে এসে কবি এসে উঠেছেন পূর্ব কলকাতার একটি পান্থনিবাসে। তারই একটা ঘরে বসে আছি, অর্থাৎ, একটি ঘরে বসে দুই ভারতীয় পরস্পরের সঙ্গে ইংরেজিতে আড্ডা মারছে। এর মাঝে চা এল। কবি ও পাঠকের মধ্যে ভাষার দূরত্ব নিয়ে গভীর কথা পাড়তে যাব কি এমন সময় কবি ফুড়ুত হেসে হঠাৎ বলে উঠলেন – যখনই কোলকাতা আসি, আমি হতবাক হয়ে যাই। সারা পৃথিবী জুড়ে মালায়লি মানুষ ছড়িয়ে আছেন, কিন্তু এত বাঙালি একসঙ্গে কেরালা ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না।

অতঃপর, আমি প্রশ্নটি গিলে নিই। নিশ্চিন্ত হই-– আমরা সর্বত্র আছি।]   


আঙুলের ছাপ


প্রাচীন কেল্লার ফটকে

এই আঙুলের ছাপগুলো দেখো:

কয়েকটি ঝুলেকালিতে ছাপা হয়ে আছে,

কয়েকটি অশ্রুতে,

তার মধ্যে কিছু, যারা উঁকি দিয়েছিল সেই শিশুদের,

কিছু, এখানে ঢুকতে পারার আগেই

খিদের চোটে ধ্বসে পড়া বুড়োদের,

আর কিছু, সেই জোয়ান ছোঁড়াদের যারা

জোর করে ঢুকতে গিয়ে, অশেষ রাত্রিতে

সটান থুবড়ে পড়েছিল।


আমিও এই সিংহদরজায়

রেখে যাচ্ছি নিজের আঙুলের ছাপ, রক্তে:

যারা অনাগত তাদের প্রতি

একটি স্মারক আর একটি হুঁশিয়ারি:

আমার কবিতা। 


রচনাকাল: ১৯৮৮


কবিতায়


নিজের কবিতায় আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাই,

ঠিক যেমন চিতায়।

কাঁচা কাঠের মতো শব্দের পর শব্দ

আমি লেখায় গুছিয়ে তুলেছি।


কলাপাতা থেকে যখন আমায় চড়ানো হল

চিতার ওপর, শব্দে দাউদাউ আগুন।

সেখান থেকে আমার হাড়ের ভেঙে ফাটার 

আওয়াজ পাবে তুমি, 

হৃৎপিণ্ড পুড়ে যাবার তেল ছ্যাঁকছ্যাঁক ধ্বনি,

গলা পুড়ে যাবার নিঃশব্দ গান।


আমার চারদিকে তুমি দাঁড়িয়ে থেকে দেখ

যে জীবন আমি নিজের চোখে দেখি

তাতে জ্বলন্ত কয়লা পড়তে থাকে,

আমার শিরা দিয়ে গলগল করে স্বপ্ন 

বেরিয়ে যায়, আমার হুহু বয়ে যাওয়া ঘিলু থেকে

স্মৃতি আলুথালু।


তুমি তেল ঢালছ, আর চাপাচ্ছ কাঠের ওপর কাঠ,

আমার অন্ত্রনাড়িভুঁড়িজাল নেড়ে দিচ্ছ কাঠি দিয়ে।

একটা ঘুমপাড়ানি গান আমার কানে পুড়ছে,

গিঁঠ থেকে গিঁঠ খুলে একে একে আমার আঙুলগুলো পড়ে যাচ্ছে,

যেটুকু দূরত্ব আমি হেঁটে এসেছি জ্বলে যাচ্ছে,

আমি ছাই হয়ে যাচ্ছি। 

সেই ছাইয়ে এক বেড়াল তার ছানাপোনা নিয়ে উষ্ণতার ওম খুঁজে নেয়,

সেই ছাইয়ে একটা বুনো দারুচিনি গাছ গজিয়ে ওঠে, ফুল ফোটায়। 

সেই ছাইয়ে কালো কালো বাচ্চারা লাফায় দাপায়, খেলা করে।

তুমি এ ছাই গঙ্গায় ঢেলো না, অনুরোধ করি।


[কেরালার আদি রীতি অনুসারে মৃতদেহকে প্রথমে কলাপাতায় শোওয়ানো হয়। তারপর চিতায়।] 

                       

রচনাকাল: ১৯৯২


যখন কবিতা পুড়ে যায়


যখন কবিতা পুড়ে যায়, তা থেকে

গ্যাস চেম্বারে দগ্ধ শিশুদের গন্ধ আসে।

এখানে মড়-মড় করে যে ভাঙার শব্দ 

তা যুদ্ধের ধোঁওয়ায় পুড়ে আংড়া হয়ে যাওয়া পাতার।

অনাথ, ল্যাংটা, সারা গায়ে পোড়া দাগ,

রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়ায় কবিতা।

যা-কিছু অতিক্রম করে সব ছাই:

স্টক এক্সচেঞ্জ, প্রমোদ-বিপণী,

অস্ত্রাগার, দেওয়াল, দেওয়াল।

কবিতার ছাই থেকে একটি তোতা উঠে আসে

তার খোঁড়া জিভের ওপর নির্বাসিতা সীতার

প্রতিশোধের গল্প নিয়ে। 


রচনাকাল: ১৯৯২


ঘর, একটি জন্তু


ঘর একটি জন্তু যার ফুসফুস থাকে শরীরের বাইরে। সে কারণে 

সামান্য রৌদ্র বা তুষার লাগলেই তার জ্বর হয়ে যায়। 

হাওয়া-বাতাস ঝড়-জল এমন চলতেই থাকলে ঘর একদিন মরে যাবে। 


রচনাকাল: ১৯৯৫


অমরত্ব


হাজার হাজার কবি লিখেও

আজ বিস্মৃত।

স্মরণে শুধু একজনই থেকে যান।

একা একা অমর হবার থেকে

আমি চাইব বরং বিস্মৃত হয়ে যেতে

হাজার হাজার কবির সঙ্গে


রচনাকাল: ১৯৯৬



ঢোল


কোথা থেকে শব্দ আসে – তা উৎসুক হয়ে

খুঁজতে গিয়ে আমি একবার

ঢোলের চামড়ায় ছ্যাঁদা করে ফেলি

তারপর ভিতরে উঁকি দিই


অরণ্য আছে ভিতরে,

ঝমঝম বৃষ্টিতে জন্তুজানোয়ার ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে,

বানে নদী ক্ষিপ্ত, বাতাস

ঘণীভূত আকাশের নিচে ক্ষেপে উঠেছে।

একটা জংলি দেবতা বাইসন চড়ে

শিঙায় ফুঁ মারছে।

আমি ভয়ে কেঁপে উঠি, পালিয়ে আসি।

তখন আমার বয়স চার বছর।


এখনও যখন ঢোলের আওয়াজ শুনি,

আমি অকাতরে বৃষ্টির মধ্যে একটা

অরণ্যে পৌঁছে যাই,

সমুদ্রের মাঝে একটা দ্বীপ,

আর আমি সেখানে অপেক্ষা করি, ঝড় থামবার,

রক পাখির চঞ্চু থেকে সূর্যের জ্যান্ত দেখা দেবার,

আর মূল ভূখণ্ড থেকে

আমার সহচরের

ফুল, আর কলম নিয়ে আসবার


রচনাকাল: ২০০০



ভয়


ছোটবেলায়

আমি খুব ভয় পেতাম পেঁচার ডাকে

আর মায়ের আড়ালে লুকিয়ে যেতাম।

এখন শীতের চাঁদ

মেঘ থেকে সেই ডাক ছাড়ে।

মা মৃত্যুর আড়ালে লুকিয়ে গেছে

শৈশব মেঘের ওপার থেকে উঁকি দেয়

চাঁদের চোখের প্রাপ্তবয়স্ক ঝিলিক

তার ওপর পড়ে।


আর আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। 


রচনাকাল: ২০০২  



শিলং যাবার পথে


শিলং যাবার পথে

উমিয়াম লেকের কালচে বাদামী ঘাটে

একটি নীল কৃষ্ণচূড়ার ঝালর,

তার তলায় আমি তাঁকে দেখিঃ বনলতা সেন।


আজ, এক দশক পার করে

আবার সে লেকের পাশ দিয়ে যাচ্ছি।

উনি এখনও সেখানেই দাঁড়িয়েঃ

উপচে পড়া নীল কৃষ্ণচূড়া

এক খণ্ড বেগুনি মেঘের তলে

আকাশে ধাবমান।


রচনাকাল: ২০০৩


বয়ঃসন্ধি


মাস্টারমশাই অঙ্ক মুছে দিয়ে চলে গিয়েছেন,

শুধু যোগচিহ্ন, বিয়োগচিহ্ন আর মোটে একটা শূন্য

পড়ে আছে ব্ল্যাকবোর্ডে।

যোসেফ যোগচিহ্ন নিয়ে নিল

আর আমিনা, বিয়োগচিহ্নটা।

আমি শূন্য পকেটে ভরে

চলেই আসছিলাম কি এমন সময়

একটা বিশাল কাক ডেকে উঠল,

একটা গাছ রাস্তা পেরিয়ে গেল,

পথে একটা তারা খসে পড়ে

ভেঙে খান খান।

মুষলধারা বৃষ্টিতে আমার

শূন্যটিও গলে যায়।


আমি ফিরে যাই আর

আয়নায় দেখি:

আমার গোঁফ গজিয়েছে। 


রচনাকাল: ২০০৪


দরজাওয়ালা একটা মানুষ


দরজা নিয়ে একটা মানুষ

শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে,

একটি লাগসই বাড়ি চাই।


সে মানুষ নিজের মানুষীর

স্বপ্ন দেখছে, বাচ্চাকাচ্চা, ইয়ারদোস্ত 

সবাই এই দরজা দিয়েই ঢুকে আসছে।

এখন সে দেখতে পায়

আস্ত দুনিয়াই ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে

তার না-হওয়া বাড়িতে:

কত লোক, গাড়ি-ঘোড়া, গাছপালা

পশু পাখি, সবকিছু।


আর দরজাটা, দরজার স্বপ্নটা

মাটির ওপর উঠে যাচ্ছে,

তার ইচ্ছে স্বর্গের স্বর্ণদুয়ার হয়ে ওঠার,

সে কল্পনা করছে মেঘ, রঙধনু,

দত্যিদানো, পরী আর সাধুসন্তেরা

তার মধ্যে দিয়ে চলাচল করছে।


কিন্তু দরজাটির জন্য যে প্রকৃত অপেক্ষা করে আছে

নরকের অধিপতি।

এখন দরজাটি চায়

গাছ হতে, ফুল পাতার সম্ভার

দুলে উঠবে হাওয়ায়,

গৃহহারা ফেরিওয়ালাকে

ছায়া দিতে।


দরজা নিয়ে একটি মানুষ হেঁটে যাচ্ছে

শহরের রাস্তায় রাস্তায়,

একটি তারা হেঁটে যাচ্ছে তার সঙ্গে। 


রচনাকাল: ২০০৬



ঋণস্বীকার:

কে সচ্চিদানন্দনের The Missing Rib (Collected Poems 1973-2015) নামক কাব্যসংকলনটি প্রকাশ করেছে Poetrywala। মূলত সেই সংকলন থেকেই কবিতাগুলো চয়ন করা।

Wednesday, June 1, 2022

সঞ্জু কুজুরের একগুচ্ছ কবিতা

এক বনরক্ষী


মানুষ যখন মগ্ন গভীর সুনিদ্রায় 

আমরা তখন হাতি তাড়াই 

ফসল ঘরবাড়ি মানুষকে অক্ষত রেখে 

হাতিকে আমরা লোকালয় থেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে জঙ্গলে নিয়ে যাই


সেই যে কবে থেকে আমরা নিজ ঘর-বাড়ি ছাড়া!

সেই যে কবে থেকে আমাদের প্রিয়জন স্বজনদের মুখ দেখা নেই!

আমরা পাহারা দিই, আমরা জঙ্গল বাঁচাই, আমরা থেকেই যাই

রেঞ্জ থেকে বিট, বিট থেকে জঙ্গল আর জঙ্গলেই


বনের ভেতরে গাছ কাটা পড়ে থাকা দেখলে

শরীর আমাদের জ্বলে

বনের গাছেই যে আমাদের সঙ্গে একান্তে 

নীরবে নিভৃতে প্রেমের কথা বলে।


শেষের গাঁথা

এখন আর থেকে থেকে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে না 

এখন আর খোঁজ রাখার মতো প্রিয় মানুষটিও নেই 

এখন দিগন্তরা শুধু অস্পষ্ট কুয়াশার চাদরে মোড়া সকাল সন্ধ্যা 

নদীর এপার ওপারে জমে গেছে 

এখন শুধু সহস্র ব্যথার পুঞ্জীভূত স্তূপ 


এই তো সেদিন যখন খুশি ছুটে যেতাম, যখন খুশি ছুটে আসতো সে 

আজ আমাদের জীবন আবৃত চক্রবুহ্যের ঘেরাটোপে আবদ্ধ 

আজ শুধু দৃষ্টি ছোটে মন ছুটে চলে যায় বহুদূরে 

স্মৃতিবিজড়িত চিরপরিচিত সেই চা-বাগানে

আমার রাধিকা মথুরায়...

জানি এলোকেশে সকাল থেকে সাঁঝবেলায়

সে যে এখন বড়ই অসহায়


দোহাই ওকে আর কষ্ট দিও না...

দোয়া করে ওকে আমার কাছ থেকে 

কেড়ে নিয়ো না ...

ওকে ছাড়া সত্যিই আমি বাঁচবো না...


অরণ্যের সুন্দর একটি গাছ


একটি জীবন্ত গাছকে কত সুন্দর লাগে!

নদীর তীরে তার বেড়ে ওঠা 

অল্প একটু উঁচু, সুন্দর তার কাণ্ড, ডাল, পাতা...

কতো সুন্দর লাগে...!

কত ভালো লাগে...!

যুগ যুগ বেঁচে থেকো হে গাছ...


মন তো করে গাছ তোমায় অরণ্য থেকে তুলে আনি 

আর চোখের সামনে উঠোনে রোপন করি 

আর তোমায় প্রাণ ভরে

তোমার সৌন্দর্যকে দেখতে থাকি...

কিন্তু সে যে এখন আর সম্ভব নয়...

তুমি যে এখন অরণ্যের গাছ 


যুগ যুগ বেঁচে থেকো হে গাছ ...


নির্জন সমাধি


আজ বুকের ভেতর বেদনারা সহস্র পাড় ভেঙে অনন্তে বয়ে যায়

হয়তো আমার জন্মই ভুল ছিল এ ধরায় 

তাই হয়তো আমার সরল মনের কান্না আর কেউ দেখতে পেলো না...


গোপনে আমার বেঁচে থাকা কোন দিন যেন পূর্ণ হল

যে দেশে মৃত্যুর আগে সমাধি স্থল ঠিক করেই রাখতে হয় 

আমি অবশ্য সে দেশে জন্মাইনি...


তবুও স্বপ্ন দেখি নির্জন, একাকী একটি সমাধির

Tuesday, November 16, 2021

দাক্ষিণ্য | অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত

ফিরে এসে দেখি আমাদের ছাউনির

মাঝখান দিয়ে রেললাইন ছাড়াই

ট্রান্সআটলান্টিক এক্সপ্রেস 

ছুটে গেছে, আর সমস্ত সুনশান


যাবার মুখে বিলিয়ে গেছে তার 

করুণাঘন একটি ইশতেহার:

"যারা মৃত তাদের জন্য আর 

ভিসা লাগবে না নায়েগ্রা দেখবার।।"



কবির পাণ্ডুলিপি সৌজন্যে: এলিজাবেথ গ্যুন্টার

Wednesday, November 10, 2021

সিলভিয়া এউখেনিয়া কাস্তিয়েরোর কবিতা | সেই সামান্য বিরহে

মূল স্প্যানিশ থেকে বাংলায় অনুবাদ | জয়া চৌধুরী


পঞ্চম বসবাস: মোহভঙ্গ 

প্রতিবার যখন ভুট্টার কাণ্ড আরও লাল হতে থাকে

ভুট্টা গাছের পাতা থেকে ঝোলে একটা ফারের পুতুল

বালিকারা লুকোচুরি খেলে

এবং কাকতাড়ুয়াদের অনাবৃত করে ফেলতে থাকে।

সে রয়ে যায় মুখহীন, পরে এক চোখ কানাও,

কান দুটো ওকে হিঁচড়ে টানতে থাকে যতক্ষণে না সে স্বচ্ছ হয়ে ওঠে।

ফুটো ফুটো জালিকায় ভরা আমার বাবাকে ওরা 

যখন অপহরণ করেছিল ঠিক তেমনটি। 

সেই সমতল বিকেলে 

মনে হচ্ছিল ভুট্টার শীষ বেয়ে বয়ে যাচ্ছে রক্ত;

পুতুলের তখন আর নাক নেই, দেখতে পায় না গন্ধও নয়,

চিৎকার করতেও পারে না, বহু মানুষের মাঝখানে ও মারা গিয়েছে,

যেখানে সব শবদেহ রয়েছে বালিকারা সেখানে ওকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল

তখন সবে ওরা ক’জন ভদ্রলোককে বড় বড় পিস্তল দিয়ে গুলি করে উঠেছিল।


বাহুল্যবর্জিত শূন্য

বিকেলের তীব্র আবেগ

সেই কালিমা যা আমার পিছনে ধেয়ে আসে

সেই শুভ্রতা যা আমার স্কার্টকে রঙিন করে তোলে

পৃথিবীর এই খণ্ডে এ হল গোধূলি

আমাকে দংশায় আগুন

ফুলে ওঠে পেট

মুখ জ্বলতে থাকে

মনে হয় বুক থেকে বের হয়ে আসছে পা দুটো

এ হল ভয় যা কর্কশ আওয়াজে আমার শিরদাঁড়া খায়

সমস্ত ভুট্টা ক্ষেত পুড়তে থাকে

জ্বলতে থাকে সমগ্র জনপদ

বাহুল্যবর্জিত শূন্যরা

দুলতে থাকা বৃক্ষদের দিকে

আমার লাল স্কার্ট ছড়িয়ে পড়ে

বিদ্ধকারী সাঁড়াশিদের মতো

ভাঙা জানলারা পড়ে যায়

আমার পোড়া হাতদুটো জল খোঁজে

এক শ্বাসরোধী আগুন খড়ের উপর চিৎকার করে

ডুবে যাওয়া আমার সে চিৎকার, একটা কাঁপুনি

আগুনে গোটা পাহাড় দুমড়ে যায় 

তোমার ভেদকারী চোখেরা আমাকে পলকহীন রেখে দেয়

শস্যাগারে বাড়তে থাকে আগুন

পাশে পাহাড়ে তখন কেবল বাহুল্যবর্জিত শূন্য।


একটি ক্রিসেন্থিমাম পরিধান করি

এবং চুলের উপর সাদা মুকুট;

মা পরেন সাদা জুঁইফুল

এবং গোলাপের মুকুট, কাঁটাগুলি একটি আঙুলে ফোটে।

কাঠের ড্রয়ারে 

ও তার খুলির ভিতরকার বিরাট গর্তে

বাবার গভীর চাহনিতে মা কেঁদে ওঠেন।

ঠাকুমা বাবাকে গুছিয়ে দিয়েছিল যাতে ওরা তাঁকে দেখতে না পায়

কিন্তু আমার মনে তো ওঁরা থাকবেনই। 

মা জানু ঢাকা মোজা পরেছেন, কুঁজো হয়ে হাঁটেন,

চোখে পাথুরে চাহনি, ওঁর আঙুলের রক্ত

বাবার মুখের ওপরে পড়ে টপ টপ, সঙ্গী থাকা কুমারী 

মেরীর ছবিটিতেও। বাবা হাসতে থাকেন,

হয়ত তখনও পালিয়ে না গিয়ে মেঘের ভিতরে থাকেন,

বাবা ভুট্টাক্ষেত বুনতেন এবং মিথ্যে বলতেন,

তারপর লুকিয়ে পড়তেন 

যতক্ষণ না ফের বেরিয়ে পড়েন এবং পাহাড়ে হারিয়ে যান,

ওঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় ওরা পায়, কথা বলছিলেন না, কেবল মিথ্যে বলছেন।

ক্রিসেনথিমাম ফুলেদের পাপড়ি ঝরে পড়ে,

মৃত্যু গন্ধ ছড়িয়ে ঢলে পড়তে থাকে জুঁই, তবে ঠাম্মার

গ্লাডিওলাসের শাখারা ঢের বেশি সিরিয়াস, সুগন্ধ ছড়ায় না, কাঁটাও ফোটায় না।

তারা দুঃখী হয় না কক্ষনও।


যেদিন থেকে বহুবার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হওয়া শরীর পড়েছে

ঝোপঝাড় দেখলে মনে হয় কাকতাড়ুয়াদের জন্ম দেবার পক্ষে ওরা যথেষ্ট উর্বর 

এবং বিছানার চাদরের মত ওরা ঝুলতে থাকে

দেখায় যেন তীর বিঁধে আছে কাণ্ডে,

আকাশ অন্ধকার করে দিয়ে পাখিরা চিৎকার করতে থাকে

এবং পালায়।

এককোণে ভীষণ লালচুলো এক ডাইনির উদয় হয়

তার মুখে ঘাস আটকে রয়েছে।

নিরলঙ্কার যন্ত্রণার ভেতরে স্তব্ধ, এ এক গর্ভপাত হওয়া চিৎকার।

ডাইনিটা বেগনি। ট্রেন থেকে ছেঁচড়ে নামিয়ে আনার আগে

ওকে নিশ্চয় ওদের শ্বাসরোধ করে রাখতে হয়েছিল। দুলছিল

ঝড়ের সামনে দোল খাচ্ছে বলে, পাশে থাকা ভুট্টার পাতাদের

দেখে মনে হয় দুর্ভাগ্য দেখে মুখ ভ্যাংচাচ্ছে।

চোখ খুবলে নিতে পাতিকাকেরা এগিয়ে আসে,

দুটি গভীর গর্তের

ভেতরকার গোলকধাঁধা দেখতে রেখে যায়;

পরে শকুনেরা তা খেয়ে ফেলে

ভাঙা হাড়গোড়গুলো ফেলে যায়।

সে নারী প্রতিরাতে লাঙল হাতে

গ্রামবাসীর জানলায় উঁকি দেয়।


আগ্নেয়গিরির মতো, কলঙ্কময় সূর্যের আলোয়

ভরাভর্তি চারমাথার মোড়ে ছোটরা দৌড়াদৌড়ি করে;

দেয়ালে বিষুবরৈখিক স্বরভঙ্গি,

কুটিরশিল্প, ইন্ডিয়ান জনজাতির মানুষ, মদ;

ধীরস্থির বুড়োদের জাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট 

এবং মেঝে ঢেকে দেয়া পাতারা।

তিনজন পুরুষ কাছে এগিয়ে আসে, হাঁটার সময় তারা একেবেঁকে চলে,

দেখলে মনে হয় চোখ নেই, চারমাথার মোড়ের আধখানা গিয়ে

পালানোর পথ খোঁজে, একটা ডাকের জন্য অপেক্ষা করে, নগ্ন আকাশে

লুকোতে চাইবার এক চিহ্ন,

চারমাথার উপরে ছুরি দিয়ে ফালাফালা করার মতো একটা শতপদী কেঁচো 

পবিত্র নৈবেদ্য-গিঁট,

গলা, হৃৎপিণ্ড। এবং ওরা শুকিয়ে যায়।


আধঘুমন্ত মানুষ।

দ্রুত হাতদা-র ধার দিয়ে স্তন দুটো ছোঁয়।

ট্রেনের ছাদে

মুরগিপালকেরা তাদের হ্যাচারি বয়।

ডানা ক্ষইতে থাকা মোটাসোটা মুরগিরা 

নড়াচড়া করতে পারে না।

পাতা জুড়ে একটা কাঁপুনি ছড়িয়ে পড়ে,

ঘাড়ের প্রধান শিরা প্রতি মুহূর্তে আরও পুরু হয়ে চলে--

এটা ভয়-- ছুরি ও ছেদ চওড়া হতে থাকে,

বাড়তে থাকে-- রক্ত বুদবুদ করে ফুটতে থাকে

বাতাসের সংস্পর্শে কালো হয়ে যায়। 

মাথা চোখ বোজাতে সে অস্বীকার করে

যেন তাদের খুঁজছে।

ভেতর থেকে থকথকে কাদার গন্ধ ফুটতে থাকে।


যেদিন অপহরণ ঘটেছিল

আমার পুতুলটা লাল পুকুরে পড়ে গিয়েছিল,

মাথায় ফুটো ছিল ওটার 

আমরা তখন দৌড়চ্ছিলাম আর মা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

আমার পুতুলটা ভাঙা চোখে আকাশের দিকে 

মুখ করে পড়েছিল 

এবং একটা গর্তের ভেতরে

প্লাস্টিকের মতো দুটো গুলি আটকে ছিল।

আমার ত্বকে ঠাণ্ডা লাগছে 

নখেরা আমায় চিরে ফেলতে আসছে,

আঙুল দিয়ে কেটেও ফেলল।

আমার ক্ষতি করল ওরা। 

শূন্য থেকে নীল চোখে আমার পুতুল

আমার দিকে চেয়ে রইল,

নোংরা রক্তটাকে আমি দেখেই যাচ্ছি।



---------------------------------------------------------

কবি সিলভিয়া এউখেনিয়া কাস্তিয়েরো মানসানো (Silvia Eugenia Castillero Manzano) জন্মেছেন মেক্সিকো শহরে। গুয়াদালাখারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য পত্রিকা ‘লুভিনা’ সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত। ২০১২ সালে বাইসেন্টিনিয়াল লেটার্স পুরষ্কার পেয়েছেন। সপরিবারে কলকাতায় এসেছিলেন ২০১৯ সালে। আইসিসিআরে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।

Saturday, November 6, 2021

মেহুল দেবকলার কবিতা


দুই শহর

আমার সর্বকনিষ্ঠ বন্ধুর জন্য তাঁর ৮০তম জন্মদিনে 


বাংলা অনুবাদ: শ্যামশ্রী রায় কর্মকার 

গুজরাটি থেকে ইংরেজি অনুবাদ: অন্তরা দেবসেন


তুমি কি বিশ্বাস করবে 

শীতের সকালে যে হাসির উষ্ণতা দেয়

সেই শহরের প্রত্যন্ত এক কোণে আমরা ছোট্ট কলকাতা গড়েছি

তোমার হাসির মতো উচ্ছল, প্রাণখোলা সে 


গুরুদেব 

হয়তো কোমল মমতায় 

শিশুটিকে তুলে 

বসিয়েছিলেন তাঁর কোলে

মৃদুস্বরে উচ্চারণ করেছিলেন ন ব নী তা 

তুমি তখনও নিশ্চিত হেসেছিলে


আমি জানি 

এই তীব্র শীতের রাতে 

ভালবাসার কোন ঘরে 

এখন লিখছ তুমি, কিংবা পড়ছ 

পরম শান্তিতে 


মধ্যরাত্রিতে 

তোমার ফোন 

হোয়াটসঅ্যাপ বার্তারা

ভিডিয়ো কলের জন্য 

তুমি অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিলে

ওমনি তোমার চোখ বলে উঠলো অজস্র কথা 


কাঁটা বিছিয়ে রাখা রাস্তায় যখন আমি পথ হারিয়ে ফেলি 

কবিতা ও ক্ষমতার টানাপোড়েনের মাঝখানে 

তুমি এসো হাত ধরো, পথ দেখিয়ে যাও প্রতিবার 

বলে ওঠো, 'মেহুল, তুমি আমার ছেলের মতো'


নিয়তি আর আমি 

সুদূর ভাদোদরায় 

ছোট্ট একটা কলকাতা গড়েছি

এবং আমি জানি 

ওখানেও ছোট্ট ভাদোদারা গড়ে উঠছে 

আর তোমার কবিতার মতো আমাদের বন্ধুত্বও অক্ষয়, শাশ্বত। 


এই তো 

ক'দিন আগে 

তুমি বললে, 'আমার গলা বুঁজে  আসছে' 

আমার বুক কেঁপে উঠল 

কিন্তু জানি 

আমার আগেও ছিলে 

আমার পরেও থাকবে তুমি 

যতদিন এই দুই শহর 

বেঁচে থাকবে


১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

ভাদোদরা



---------------------------------------------------------

মেহুল দেবকলা (Mehul Devkala) সাম্প্রতিক গুজরাটি কবিতার অন্যতম নাম। সমাজকর্মী হিসেবে সুপরিচিত। পাশাপাশি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি নির্মাতা। বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়। যোগ দিয়েছেন সাহিত্য আকাদেমির অল ইন্ডিয়া ইয়ং রাইটার্স মিটে। নবনীতা দেবসেনের স্নেহধন্য।

Saturday, October 16, 2021

Poems of Arunava Raha Roy


Rabindra Sadan


Suddenly what happened, that your mobile phone flew away & landed inside my pocket directly from the space! What happened suddenly, that we kept stand still on the Rabindra Sadan back stage and the whole auditorium transferred into a ship! Oh look over there in the second floor, the white bearded captain whistling to command & start the journey. The fun & frolic will be starting right now… the young ladies from Andaman were about to start playing billiard! Where will we be floating away with this ship? Let's go, let us stand united close to the deck railing… let the wind starts floating hitting our sails. This scenario alike to Titanic, let it stand here, now let us flee away leaving the scene, leaving ourselves... to have some beer somewhere else.. Let a world, absolutely owned by us, starts revolving around us. The lord himself is standing just a bit outside the universe, with that world keeping on his palm... No other way to go! Without spoiling each other we won't be able to go anywhere else leaving this orbit, never ever...

(Translated from Bengali: Debanjana Mukherjee Bhowmik)


Bygone


Staying far is good.

Staying far means

we can never meet again.


Is it good, not to meet?

Definitely not!


But, being far can mean

that we can perhaps meet in

some coffee shop around

the city...

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


Faraway


You remained silent,

you had a reason too!

I too did not say anything for many days...

So, now, shall we begin to

talk again?


Let alone meeting,

many days you did not even ask me to write and yet

on your words I could have traveled

to Shimla-Manali...

since there were mountains,

there were some more songs


"Hey poet, how are you?"

You can break the

pattern and ask me once.

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


Bodhi


If you gift poems,

how long can I keep writing?

Shall I inscribe you into my

visceral intensity?


Deep inside that tree hollow

whose Esraj plays such a

pristine melody?


As your vibrations come

closer to me, an intense

desire to create more engulfs

my existence.

I revive again to attain the

light through the collaged-water...

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


Spring Restaurant


Come, let us travel from one

Spring to another...


Let us meet.

Let me listen your

Nightingale voice

When you speak.

Tell me about your

father's well-being!


Come,

let us go from one Spring to

another...


Let us both sink and drink

water...


Let us perch

within the moonspace

and converse...

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


At Jorasanko with Snija


I ran out of poems

But a few of the songs of you came flipping their wings all the way to me,

I ask my writings to get drenched in soothing water,

I assure them that there is nothing that can be better


My dearest,I give you the name 'Snija'

I shall call you lovingly by this name from this very moment 

I shall drape your love all over my new born poems


During the rainy season the blow came from far away America...

Forget it, I thought with a sigh;

My dear, come, let's take a stroll at Jorasanko, together you and I

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Goddess


For long I had been walking on a rope 

Albeit it was tough

But I travelled a fruitful distance no doubt 

Where I finally stopped is called earth

Some unknown artist meticulously made you with this very earth

I place poems in your ten palms instead of brutal weapons,

But you fling all the poems unto the unknown;

After some moments of loathsome disgust


The poems will become burning stars

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Myth


If you really hurt me I shall not hesitate to go away

And lean against the dejected sky


Why are you so silent yet unfathomable?


You are like a drop of water on the floor


Today I retrieved this drop of water from the River Jalangi 


While still leaning against the sky I shall certainly make you understand-


That you are water


I shall, one day, like the fabled crow, bring you up from the depth of the earthen pitcher by putting stone chips one after the other until I can touch you. 


You are water

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Silent Belle


The colour of your disregard is like that of the dusk in flight

Which hides itself on the back of the moon


Sleepy eyelids are like weary rivulet which wash away all the light within


You come hurriedly to the office gate,

And lo! There drips down your body a lightning divine

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Wonder


You are such a lover! What a poem!

You didn't come to Manali but through pen.

Bloomed in the tub, on the edge of the current...


Bless me, waking up late night

I am sitting in the hotel room to write you.


Those who have come to travel, no one knows

Here you are every day pick up the sun

from the alloy and burn it on the top of the mountain..

(Translated from Bengali: Mahmud Mitul)


---------------------------------------------------------

Arunava Raha Roy born in 1991 in Alipurduar town of West Bengal, India. He did his higher education in Kolkata. He loves poetry from his early age, had stemmed from his father who was a known poet. Since then, his work has been publishing regularly in leading magazine of Bengal. In the first stage of professional career he worked as a Poetry Editor in a print magazine and worked also as the Literary Editor in a web magazine. He has completed M. Phil from Assam University.

He has published four books of his own creation of poetry-- Sabuj Patar Megh (2010), Dinanter Bhasha (2015), Khamkheyali Pashbalish (2018) and Snijar Sange Jorasankoy (2020). He is the recipient of Barnali Smriti Puraskar (2015), Uralpool Puraskar (2017) and Soumen Basu puraskar (2017). He has recieved Travel Grant 2018 from Sahitya Akademi. Attend All India Young Writers Meet, May 2021 (Sahitya Akademi, Government of India). Attend Dhaka Lit Fest, Nov 2018. Went to Bangladesh Amar Ekhushe Grantha Mela, Feb 2018. Email: arunavaraharoy@gmail.com

Thursday, May 20, 2021

দুটি কবিতা :: রবিন মাইয়ার্স

অনুবাদ: অরিত্র সান্যাল

নিউ ইয়র্ক সিটি


বাচ্চা মেয়েটা নিজে থেকেই

ওর গোলাপ-পাপড়ির মতো ব্যাগটা

পুলিশকে দিতে গেল।

সেই জায়গায় আর তার বাইরেও

তখন তুষার পড়ছে, আকাশ 

ভাঙাচোরা, নাপিতের দোকান থেকে 

গান, চোদ্দ ডলারের 

ওয়াইন গ্লাস, 

ধুসর পায়রাগুলো, রাইকার আইল্যাণ্ড,

আইস স্কেটাররা আলিঙ্গন করছে

পরস্পরকে, কারও

উত্থান আর পতন কিন্তু

সে সব এই গল্পে

বলার মতো নয়। মেয়েটার মা

মিটমিট করে জ্বলছে 

মেয়েটার পিছনে। পুলিশটি

খামখেয়ালি বাবার মতো

বাঁকা হাসি দেয়। কেউ একটা

স্টিল ড্রাম

বাজাল এই সমস্তকিছুর তলায়। সুড়ঙ্গের 

ধাতু মজ্জায় তার মন্ত্র একটা

চকিত ঝলক উচ্চারণ করে, আমাদের

নত হতে বলে। যদি কিছু দেখে থাকো,

বলো তবে, যদি এখানে আছ,

তার মূল্য চোকাও 

                    (৯ মার্চ, ২০১৯)


ভারমন্ট


ওই ছায়াচ্ছন্ন তুষার এতই নীল অদ্ভুত যে

দেখে মনে হয় সে কখনও নিজেকে নিয়ে বাঁধা গান শোনেনি


আর তার বেশিটাই ছাই হয়ে

উঠে যাচ্ছে পাহাড়চূড়োয়

দেখতে পাচ্ছি।


খুব অল্প সময়ের জন্যই এখানে আলো আসে

আর তা এতই ঠাণ্ডা যে জীবন বেরিয়ে যায়


যদি যেতে দাও।

দেবদারু জেগে ওঠে হত পশুপাখির মধ্যে


উজ্জ্বল।

এত রকমের জৈব দশা


বসন্তে বেড়ে ওঠে।

রাখে কোথায় নিজেকে, কীভাবে


জোগায় বিশ্বাস যে

বেঁচে থাকবে?


অন্য জীবনে আমি,

আরিজোনায় পরিচারিকা হয়ে থাকি 


আমার লিউকেমিয়া আছে,

আমি পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি নিষ্ঠুর,


আমি এক মহিলার প্রেমে পড়েছি,

আমি রোজ এক ল্যাপ সাঁতরাই।


অন্য অন্যতর এক জীবনে আমি রুগী,

আমি তুষারপাত করি।

                       (১১এপ্রিল, ২০১৯)




-------------------------------------------------------------------------

কবি পরিচিতি: রবিন মাইয়ার্স (Robin Myers, B. 1986) আক্ষরিক অর্থেই শূন্য দশকের কবি। আশা করা যায়, বাংলা সাহিত্যের জগতে সে থাকলে কবিতে কবিতে দ্রুত আলাপ জমে উঠত। কিন্তু থাকে সে মেক্সিকোয়, সুদূর মেক্সিকোয়। এ সত্ত্বেও অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ যে ঘটে গেল তা কেবল অরুণাভ রাহারায়ের উদ্যোগেই। কাছ থেকে দেখতে পেলাম পাকেচক্রে আমরা যে অন্তহীন দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে চলেছি, রবিন তাতে স্পষ্ট জেগে আছে; সাধ্যমতো রুখে দাঁড়াচ্ছে, যতটা বিদ্রোহ এক কবিকে মানায়-– করছে। এই লেখাদুটি সেই সক্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে। লেখাদুটির মধ্যে বয়ে চলা চাপা রাজনৈতিক আঁচটি নিয়ে একদিন জিজ্ঞেস করায় রবিন সরাসরি জানাল, আলাদা করে রাজনৈতিক কবিতা লেখার দায় তার নেই। কিন্তু একটা সময়-– যে সময়ে আমরা বেঁচে আছি, তার থেকে তো আর অন্ধ হয়ে নিস্তার লাভ করা যায় না! এই ইঙ্গিতেই পরিষ্কার বোঝা যায় রবিন নিজের ভাষাগত, ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক পরিমণ্ডলে শিকড়ের মতো গেঁথে দিয়েছে তার অস্তিত্বের শিরা উপশিরা। কবিতায় তো বটেই, অনুবাদকর্মেও রবিনের সিদ্ধি আকাশছোঁওয়া। একজন অনুবাদক হিসেবেই রবিন প্রথমত আমাদের কাছে পৌঁছয়। Kenyon Review, the Harvard Review, Two Lines, The Offing, Waxwing, Beloit Poetry Journal, Asymptote, the Los Angeles Review of Books, Granta , Tupelo Quarterly আর Inventory প্রভৃতি শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যপত্রে তার বিভিন্ন অনুবাদ প্রকাশিত। ২০০৯ সালে American Literary Translators Association (ALTA)-এর ফেলোশিপ; ২০১৪-তে, Banff Literary Translation Centre (BILTC)-এ রেসিডেন্সি; আর ২০১৭ সালে রবিন feminist translation colloquium A-Fest- অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে।

Thursday, April 15, 2021

রবার্ট অ্যাডামসনের কবিতা


অনুবাদ: অরিত্র সান্যাল

শীতে, হাসপাতালের বিছানায়


ব্যথা বেদনার বড়িগুলোর ধাক্কায় লম্বা করিডোর দিয়ে

আমি যেখানে এলাম, স্মৃতি সেই ঘর

সবুজ ঢেউয়ের স্বচ্ছ বাষ্পে চড়ে যন্ত্রণা দূরে সরে যাচ্ছিল

কিছু কিছু ছবির ঝলক আসে, চলে যায়


সে বয়সে আমি কবিতা ছাপাবো বলে লিখিনি

তবে, আমার আশেপাশে জীবন যুদ্ধে পিষ্ট হয়ে যাওয়া কিছু পাঠক ছিল  

আমি তাদের মনোযোগ পেতে চেয়েছি

আমার উঠোনে দুশ্চিন্তার মতো ওরা ভেসে বেড়াত


কখনও সিগারেটে টান দিচ্ছি কখনও ইতিউতি দেখছি

কী ভাঙার জন্য আর কী শাস্তি বাকি বা চিত্তবিক্ষেপ

স্মৃতির সূক্ষ্ম ধাতব পাত ভেসে উঠতে থাকে 

মনের উপরিতলে আবার কামড় দেবে বলে


আমার কোনও ধারণা নেই কেন কবিতা আমায় ধরে ফেলল স্কুইডের মতো

মগজ থেকে ঝুলে থাকল দুর্গত আবহাওয়ায়

ভিন পরিবেশে একটা প্রাণী

তার শতাব্দী প্রাচীন জীবন নিয়ে জেগে উঠছে


ভাবনা-চিন্তাকে কালির মতো হতে হবে এবং

হতে হবে এমন যাতে ঝটতি শিকারে টোপের কাজ করতে পারে

কালো চঞ্চুতে আর গভীর থেকে বোধ জেগে উঠবে

সে এক দিন ছিল যখন কবিতা ছিল বুনো জন্তু বশ করার ছল


তখন না ছিল মাছ, না ছিল পাখি তাই

আমি পংক্তি রচনা করেছি তাদের জন্য, জীবন যাদের তিক্ততায় ভরা

চোখ তাদের রোষে লাল চঞ্চল

যখন আগামী কবিতাগুলি আমার জন্য অপেক্ষায় রত



-------------------------------------------------------------------------

কবি পরিচিতি: অস্ট্রেলিয়ার সমসাময়িক কবিতার মানচিত্রে রবার্ট অ্যাডামসন সে ভাষাসংস্কৃতির প্রধানতম কবিদের একজন। জন্ম ১৯৪৩ সালে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ১৯৭০ এ প্রকাশ পায়, ক্যান্টিকলস অন দ্য স্কিন। রবার্টের কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৬-র বেশি। বিবিধ সম্মানে ভূষিত রবার্ট অস্ট্রেলিয়ার সম্ভ্রান্ত প্রকাশনা সংস্থা পেপার বার্ক প্রেসের কর্ণধার। 

-------------------------------------------------------------------------

অনুবাদকের পরিচয়: কবি এবং অনুবাদক অরিত্র সান্যালের জন্ম ১৯৮৩ সালে। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ-- নাবিক বিন্দু থেকে (২০১০), আজ কারও জন্মদিন নয় (২০১৩), নিজের আয়ুর মতো শ্যামবর্ণ (২০১৫) এবং একটা বহু পুরোনো নেই (২০১৮)। সমসাময়িক আমেরিকান কবিদের লেখা অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন – ‘ব্রিজেবল লাইনস’ (২০১৯) গ্রন্থে। এ বছর প্রকাশ পেয়েছে পৌলমী সেনগুপ্তর সঙ্গে যৌথ অনুবাদে কানাডিয়ান কবি আদিনা কারাসিকের কবিতা 'সালোমে বীরাঙ্গণা'।

Tuesday, April 13, 2021

অতিথি বীক্ষণ :: কমলেশ রাহারায়


আমি তার কেমন উত্তরসুরি, একদিন মেপে দেখি

দৈর্ঘ্যপ্রস্থ,মনের ভিতরে ঝিলিক দিচ্ছে রংবেরং মনস্তাপ

আর কোনও অঙ্কিত শব্দ নেই, শূন্য ভাঁড়ার  যেমন

থাকার কথা, প্রারম্ভিক বিষাদে তেমন রক্তমেঘ জমে যায় 

চেনা-অচেনা, দেখা অদেখায় তবু গ্রীবা তুলি 

সবুজ সংকেত পাঠাই, দহনের এই এক পরিণাম


অথচ যে কোনও মানুষ চায় অনুযোগ বাদ দিয়ে জোৎস্নার ভিতর

তার নিজস্ব প্রতিধ্বনি আকাশমাটি জলে স্বপ্নময় হোক

সারাদিন অসম সাহসী এক মেষপালক বধ্যভূমিতে

অন্তত একবার ভাঙাচোরা মুখ আর মাথাটা তুলুক

নিসর্গ শরীরে মানুষের শিরস্ত্রাণ একবার ঝলমল করে উঠুক 

কে না চায় ঝিনুকের ভিতর থেকে উঠে আসুক ব্রতকথা 


মূলত সব যেন অর্গ্যানের সুর, অস্ত্রবিহীন পথ

গোধূলির মাঠ ভেবে দেবদারু অতিথিবীক্ষণ

এতদূর এসে গেছি আমন্ত্রণ ছাড়া ,ভ্রুক্ষেপ করিনি


---------------------------------------------------------

Guest Vision

Kamalesh Raha Roy


How I am his successor, I try to measure;

An absent-minded flower flickers in my mind,

And there are no words drawn, the way an empty storage

Is expected, the way bloody cloud, known unknown,

Overcast, I lift my face to send the greenlight,

This is the consequence of combustion


Still a man wishes his own echo

Reflected everywhere, an intrepid shepherd

Raise his head in the slaughterhouse, his crown

Shimmer in the nature, who does not want 

Folklores from oyster shell!


Chiefly everything sounds like the music from the organ,

A path to walk unarmed, looking at the Deodar guest vision 

and thinking it the field of dusk, I have made so far

Without caring for a call.



Translated by Jagannath Biswas

Painter: Paul Klee

না-পাঠানো চিঠি :: উত্তমকুমার মোদক


ভারতবর্ষের নামে চিঠি পাঠাই এক বিশ্বগ্রাম থেকে

জানি, পরম্পরার ভেতর সব, গ্রিল বসানো ফাঁক

তবু, দেখো, আহ্নিক-একাদশী সারছে কামার্তরা।


একটি অন্ধরাস্তা ধ'রে খুনীরা আসে রক্তমাংস চেয়ে

লালফিতের ফাঁসে কাঁদছে অধিকারের পাখি!

সব প্রবাহের মুখগুলি পরিকল্পিত ঘোরানো!


উৎসের দিকে উল্টো, নামানো থাকছে,পতাকা!

মগজের ভেতর দিয়ে উড়ন্ত ফোরলেন

চাষের ক্ষেতে কর্পোরেটের গুদামঘরের তালা


সংবিধানের ধারায় জমছে পদার্থের রেচন

শাসকের মুখ ঝামলায় নয়া-খনার বচন!





চিত্রকলা: হিরণ মিত্র

Sunday, April 11, 2021

হৃদয় হোম চৌধুরী-র কবিতা


খেলা

আবেগ তোমায় আত্মীয় করেছি

হৃৎপিন্ডে সহস্র শব্দের হাহাকার না হলে দেখতাম

কী করে?

সহস্র সমুদ্রের অমৃতধারা নিয়ে

                   আমার মায়েরা 

হেঁটে গেছে দিগন্তের সূর্যে লাগাম ধরতে 

আর তোমাকে মৌচাকের ঘর গুনে 

জারুল পাতার মাঝে ঘুমোতে দেখেছি রাতে-

বিছানায় নিয়ে এসে

ভালোবাসায় গল্প করার ইচ্ছেটুকু উবে গেছে-

শবের এই শহরে লাশ কম পড়েছিল একবার

বিচ্ছেদী সুরের মতো ভজন বেজেছিল

কফিনের কত সপ্তম পেরেক ফেলে দিয়েছি-- সে সব জানেনি হয়তো কেউ-

শ্মশানে চুল্লি জ্বলে; লাশ সাজিয়ে দিন

আঠারোর জীবনে শেষ খেলা,  দেশ ও জীবনের মিলন


কবি

নদীর কিনারে ফেলা নোঙর-অন্ধ আতুড়ঘরের চিৎকার- 

                      শুনতে চাই না আর।

ভাঙা আকাশের নতমুখ শোকের অবাধ পাথরে

                              প্রেমের খাটিয়া পেতে বিশ্রাম নেয়।

এসবের মাঝেও মনে রেখো

   

ধূসর স্টেশনে আমার পার্থিব দাম্পত্য শেষ হবে আগামীকাল


ফাঁসীগামী আত্মার ক্রন্দনে আয়নার কফিন দেখব--

অন্ধ কালো বিড়াল দু'টি পেছনে ফুঁপিয়ে ওঠে 

পৃথিবীর কখন অসুখ হবে আমি কখন ওষুধ দেব

কখন আমার পায়ের ছাপে পৃথিবীর অঙ্ক কষব 

ওদের পদপিষ্টে ভাঙা ভাতের থালা

কোন বসন্তবিলাপের সঙ্গী হবে!

কবিতা সঙ্গমের জন্য অপেক্ষায় আছি

শেষ সীমান্তে পৌঁছে যাব বলে এসেছি

এখানে কবিরা কি মরুভূমিতে চেরী খায়?


নগ্নপায়ে পলাশের বেড়ি জড়িয়ে পান্ডুলিপির পর পান্ডুলিপিতে কী অক্ষর ছাপেনি ওরা!

Saturday, November 21, 2020

অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা


গুঁড়িপথ

এখানে সুপ্তিহীন নুড়িবিজড়িত এই ফাঁকা অন্তরীপে
অসত্য নেমপ্লেটে ওরা এসেছিল ভুয়ো জিপে...

দীপদা সন্ধেবেলা নীপাদির রাংতার টিপে
নিজেকেই দেখেছিল চন্দ্রাহত, আর
জ্যোৎস্না এসে জলে পড়ে
ছায়া হয়ে ঘিরে গেল তার,
অন্য ব-দ্বীপে!

কানাকানি বয়ে চলে
পাপড়ির সিড়ি ভেঙে, সারারাত
কালো টিউলিপে...

সঞ্চার

মাছির মতন ঘরে ঢোকে
অনাহুত, ফাঁকা এক বসন্তবাতাস,
আমি তাকে বহুদূর চলে যেতে বলি...

যেখানে চন্দ্রচোর দাগী কানাগলি
কোনও দিন হতে পারে তারার আকাশ...

Thursday, September 10, 2020

প্রতিভাসিক :: কমলেশ রাহারায়


মনে হয় তুমি সুখে নেই
সুতরাং
তোমার দুঃখভারী হৃদয়ের সুযোগ নিয়ে
সে চলে যেতেই পারে অনেক দূরে
পরিষ্কার কিছু বোঝা যাচ্ছে না
কিন্তু অকপট সমুদ্রের পড়ন্ত বেলার গান
যারা শুনতে পায় তারা মনে করে
যে দুঃখসমূহ তোমাকে দু'ভাগে চূর্ণ করেছে
বিপুল জলরাশি সেই তপ্ত হৃদয়ের কাছেই 
                             বুঝিবা ছুটছে

---------------------------------------------------------

Reflexive 
Kamalesh Raha Roy

It seems that you are not in happiness
And as such
By the slip of your grief leaden heart
He may surely go a far
Nothing is clear as yet
But those who can listen to the song
Of the falling light on the maskless sea
Do think:
The grief that crushed in two parts
The waves perhaps are rolling
Towards that larsen heart

                         Translated by Jagannath Biswas

Sunday, August 30, 2020

পল মালডুনের কবিতা


অনুবাদ: প্রসূন মজুমদার

ছুঁড়ে ফেলা

অনুমানে বুঝলাম

    এ চিঠি তোমার। আমি চিনেছি

ওই বাদামী কালি,

                   হাইফেনের দাগ

পোস্টমার্ক আর তারিখ পড়েছে কেউ,

              অধৈর্যকে চাপা দিলাম

একটা পেপারওয়েটে।

                তোমার চিঠি নিয়ে ঠিক এগারোটায়

গেলাম বাগানে

                 সঙ্গে চা।

আর হঠাৎ হলুদ গোপন আঠা

            অর্ধ্বেক উঠে এলো

যেন পাকা কুলবন

              ছাড়িয়েছে খোসা।

সৌরভহারানো পাতাগুলো ঝরে যেতে দিই

আবার তুলি

আমার নির্লজ্জ হাতে। চিঠিটা ওল্টাই 

             পিছনে

তোমার মুখ দেখব বলে

       মুখ তুলি। রোগা, সাদা মুঠো

আমার তামাটে হাতের থেকে ঝুলে আছে।


বর্ষজীবীর মৃত্যুমাস


সে শুনেছে আছে এক গাছ

বছরের সবক'টি দিনে

আরও গাছ গজানোর আঁচ

পাওয়া যাবে চাঁদ চিনে চিনে।


তবু রোজ ব্যথা কুরে খায়

গাছেদের স্তন নেই কোনও

হৃদি ঢাকে সবুজ হাতায়

ফেটে পড়ে নাড়িভুঁড়ি, মনও।


দুম করে প্রেমে পড়ে তার

বাসাভাঙা অন্ধ সে পাখি

গোলাপি হাঁ ভাঙা ঘড়িটার

সে পাখির প্রেমে হাত রাখি।


কার পথ চেয়ে সে কী দেখে

শহরের পথে পথে রোজ

সময়ের বিধিবাধা থেকে

যে হারাল তাকে করে খোঁজ।

---------------------------------------------------------

পল মালডুনের জন্ম ১৯৫১ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের আরমাঘে। ১৯৮৭ থেকে আমেরিকার বসবাস। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটি বিভাগের অধ্যাপক। ২০০৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অফ পোয়েট্রি নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ সালে পান টি এস এলিঅট পুরস্কার।

Sunday, August 23, 2020

গাব্রিয়েলা মিস্ত্রালের কবিতা



অনুবাদ: সুজিত মান্না

খুদে পা


এক শিশুর খুদে পা,

নীল, যেন ঈশ্বর প্রেরিত নীল,

কীভাবে তারা দেখেও তোমায় রক্ষা করার কথা ভাববে না?

হে ঈশ্বর!


খুদে আঘাতপ্রাপ্ত পা,

আহত করে গেছে নুড়ি পাথরেরা

ক্ষতির চিহ্ন রেখে গেছে বরফ এবং মাটি!


মানুষ, অন্ধ হয়ে আছে, উপেক্ষা করছে তোমায়

আর তুমি পা ফেলছো, রেখে যাচ্ছ উজ্জ্বল ফুলেদের,

তুমি যেখানে রেখে যাচ্ছ ক্ষতদাগের পদচিহ্ন

সেখানে বেড়ে উঠছে তীব্র গন্ধের কোন রজনীগন্ধা।


এরপরেও রাস্তা বরাবর একই সরলরেখায়

হেঁটে যাচ্ছ তুমি,

আমি বলিঃ তুমি সাহসী, ভয়ডরহীন


শিশুর খুদে পা,

যন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়া দুটো মণি,

কীভাবে মানুষ না দেখার ভান করে শুধু উপেক্ষা করে হেঁটে চলে যায়


ধর্ম


আমি আমার হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করি 

আহত হৃদয় ঈশ্বরের ভেতর ডুবে যেতে যেতে গান গেয়ে ওঠে

জীবিত পুষ্করিণী থেকে ক্রমশ উঠে যায়

ঠিক যেন কোন সদ্যজাত


আমি আমার হ্রদয় দিয়ে বিশ্বাস করি যা আমি নিজের থেকে নিংড়ে নিই

লাল পাণ্ডুবর্ণের রং দিয়ে 

জীবনের ক্যানভাসকে আলোকিত করতে

ঝলমলে পোশাকের ভেতর এটাকে আচ্ছাদন করে নিই


তিনি তো এক জ্যোতির্ময়ী-কর্তা


নিরর্থক তুমি চেষ্টা করছো 

আমার গানকে শ্বাসরুদ্ধ করতে

লক্ষ লক্ষ শিশুরা

একসুরে এই গান গেয়ে যাচ্ছে

সূর্যের নিচে


নিরর্থক তুমি চেষ্টা করছো

আমার দুঃখের কবিতাগুলিকে 

নষ্ট করতে

সেইসব শিশুরা এইসব গানও

গেয়ে যাচ্ছে ঈশ্বরের সামনে


গোলাপ


গোলাপটির হৃদয়ের ভেতর যে সম্পদ লুকিয়ে আছে

তা তো তোমার হৃদয়েও বাস করে।

ছড়িয়ে দাও এইসব সম্পদসামগ্রী যেভাবে গোলাপটি মেলে ধরে

দেখবে তোমার সমস্ত দুঃখ তখনই তার হয়ে গেছে।


কোন এক গানের ভেতর এটিকে ছড়িয়ে দাও

কিংবা কোন তীব্র প্রেমের বাসনার ভেতর।

শুধু গোলাপটিকে আটকে দিও না

দেখো যেন আটকাতে গিয়ে নিজেকেই না পুড়িয়ে ফেলো শেষে।

---------------------------------------------------------

গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল (১৮৮৯–১৯৫৭)। আসল নাম: লুসিলা দে মারিয়া দেল পেরপেতুও সোকোরো গোদোয় আলকায়াগা। তিনি ছিলেন একজন কবি, কূটনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও নারীবাদী কর্মী। ১৯৪৫ সালে প্রথম লাতিন আমেরিকান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল। গ্যাব্রিয়েলা ছিলেন বাস্ক ও আমেরিন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত। দক্ষিণ আমেরিকার কবিতায় আধুনিকতার সূচনা যাদের হাতে, তাদের অন্যতম তিনি। ১৯১৪ সালে Sonetos de la Muerte বা মৃত্যুর সনেট বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই খ্যাতিলাভ করেন। কৈশোরে পাবলো নেরুদা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন এই নারীর কবিতা থেকে।