Sunday, August 23, 2020

গাব্রিয়েলা মিস্ত্রালের কবিতা



অনুবাদ: সুজিত মান্না

খুদে পা


এক শিশুর খুদে পা,

নীল, যেন ঈশ্বর প্রেরিত নীল,

কীভাবে তারা দেখেও তোমায় রক্ষা করার কথা ভাববে না?

হে ঈশ্বর!


খুদে আঘাতপ্রাপ্ত পা,

আহত করে গেছে নুড়ি পাথরেরা

ক্ষতির চিহ্ন রেখে গেছে বরফ এবং মাটি!


মানুষ, অন্ধ হয়ে আছে, উপেক্ষা করছে তোমায়

আর তুমি পা ফেলছো, রেখে যাচ্ছ উজ্জ্বল ফুলেদের,

তুমি যেখানে রেখে যাচ্ছ ক্ষতদাগের পদচিহ্ন

সেখানে বেড়ে উঠছে তীব্র গন্ধের কোন রজনীগন্ধা।


এরপরেও রাস্তা বরাবর একই সরলরেখায়

হেঁটে যাচ্ছ তুমি,

আমি বলিঃ তুমি সাহসী, ভয়ডরহীন


শিশুর খুদে পা,

যন্ত্রণায় কষ্ট পাওয়া দুটো মণি,

কীভাবে মানুষ না দেখার ভান করে শুধু উপেক্ষা করে হেঁটে চলে যায়


ধর্ম


আমি আমার হৃদয় দিয়ে বিশ্বাস করি 

আহত হৃদয় ঈশ্বরের ভেতর ডুবে যেতে যেতে গান গেয়ে ওঠে

জীবিত পুষ্করিণী থেকে ক্রমশ উঠে যায়

ঠিক যেন কোন সদ্যজাত


আমি আমার হ্রদয় দিয়ে বিশ্বাস করি যা আমি নিজের থেকে নিংড়ে নিই

লাল পাণ্ডুবর্ণের রং দিয়ে 

জীবনের ক্যানভাসকে আলোকিত করতে

ঝলমলে পোশাকের ভেতর এটাকে আচ্ছাদন করে নিই


তিনি তো এক জ্যোতির্ময়ী-কর্তা


নিরর্থক তুমি চেষ্টা করছো 

আমার গানকে শ্বাসরুদ্ধ করতে

লক্ষ লক্ষ শিশুরা

একসুরে এই গান গেয়ে যাচ্ছে

সূর্যের নিচে


নিরর্থক তুমি চেষ্টা করছো

আমার দুঃখের কবিতাগুলিকে 

নষ্ট করতে

সেইসব শিশুরা এইসব গানও

গেয়ে যাচ্ছে ঈশ্বরের সামনে


গোলাপ


গোলাপটির হৃদয়ের ভেতর যে সম্পদ লুকিয়ে আছে

তা তো তোমার হৃদয়েও বাস করে।

ছড়িয়ে দাও এইসব সম্পদসামগ্রী যেভাবে গোলাপটি মেলে ধরে

দেখবে তোমার সমস্ত দুঃখ তখনই তার হয়ে গেছে।


কোন এক গানের ভেতর এটিকে ছড়িয়ে দাও

কিংবা কোন তীব্র প্রেমের বাসনার ভেতর।

শুধু গোলাপটিকে আটকে দিও না

দেখো যেন আটকাতে গিয়ে নিজেকেই না পুড়িয়ে ফেলো শেষে।

---------------------------------------------------------

গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল (১৮৮৯–১৯৫৭)। আসল নাম: লুসিলা দে মারিয়া দেল পেরপেতুও সোকোরো গোদোয় আলকায়াগা। তিনি ছিলেন একজন কবি, কূটনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও নারীবাদী কর্মী। ১৯৪৫ সালে প্রথম লাতিন আমেরিকান হিসেবে সাহিত্যে নোবেল। গ্যাব্রিয়েলা ছিলেন বাস্ক ও আমেরিন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত। দক্ষিণ আমেরিকার কবিতায় আধুনিকতার সূচনা যাদের হাতে, তাদের অন্যতম তিনি। ১৯১৪ সালে Sonetos de la Muerte বা মৃত্যুর সনেট বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই খ্যাতিলাভ করেন। কৈশোরে পাবলো নেরুদা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন এই নারীর কবিতা থেকে।

No comments:

Post a Comment