Monday, November 23, 2020

নির্মল হালদারের গদ্য


পানিপাথর

ওষুধত লাগবেকেই--

পকা লাগে। ওষুধ দিতেই হবেক।


পীযুষের কথা শুনে চেয়ে আছি লকলকে বাঁধা কপি ফুল কপির দিকে।

পালং শাকের জমিতে ফড়িং

উড়ছে। 

আকাশেও মেঘ। এই হেমন্ত দিনে বৃষ্টি হলে পাকা ধানের ক্ষতি। 

প্রকৃতির সঙ্গে কে কবে আর পেরে উঠেছে! বৃষ্টি এলে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা মানব জগতের নেই।


পীযূষরা প্রকৃতির সঙ্গে থেকেও প্রকৃতিকে সব সময় বুঝে উঠতে পারে না। মাটিকেও বোঝে না। যে মাটিতে লাগিয়েছিল বেগুন

দেখা গেল গাছগুলো বেড়ে উঠতে উঠতে মরে যাচ্ছে। কি কারণ?

পরীক্ষা করাতে হবে মাটি। প্রভাস জানালো আমাদের।

ব্লকে কৃষি বিভাগের একটি শাখা আছে। সেইখানে মাটি নিয়ে গেলে, পরীক্ষা করে দেবে। তারপর বলেও দেবে,

এই মাটিতে কি হবে কি হবে না।


মুশকিল হল, এই তথ্য অনেক চাষি জানে না। অনেক সময় তো তাই, চাষ করে ও নষ্ট হয় বীজ। শ্রম ও টাকা জলে চলে যায়।


আমি এসেছি। চাষী ঘরে এসেছি। আমি যদিও এখানে খুব বেমানান পোশাকে আশাকে। কথাবার্তায়। আচরণে। তবুও এসেছি। কেননা, এইসব চাষীদের ঘরে

প্রাণের সম্ভার। সতেজ সজীব

প্রাণ।

কি পরিশ্রমটা করে এরা, না দেখলে না জানলে বোঝা যাবে না।

পীযূষ বিএসসি পাশ করে চাকরির পড়াশোনার ফাঁকে

বাপ ঠাকুরদার চাষবাসেও 

তার মন।


সাধারণত আজকাল দেখা যাচ্ছে, মাহাতদের অনেক তরুণ পড়াশোনা করে চাষের দিকে আর যায় না। ফলে, বাপ ঠাকুদ্দার চিন্তা হয়, তাদের অবর্তমানে চাষবাস আর হবেনা। আকাল দেখা যাবে।

ক্রমশ সংখ্যাটা বাড়লে, ভবিষ্যতে চাষবাস আর হবেই না, এই উদ্বেগ কাজ করে।


পীযূষ চাকরির পরীক্ষার জন্য অংক যেমন জানে তেমনি পালং পাতায় পোকা লাগলে 

দেখতে পায়। প্রতিকার করেও থাকে।


আমাকে ঘরের শাকসবজি দেবে বলে, নিয়ে এলো হাঁসুয়া।

একটার পর একটা ফুলকপি

বাঁধা কপি কাটতে থাকে।


আমার চোখে পড়ে টমেটো ক্ষেত। নীল লাল রঙে নিজেদের সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।


কাছে যাবার সাহস মানে, জোর করে কাছে যাবো। কিন্তু গেলাম না। পীযূষকেই বললাম, কয়েকটা টমেটো দিস।


আমাদের ঘরে টমেটো পোড়ানা হয়ে থাকে। সঙ্গে নুন

কাঁচা লঙ্কা পেঁয়াজ। ভাতের সঙ্গে খুব সুস্বাদু।


রাঁধনাশাল থেকে মাছ ভাজার গন্ধ আসছে। তুষারের ন মাসের গর্ভবতী বউ ভাজছে।

 মাছ ভাজার গন্ধে খিদে চাগিয়ে উঠলেও মনে মনে স্থির করেছি, খাব না। ভাত খেয়ে আবার যাওয়া, বেশ ক্লান্তিকর। অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে।


তুষার ও পীযূষ এবং তাদের বাবাকে বললাম, খাওয়াটা বড় কথা নয়। এই যে আমি এসেছি, সবাই কথা বলছি। এইতো ঢের।


সকলের আন্তরিকতা টের পাচ্ছি ভেতরে ভেতরে, এই কথা বললাম না আর। শুধু বলবো, গ্রামের নাম পানিপাথর পরাবাস্তব পরাবাস্তব লাগলেও  পানিপাথর খুবই বাস্তব। খুব জ্যান্ত।


এই জ্যান্তর পাশেই আমিও

জ্যান্ত থাকতে চাই। আসতে চাই সময়ে অসময়ে।


আমার বন্ধু প্রভাস মাহাতর শ্বশুরবাড়ি হলেও আমার আত্মীয় বাড়ি তো বটেই। যেখানে আমি শুনতে পেয়েছি, ন'মাসের গর্ভ থেকে

এক সন্তান আমাকে বলছে,

আবার আসবে-- আসবে।


৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৭

২১-১১-২০২০


রচনা করেছি শয্যা


আমি বরাবর মেঝেতে শুই। মেঝেতেই আমার লম্বা-চওড়া বিছানা। এবং আমি বিছানার একধারে শুয়ে থাকি।

          বিছানাতে গড়াগড়ি খাওয়া আমার অভ্যেস নেই। আমার বালিশ থেকে অনেকটা তফাতে আরেকটা বালিশ। কোনো মানে নেই। অথচ মানে আছে। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে যদি দেখি, কেউ শুয়ে আছে।

           আমার মনের বুনন এ রকমই। শুয়ে থাকবে যে তার ঘুম ভাঙ্গিয়ে তাকে নিয়ে চলে যাব ছাদে। উপর থেকেই তো উপরে ওঠা যায়। কি পূর্ণিমা কি অমাবস্যা

চাঁদ আমাকে ডাকে। 

           চাঁদ না বলে বলা ভালো চাঁদের বুড়ি।অনন্তকালের সম্পর্ক। চাঁদের বুড়ি চরকা চালায়। তার সুতো এত সূক্ষ্ম ও সুন্দর কোনোদিন ছিঁড়বে না।

            সম্পর্ক ছিঁড়বে না।

            কে আসবে বিছানায়? মাঝ রাতে তাকে ডেকে তুলবো? যে কেউ এলে চলবে না। বিশেষ বিশেষ মানুষ আছে আমার তালিকায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এলে, রাতভর বৃষ্টি। বৃষ্টির রঙ কি হবে? এও চিন্তার বিষয়। নীল হলে কেমন হয়? মেরুন রঙটা কেমন লাগে? রঙের দিকে না গিয়ে প্রেমের দিকে যেতে চাই।

প্রেমের গভীরতা মাপামাপি না করে, শুধু দেখবো প্রেমের আকর্ষণ কতদূর। 

             শুধু প্রেমে আমার বিশ্বাস নেই। কুল গাছে উঠবো আর পায়ে কাঁটা বিঁধবে না, তাহলে কুল আর পাড়লাম কই? রক্তাক্ত হতেই হবে।

             যখন কেউ আটা মাখছে তখন তার আঙ্গুলে ভেজা আটা লাগবেই। তবেই তো রুটি হবে সুস্বাদু। গরম গরম।

             না, আমার বিছানায় উষ্ণতা নেই। খড়ের বিছানায় শুতে পারলে উষ্ণতা পেতাম। একা শুলেও উষ্ণতা। কেন না, খড়ের অন্তর্নিহিত অর্থ , মায়ের ফেলে যাওয়া একটা অংশ। কেউ কেউ চুল বলে থাকে। তাই, খড় থেকে মায়ের ওম পাওয়া যায়।

             আমি কোনো ভাবেই চওড়া কপাল করে আসিনি। আমাকে বিছানা পাততেই হয়। বিছানা তুলতে হয়। সকাল হলেই যখন তুলছি তখন লক্ষ্য করি, কারোর কিছু পড়ে আছে নাকি। এই ভাবনা যে কত অবান্তর, নিজের কাছেই নিজে হেসে ফেলি। নীরব।

            বিছানা একাকীর নয়। অথবা বিছানা একাকীর। নিঃশব্দ। অনেকেই আছেন বিশেষ করে গ্রামের দিকে একা একা শুয়েও পাশে রাখেন একটা লাঠি। চোর তাড়ানোর জন্য। আমারও যে চোরের ভয় নেই এমনটা নয়। কিন্তু লাঠি রাখার কথা কোনোদিন ভাবি নাই। ঘুমের ঘোরে লাঠিতে পা পড়লে, যদি ভয় পাই? চেঁচিয়ে উঠি? হেসে উঠবে লাঠিও। মেনে নিতেই হয়েছে, নিজেরই দোষে একা একা বিছানায় আঁকিবুকি করবো।

              আমার লম্বা-চওড়া বিছানা দেখে কেউ কেউ জানতে চেয়েছে, এত বড় বিছানায় আর কে শোয়?আমি নিজেই যে ১ থেকে ১০০ হয়ে যাই, ক'জনকে আর বলবো। কিংবা আমি যে ১ থেকে শূন্য হয়ে যাই, বলতে চাই না কাউকে।

             সন্ধে হয়ে গেছে। আমি প্রতিদিনের মতো বিছানা পেতেছি। চারপাশে অসংখ্য চরিত্র আমার সঙ্গে কথা বলছে। সারাদিন পর ক্লান্ত লাগছে আমার। কিন্তু ক্লান্তিকে গ্রাহ্য করলে কিছুই যে করা যাবে না। আমার অনেক কাজ। অনেক কাজ বাকি আছে এখনো।


৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৭

২২-১১-২০২০

আলোকচিত্র: সন্দীপ কুমার

Saturday, November 21, 2020

অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের কবিতা


গুঁড়িপথ

এখানে সুপ্তিহীন নুড়িবিজড়িত এই ফাঁকা অন্তরীপে
অসত্য নেমপ্লেটে ওরা এসেছিল ভুয়ো জিপে...

দীপদা সন্ধেবেলা নীপাদির রাংতার টিপে
নিজেকেই দেখেছিল চন্দ্রাহত, আর
জ্যোৎস্না এসে জলে পড়ে
ছায়া হয়ে ঘিরে গেল তার,
অন্য ব-দ্বীপে!

কানাকানি বয়ে চলে
পাপড়ির সিড়ি ভেঙে, সারারাত
কালো টিউলিপে...

সঞ্চার

মাছির মতন ঘরে ঢোকে
অনাহুত, ফাঁকা এক বসন্তবাতাস,
আমি তাকে বহুদূর চলে যেতে বলি...

যেখানে চন্দ্রচোর দাগী কানাগলি
কোনও দিন হতে পারে তারার আকাশ...

Wednesday, November 11, 2020

পাপ ও শাস্তি: পুনরাবলোকন


সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়: 
দূরে কাছে, কেবলই ঘর ভাঙে। ঈশ্বরের বিকল্প হয়ে মানুষ পাপ করে আর সেই রক্তধারা বয়ে গেলে সময় সন্দিগ্ধ স্বরে প্রশ্ন করেছি: 'নদী, নির্ঝরের থেকে নেমে এসেছো কি, মানুষের হৃদয়ের থেকে?’ আমি একটি উপন্যাস নিয়ে ভাবছিলাম। অনেকদিন পর সে লেখাটিকে আবার পড়া হল ব্যোমকেশ আর ফেলুদার কোলাহল ও কিচিরমিচিরের মাঝে। কি আশ্চর্য! আজ থেকে দেড়শ বছরেরও আগে প্রকাশিত হয় দস্তয়েভস্কির ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট। ১৮৬৬ সাল জুড়ে বারো কিস্তিতে লেখাটি ছাপা হয় পত্রিকার পাতায়। যে রুশ ছাত্রটি নেপোলিয়নের তরুণ দূত হিসেবে নিজেকে ভেবে একটি খুন করে, সে স্বছন্দে একটি গোয়েন্দা গল্পের জন্ম দিতে পারত। খুনের কাহিনী এত চমৎকার যে চিত্রনাট্যকেও হার মানায়। কোনও সাক্ষ্য প্রমাণও ছিল না। তবু তরুণ রাসকলনিকভ কোনও সত্যান্বেষীর দ্বারা চিহ্নিত হয়নি বরং বিবেকের বোঝা বয়ে নিজেই সত্যান্বেষণ করে গেছে।

কি রুক্ষ, বন্ধুর, আর করুণ রঙিন পথে যে দস্তয়েভস্কি হেঁটেছিলেন! দ্যূতক্রীড়ায় সর্বস্ব হারিয়ে কুরু রাজসভায় যেমন যুধিষ্ঠির শেষ পর্যন্ত সত্যকেই পণ করেছিলেন, জুয়ার টেবিলে সর্বহারা দস্তয়েভস্কিরও কোনও বিকল্প ছিল না সত্যকে খুঁজে না পাওয়ার। এই উপন্যাস কোনও আখ্যান নয়, মানুষের পাপ-পুণ্য, চরম তীর্থযাত্রার একটি নিশ্চিত দলিল। শুধু গল্প লেখাই যদি দস্তয়েভস্কির উদ্দেশ্য হত তাহলে রচিত হতে পারত এক মনোরম চিত্রনাট্য। যেখানে মতাদর্শের নেশায় এক উন্মাদ যুবক পাপবিদ্ধ একটি কিশোরীকে অবলম্বন করে দুনিয়ার পাঠশালায় পড়তে যেতে চায়। এই চিত্রনাট্য সত্যি অনুনকরনীয়। কাহিনীতে বুদ্ধিজীবী মাতাল, স্নেহাতুর পিতা, নিরাসক্ত পুলিশ অফিসার ও দলিত কুসুমের মতো নারীকে দেখতে পাওয়া যায়। আধুনিক কোনও সিনেমার পক্ষে চূড়ান্ত আকর্ষণীয় এক চিত্রনাট্য। তবু যখন ত্রুফো হলিউডের সম্রাট হিচকককে ক্রাইম সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করেন তখন হিচকক সবিনয়ে মেনে নেন তাঁর অসামর্থ্যের কথা। কেননা হিচকক বুঝেছিলেন যে, এই গল্প আসলে সংস্কৃতির ধর্মশাস্ত্র। রাসকলনিকভকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বাইরে থেকে আইনের কোনও প্রতিমূর্তি যেমন ডিটেকটিভ নিয়োগ করতে যায় না। রাসকলনিকভের সমস্যা মূলত নৈতিকতার, সে বিবেককে নির্বাসনে পাঠিয়েছে তা-ই সে একা, পরিত্যক্ত, যন্ত্রণাবিধুর। তাঁর শাস্তি যতটা অন্তরের ততটা আদালত ঘোষিত নয়। লোভ ও ক্ষমতা নিজেই নিজেকে যুগপৎ শিকার ও শিকারি ভাবতে পারে।

দার্শনিক এই মলাটটুকু বাদ দিলে অনেক সময়ই মনে হয় কাহিনীর ছিলা টান টান বুননই তো যথেষ্ট। উপসংহারের কোনও প্রয়োজনই নেই। অথচ আজ কখনও ধর্ম কখনও রাজনীতি বা অন্য কোনও যৌথ মতাদর্শের সামনে ভীত আতঙ্কিত মানুষকে দেখলে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা যায় প্রতিষ্ঠানের দ্বারা সে ক্রমাগত বন্দি হয়ে প্রাণহীন সত্তায় পর্যবসিত হয়েছে। মৃত্যুলোক থেকে তাঁর প্রত্যাবর্তিত হওয়া জরুরি।

কি বিধুর সেই অপরাহ্ণ যখন সনিয়া একটি সামান্য দেহ পসারিণী ও রাসকলনিকভ, একজন খুনি, বাইবেল থেকে নবকেস্টামেন্ট থেকে লাজারাসের গল্প পড়ে। যেন প্রতীচ্যের নচিকেতা যমলোক থেকে পুনরায় ইহজগতে নিষ্কলুষ ফিরে আসবে। ওই কিশোরীর শীর্ণ হাতে নিজের রক্তাক্ত হাত রেখে রাসকলনিকভ ভেবেছিল—’ যদি হায় জীবন পূরণ নাই হল মম তব অকৃপণ করে!’ নাহলে আর সে সনিয়ার মতো তুচ্ছ পতিতার পায়ের তলায় আছড়ে পড়ে বলবে কেন I prostrate myself not beofre you, but before all suffering humanity. রাসকলনিকভ তরুণ ছাত্র– সে নেপোলিয়ান হতে চেয়েছিল। তাঁর ধারণা ছিল সম্রাটের কোনও বাধন থাকে না, ক্ষমতা যে কোনও গণহত্যাকেও অনুমোদন দেয়। আর সে তো পাপিষ্ঠা এক সুদখোর মহিলাকে খুন করতে চাইছে সমাজের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য। আর এই রাস্কলনিকভকে কত দেখা যায় সন্ত্রাসবাদে, জেহাদ, যুদ্ধে, আমরা ছোটবেলার ছাত্র আন্দোলনে এই খতমের রাজনীতি যে কতবার দেখলাম!

তবে কি দস্তয়েভস্কি বলতে চাইছিলেন আমরা অন্তিম মূল্য পেতে চাই প্রেমে? জানি না। কিন্তু ভাগ্যিস অপরাধ ও শাস্তির মতো মহাগ্রন্থ লেখা হয়েছিল। তাই দেড়শ বছর বাদেও দেখি হৃদয় অব্দি যায়নি ছুরি, থমকে আছে। সত্যের জ্যোৎস্না পাপের ডালপালার ফোকর দিয়ে মানুষের হৃদয়ে প্রবেশ করে এঁকে দিয়েছে পুণ্যের কারুকাজ। অপরাধ ও শাস্তি আবার পড়ে মনে হল মাটির ধুলোবালি অশ্রু আর রক্ত ব্যবহার করে দস্তয়ভস্কি আমাদের বেঁচে থাকার গোঁড়ায় জল ছিটিয়ে দিয়েছেন।

---------------------------------------------------------

সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্রবিদ্যার অধ্যাপক ছিলেন। তাঁর কয়েকটি বইয়ের নাম: স্থানাঙ্ক নির্ণয়, অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন, নাশকতার দেবদূত, হে চলমান চিত্রমালা, অন্যান্য ও ঋত্বিকতন্ত্র, পাতালের চিরকুট, বুনো স্ট্রবেরি, ইবলিশের আত্মদর্শন সম্পর্কিত, অনভিজাতদের জন্য অপেরা, দিনযাপনের উপাখ্যান। সম্পাদনা করেছেন কবি অনন্য রায়ের কবিতা সমগ্র। তাঁর অনুবাদগ্রন্থ: মাস্কুলা ফেমিনা, অরফি (জঁ ককতো), সাইলেন্স (ইঙ্গমার বার্গম্যান), পিয়েরো ল্যো ফু (জঁ লুক গোদার)। আজ ফিওদোর দস্তয়েভস্কির জন্মদিন উপলক্ষ্যে লেখাটি প্রকাশ করা হল।

Thursday, November 5, 2020

দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা


নিরন্ত হিংস্রতার রক্ত-- পুঞ্জ করা ফুলপত্রালির


নিরন্ত হিংস্রতার রক্ত-- পুঞ্জ করা ফুলপত্রালির 

লাবণ্যে ঘেরা দেয়া, রক্ত ফুটে না বেরোয়। সবুজের

ধক বাড়ছে ক্রমাগত, তেজ হয়ে উঠছে ফুলবাস--

নিরন্ত রক্ত কি চাপা পড়তে চায়? এত সংখ্যাহীন 

হিংস্রতা চারধারে, কত ফুলপাতায় চাপা দেবে তাকে?

শত অস্ত্র বেয়ে রক্ত যুঁজিয়ে পড়ছে সারাক্ষণ

বনোচ্ছেদ উৎসবের তালে তাল দিয়ে মাতোয়ারা।

ছোট একটা এলাকার সবুজ সুবাসের ঘোরে ঘোরে

ভাবছি তার লাবণ্যে বুঝি চাপা পড়তে চলেছে উগ্রতা!

ভাবছি হিংস্রতা ব্যর্থ হয়ে যাবে স্বভাবশান্তির

আলো লেগে! কিন্তু রূঢ় মেশিন বাস্তব দিনে দিনে

যেভাবে বাড়ছে ক্ষীণ সবুজও যে পুড়ে ছাই হয়ে গেল!

তাও সব ভুলে যাই তৃতীয়ার চকিত এককলা

সোনার চাঁদটার দিকে চোখ প'ড়ে গেলে সন্ধ্যাবেলা।


চলতে চলতে রাস্তা যেন লাফিয়ে উঠল ফ্লাইওভারে


চলতে চলতে রাস্তা যেন লাফিয়ে উঠল ফ্লাইওভারে--

পাঁচটা সাতটা কাটাকুটি দ্রুত পথ উপর তলায়

উড়াল দিয়েছে আকাশফুল পেড়ে আনবে ব'লে। দুধারি

বড়ো বড়ো হাসিমুখ হোর্ডিংয়ে বেজে চলছে মিডিয়া

যত দূর পথ যেন স্বচ্ছ আকাশের মধ্য দিয়ে...

মুক্ত পথ-- ভাইরাস উড়ছে না অমঙ্গল ডানা মেলে।

তাও থেকে থেকে আরো উড়াল দিয়ে উঠছে ফ্লাইওভার--

কুছোঁয়া না লাগে যেন তলাকার, যদিও তলাতে গিয়ে ফের

পড়তে হবে শহররাস্তায়, অনুপায়ে চলে যেতে হবে

রুগ্ন জনতার ঘেঁষাঘেঁষি... তবু চলতে চলতে

বারেবারে লাফিয়ে উঠছে পাঁচটা সাতটা উপর তলার

ফ্লাইওভার যেন স্বচ্ছ আকাশের মাঝ দিয়ে তার পথ।

দুধারি হোর্ডিংয়ে বেজে চলেছে মিডিয়া উচ্চগ্রামে--

রঙদার কথার তোড়ে আবছায়া হয়ে গেছে প্যান্ডেমিক..