অনুবাদ: অরিত্র সান্যাল
পায়ের শব্দ পেয়ে তাকাতেই দেখা গেল একটা লোক ডিশ নিয়ে খালের ধার ধরে নেমে যাচ্ছে।
তিন মাইল দূর টাউনের এক দোকানদার আমায় বলেছিল, “ও কোনওদিন কথা কয় না। দু-এক জন ‘হ্যালো’-ট্যালো বলতে শুনেছে বটে। কিন্তু বাদবাকি কাজকম্মো লোকটা শুধু মাথা নেড়েই চালিয়ে দেয়”।
“কেন? কিছু গোলমাল আছে নাকি?” শুধিয়েছিলাম।
“না না। চাইলে কথা বলতে পারে। এখন ওর নামই হয়ে গেছে সাইলেন্ট জো”।
যেখানে এসে খাল একটু প্রশস্ত হয়ে গিয়েছে, লোকটা উবু হয়ে সেখানে বসে। হাতায় করে জল তুলে ডিশে দেয়। তারপর উঠে এসে ঝুঁকে পড়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডিশ থেকে ময়লা ধুতে থাকে।
আমি ক্রাচদুটো তুলে নিই মাটি থেকে। টুক টুক লাফিয়ে নুড়ি পাথর পেরিয়ে খালের ধারে লোকটার ঠিক উল্টোদিকে এসে দাঁড়ালাম। “গুড ডে” বলে শুভেচ্ছা ছুঁড়ে দিই, “চমৎকার দিন”।
মাথা তুলে তাকায় সে। ঘোলাটে দুই চোখ, সবুজ ঘোলাটে। গুল্মের ঝোপে ঝাড়ে যে সবুজ দেখা যায়, সেই সবুজ। দৃষ্টিতে কোনও কষাটে বিদ্বেষ নেই, কিছু যেন খুঁজছে।
ঠিক যেভাবে খুব সহজেই বলে দেওয়া যায়, “হ্যাঁ”, সেইভাবে চোখদুটোয় হঠাৎ অভিব্যক্তি বদলে গেল।
আমি বসে বসে ওকে দেখতে থাকি। খালের পরিষ্কার জলে ময়লা ঢেলে দেয় লোকটা।
ঘন হয়ে নেমে সে ময়লা ছুঁয়ে ফেলতে থাকে খালের তলার বালি, কিছুটা বেঁকে-চুড়ে, ঘূর্ণি করে জলের টানের জটিলতায় পাক খেতে থাকে যতক্ষণ না পাতলা মেঘের অবস্থায় মিশে যায়, তারপর স্রোতের সঙ্গে বয়ে যায়।
ও বাকি সব বাসন বারবার ধুয়ে নিচ্ছিল।
আমি খাল পেরিয়ে কাছে চলে গেলাম।
“কিছু পেলেন?”
আমার দিকে ডিশ তুলে ধরে লোকটা। ডিশের ধারের দিকে বালির আস্তরণ, তার মধ্যে তিন দানা সোনা চকচক করছে।
“তাহলে এই হল সোনা” আমি বলি, “তিন দানা, এহ! দুনিয়ার অর্ধেক গণ্ডগোল তো এইরকম কয়েকটা দানার জন্যই শুরু হয়”।
লোকটা স্মিত হেসে উঠল। অনেকক্ষণ ধরে গড়ে ওঠা এক হাসি। ধীরে ধীরে ওর মুখ বেয়ে উঠে এল, কেন জানি না আমি দেখলাম একটা উড়ন্ত বকের ছবি, এই তার ডানা ছিল, আর এই হাপিশ।
বড় সহৃদয়তা নিয়ে আমার দিকে তাকায় লোকটা। আর এক মুহূর্তের জন্য আমি দেখতে পেলাম সেই লতাগুল্মময় ঝোপটাকে, খুব দূর থেকে করুণার মতো নয়, বরং যেন ডাকছে, বন্ধুর মতো। লোকটা খুব গাছেদের মতো, গাছেরা ওর মধ্যে দিয়ে কথা বলে।
আমার মনে হল এই মানুষটাকে বুঝতে পারলে, আমি একটা গুল্মলতাকে বুঝতে পারব।
কিন্তু আবার ও মুখ ফিরিয়ে নেয়, আঠার মতো, আবার দূরের কেউ হয়ে সরে যায়, সরে যায় সংযোগ থেকে নিজের নৈশব্দ দিয়ে। এই নৈশব্দ শব্দহীনতার নয়, বরং গাছেদের সরব নীরবতার।
বললাম, “আমি আপনার সঙ্গে আসছি”।
আমরা পাশাপাশি হাঁটছিলাম। আমার চলার সুবিধের জন্য ও খুব খুঁটিয়ে দেখে নিচ্ছিলো রাস্তা। পা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছিল ডাল, পথিমধ্যস্থ যে ডাল পালাময় বাধা পাহাড়তলি অব্দি ছড়িয়ে আছে, তাকে দু'হাতে ভেঙে ভেঙে এগিয়ে চলেছিল লোকটা।
আমরা ঘন বনে প্রবেশ করলাম। সূর্যের আলো ডালপালার ছাঁদনা ফুঁড়ে নেমে এসে আমাদের ঘাড়ের ওপর পাতার নক্সি ফুটিয়ে তুলছিল। একটা শীতল, পাতার-ছাঁচে ফেলা পৃথিবীর নিঃশ্বাস উঠে আসছিল পদচিহ্নের শৈবাল থেকে। এরমধ্যেই রাস্তা হঠাৎ খানিকটা ক্ষয়ে একটা ছোট্ট মুক্তাঞ্চলের সামনে শেষ হল।
পাতলা ঘাসের স্তর অসহায় ভাবে গাছেদের ব্যুহের মধ্যে পড়ে তিরতির কেঁপে চলেছে।
এই এলাকার ঠিক কেন্দ্রে হলুদ মাটির একটা ঢিবি উঠেছে একটা খাড়া তক্তার ধার ঘেঁষে। ঢিবির ওপর একটা চরকি সম্পূর্ণ ফাঁকা জায়গাটা জুড়ে রেখেছে।
লোহার একটা শক্তপোক্ত ভারি বালতি রোলার থেকে ঝুলছে।
“তা এই আপনার খনি!”
চরকির দিকে তাকিয়ে লোকটা দিলখুশ মুখ করে মাথা নাড়ল।
ঢিবির চুড়োয় উঠে অন্ধকারে উঁকি মারি আমি। ভিতর থেকে একটা স্যাঁতস্যাঁতে পাথরের, মাটির ঠান্ডা হাওয়া ধাক্কা মারে আমার মুখে। একটা ছোট্ট পাথর ঠেলে দিই। মুহূর্তে অদৃশ্য, সময়ের সরু অন্ধকার রেখার মধ্যে দিয়ে দ্রুত নেমে গিয়ে মাটির কোনও গভীরে পৌঁছে পতনশব্দে বেজে ওঠে।
“উরিব্বাস, এ তো ভালো গভীর!”
আমার পাশে ও দাঁড়িয়েছিল, মনে হল আমার বিস্ময়ে বেশ সন্তুষ্ট হয়েছে।
“এই মই দিয়ে আপনি নিচে যান?” চারা কেটে বানানো এক মই সামনের তক্তায় হেলানো ছিল, আমি হাত দিয়ে দেখালাম।
লোকটা মাথা নেড়ে জানায় “হ্যাঁ”।
এই মই বেয়ে কীভাবে নামা যায় ভাবতে ভাবতেই আমি বিড়বিড় করে বলে উঠি, “আমি মই চড়তে পারি, কিন্তু এটা পারবো না”।
প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে সে আমার দিকে ঘুরে তাকায়, মুখে সমবেদনার ছায়া পড়ছে।
“ছেলেবেলার অসুবিধে,” আমি বললাম, “মাঝেমধ্যে জ্বালাতন করে। ওই বালতি করে কি আমায় নামিয়ে দিতে পারবেন? যেখান থেকে সোনা পান, সে জায়গাটা দেখতে চাই”।
আমি ভেবেছিলাম লোকটা স্রেফ “না” করে দেবে। সেটাই স্বাভাবিক। বিপদ আশংকা করে ঘন ঘন মাথা নাড়বে, ভেবেছিলুম।
কিন্তু কোনও দ্বিধা নেই। তক্তার ওপাশে গিয়ে বালতি টেনে আনল লোকটা। মাটিতে ক্রাচ রেখে আমি চড়ে বসি দুদিকে পা ঝুলিয়ে, দু'হাঁটুর ফাঁকে থাকল হাতল। দড়ি ভালো করে আঁকড়ে ধরে বললাম, “ঠিক ঠাক। আপনি মই বেয়ে আসছেন তো?”
মাথা সম্মতিতে ঝুঁকিয়ে ও বালতির হাতল ধরল। টেনে তুলতেই আমি ঝুলতে লাগলাম তক্তার ওপর। বালতিটা পাক খেতে খেতে থেমে আবার উল্টোদিকে ঘুরতে শুরু করে। চরকিটা ধরে তার ঠেকনাটা সরিয়ে দেয় লোকটা। চাপের মুখে ওর হাত দু'টোকে দেখি। শক্ত দুই বাহু ধীরে ধীরে স্টিয়ারিয়ের মতো ঘুরছিল। আমি ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে ডুবে গেলাম। এখানে শুধুই ব্যাঙের গন্ধ।
আমার হঠাৎ মনে হল, “খেয়ে দেয়ে কাজ নেই, মরতে আমি এখানে এলাম কেন? বড্ড বোকার মতো কাজ হয়ে গেল”।
বালতি আস্তে বেঁকে যায়। দেওয়ালের গায়ে খোঁচে উঠে থাকা পাথরের ঘূর্ণ-বিন্যাস আর পলির স্তর আমার চোখের সামনে উঠে আসতে থাকে। একদিকে ধাক্কা খেলাম। ধীরে ধীরে একটা বাঁকে এসে ওপরের খোলামুখটা অদৃশ্য হয়ে এল। আমি একা।
এক ধারে ঘেঁষে বসলাম, পাথরের ঘষা থেকে পাদুটোকে বাঁচাতে। বালতিটা ঘষা খেয়ে নেমে গেল, তার সঙ্গে একরাশ কাদা।
আমার ওপর চেপে বসে ভারি অন্ধকার। আমি একেবারে নীচে পৌঁছে গিয়েছি। বালতি থেকে পিছলে বেরিয়ে আমি বালতিটার পাশে গিয়ে বসি।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি মইয়ের আওয়াজ পেলাম। ময়লা আর নুড়ি টুপটাপ এখানে পড়ছে। অন্ধকারে আমি বুঝতে পারলাম কেউ আমার কাছে আসছে। আর তখনই ফস করে একটা দেশলাই, মোমবাতি জ্বালালো লোকটা। একটা হলুদ ফলার মতো শিখা জ্বলে উঠল তার মুখের দিকে, তারপর আবার থিতিয়ে গেল নুয়ে থাকা সলতেতে। লোকটা দু'হাতে সেই শিখাকে আগলে রাখে যতক্ষণ না মোম গলতে থাকে, আর ছায়ারা টানেলের দিকে সরে যায়। এখান থেকে টানেলের একটা শাখা দেখা যায়।
আমি বললাম, “আমি একটা আস্ত বোকা, ক্রাচদুটোই আনিনি”।
লোকটা আমাকে চিন্তামগ্নভাবে দেখতে থাকে। মোমবাতির ছায়া মুখের ওপর ফুরফুর উড়ে বেড়ায়, যেন মথ। একটা সিদ্ধান্তে এসে ওর অভিব্যক্তি স্থির হল। আর যেন কথা বলেছে, সেভাবেই আমি জবাব দিলাম ওর নীরব অভিলাষে।
“ধন্যবাদ, আমি খুব একটা ভারি নই”।
ঝুঁকে ও আমায় পিঠে তুলে নেয়। ওর ফেডেড নীল শার্টের নীচে কাঁধের পেশি সচল হয়ে উঠতে থাকে, আমি বুঝতে পারি।
মাথায় যাতে পাথরের ঠোক্কর না লাগে, তাই লোকটা প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে থাকে। প্রতি ধাপে আমি উঠছি আর নামছি।
অন্ধকার পরিষ্কার করতে করতে মোমবাতির আলো চলেছে আমাদের আগে আগে।
এই যাত্রার শেষে এসে ও আমায় মাটিতে নামায়।
মোমবাতি মুখের কাছে ধরে আমায় ও দেখায় একটা পাথরের ওপর একটা আড়াআড়ি ক্ষত।
“আচ্ছা! তাহলে ওইটা!” আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি।
আমি খুঁটে একটা টুকরো তোলার চেষ্টা করছিলাম। একটা ছোট্ট ঢেলা মাটি থেকে তুলে ও নালায় ঢুকিয়ে দেয়। আমি অল্প কয়েকটা টুকরো তুলে আলোয় দেখার চেষ্টা করলাম। আমার দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে লোকটা পাথরটা দেখার চেষ্টা করে, তারপর আমার হাত থেকে সেটা নিয়ে নেয়। জিভ দিয়ে চেটে মুচকি হেসে আবার আমার দিকে তুলে ধরে। বুড়ো আঙুল দিয়ে লোকটা দেখিয়েছিল, পাথরের উপরিতলে এক দানা সোনা লেগে আছে।
আমি তো আত্মহারা হয়ে গেলাম। হাজারও প্রশ্ন করতে থাকলাম।
হাত জড়ো করে ও চুপচাপ বসে থাকল। মাঝেমাঝে মাথা নাড়া, আর অভিব্যক্তির উজ্জ্বলতা। এইভাবেই যখন যা উত্তর আসতে থাকে।
এক সময় মোমবাতির আলো তিরতির কেঁপে ওঠে।
“এবার মনে হয় বেরিয়ে যাওয়াই ভাল” আমি বললাম।
উঠে আমায় ঘাড়ে তুলে লোকটা আবার এগিয়ে যায়। এবার আমি নিজের ঠ্যাং দুটো দড়িতে বেঁধে তারপর বালতিতে বসি। ডানপায়ে আমার কোনও বশ নেই, বাঁপায়ের সঙ্গে বাঁধা না থাকলে ডান পা এক দিকে ঝুলে যায়। আমি বালতির এক ধারে বসে চরকির দড়িটা চেপে ধরে থাকলাম। এখন অপেক্ষা। মোমবাতি হঠাৎ তার সবটুকু উজ্জ্বলতা উপচে দিয়ে তিরতির করতে করতে ফুরিয়ে গেল। আমি শুধু রুগ্ন মইটার শব্দ শুনতে পাচ্ছি এখন, তারপর কিছু না।
গোটা দুনিয়ায় একা আমিই বেঁচে আছি। অন্ধকারের একটা কালো কম্বলের মতো নক্সা আছে, কম্বলের মতো ওজন। এই নৈঃশব্দের মধ্যে কোনও সম্ভাবনা ছিল না। আমার মধ্যে থেকে সমস্ত সূর্যের আলো, সমস্ত গান বেরিয়ে গিয়েছে, আমি ঘন একটা ঘোরে বসে থাকলাম। পাখিদের পৃথিবী, হাসির পৃথিবী, গাছেদের পৃথিবী এখান থেকে নক্ষত্রের মতো দূরে মনে হয়।
কারণ ছাড়াই, মনে হল কোনও বস্তু ছাড়াই, বুদবুদের মতো ওপরে উঠতে থাকি। শূন্যতায় আমি দুলছি, মহাশূন্যতায় এগিয়ে চলেছি, আমায় চালনা করছে এই গ্রহ নক্ষত্রের টান। এর ওপর আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।
তারপর একদিকে ধাক্কা খাই আমি, বালতির মুখ টাল খেল একটা পাথরের জিভে আটকে। তলাটা উপরে উঠে আসছিল। বালতির ধারটা খুলে যাওয়ায় আমি হুড়মুড়িয়ে পড়ে যাচ্ছিলুম।
এসময় হ্যাচোরপ্যাঁচোর করে কোনওক্রমে অন্ধকারের পলিস্তর থেকে ক্রমে বেড়ে ওঠা আলোর দিকে উঠে এলাম। মাথার ওপর বেরোবার রাস্তার মুখ বড় হয়ে উঠছে।
হঠাৎ উজ্জ্বল সূর্যের আলোয় প্রায় ফেটে পড়লাম। একটা বাহু এগিয়ে এল, একটা হাত বালতির হাতল ধরল। একটা হ্যাঁচকা টান, মাটির ঘনরূপ অনুভব করলাম নিজের নীচে। নড়ছে না-– এমন কিছুর ওপর দাঁড়াতে ভাল লাগে, সূর্যালোক মুখে পড়ছে, ভাল লাগে।
আমায় লোকটা দেখছিল, বাড়িয়ে রাখা ওর হাতটা ওর সঙ্গে অদ্ভুতভাবে ওরই মত দেখতে একটা ধুসর বক্স-ট্রির সেতুবন্ধন করছিল।
আমি ওকে ধন্যবাদ জানাই, তারপর পাথরকুচির ওপর বসে একটা রাঙা আলু নিই। আমি ওকে নিজের কথা বলতে থাকি, যাদের যাদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় আছে, তাদের কথাও। ও নিথরভাবে শুনে যেতে থাকে, কিন্তু আমি কোনওভাবে বুঝতে পারছিলুম শব্দকে ও শুকনো মাটির জল শুষে নেওয়ার মত শুষে নিচ্ছে।
“আসি”, ছেড়ে আসার আগে হ্যাণ্ডশেক করে বললাম।
আমি চলে যাচ্ছি, কিন্তু ঘন বনের কাছে আসার আগে একবার ঘুরে তাকাই, হাত নাড়ি ওর দিকে।
ও দাঁড়িয়ে আছে, ধুসর বাক্সের আগে, গাছেদের স্বজাতির মত। কিন্তু ঝট করে সোজা হয়ে যায় লোকটা। হাত নাড়ে।
“গুডবাই” লোকটা বলল। যেন বলে উঠল একটা গাছ।
-----------------------------------------------------------------------
লেখক পরিচিতি: অ্যালান মার্শালের জন্ম ১৯০২ সালে, অস্ট্রেলিয়ায়। লেখক, গল্প-বলিয়ে, মানবতাবাদী অ্যালান ছিলেন একজন social documenter। পোলিও আক্রান্ত হয়ে ছোটবেলা থেকেই তাঁর একটি পা বিকল। সমসাময়িক কবিবন্ধু হ্যাল পোর্টারের ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত স্মৃতিচারণায় অ্যালান একজন উষ্ণ, কেন্দ্রীভূত মানুষ হিসেবে ফুটে ওঠেন। পোর্টার লিখছেন, যাকে দেখে করুণ লাগে আর যাকে দেখে মনে হয় স্বেচ্ছায় নির্ভীক তাদের মাঝে টানা একটা বিভাজনরেখা বরাবর সহজ ও উদাসভাবে অ্যালান হাঁটেন– এবং এটা খুব একটা সরল ব্যাপার নয় একেবারেই – আমি সে অন্ধকারে নামার হিম্মত রাখি না। অ্যালানের তিন খণ্ডের আত্মজীবনীর প্রথমটিই– I can Jump Puddles (১৯৫৫) তাঁর জীবনের সেরা কাজ বলে আলোচিত হয়। অস্ট্রেলিয়ান লিটারেচার সোসাইটি প্রদত্ত শর্ট স্টোরি অ্যাওয়ার্ড তিনি তিনবার পেয়েছে, ১৯৩৩-এ প্রথম। ১৯৮১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেসন তাঁর জীবনের ওপর ভিত্তি করে একটি নয় এপিসোডের মিনিসিরিজ নির্মাণ করে টেলিভিসনের জন্য। অ্যালানের মৃত্যু ১৯৮৪-তে। মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতিতে তাঁর জন্মভিটে নুরাতে একটি গাছ উৎসর্গ করা হয়। যে গল্পটি অনুদিত হল, তার মূল শিরোনাম– Trees Can Speak.