১৯৫৭ সালে পঞ্জাবের অমৃতসরে জন্মেছেন দীপ্তি নাভাল। পালামপুরে (হিমাচল) পড়াশোনা। পরে নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি এবং ম্যানহাটনের কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন। হিন্দি চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রতিভাবান অভিনেত্রী। বড়পর্দায় অনেক সফল চরিত্র উপহার দিয়েছেন। শ্যাম বেনেগালের ছবি 'জুনুন' দিয়ে বলিউডে পা রেখেছিলেন। এই যাত্রার আসল সূচনা হয়েছিল ১৯৭৯ সালে 'এক বার ফির' ছবির মাধ্যমে। এই ছবির জন্য তিনি সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারও পান। তিনি একজন বহুমুখী ব্যক্তিত্ব। সংবেদনশীল কবি। তাঁর কবিতার বই 'লামহা-লামহা' খুবই জনপ্রিয়।
তিনি একজন প্রশংসনীয় অভিনেত্রীর পাশাপাশি একজন চিত্রকর এবং ফটোগ্রাফার। দীপ্তি নাভালের বাবা তাঁকে চিত্রশিল্পী বানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু তার মন চলে গিয়েছিল অভিনয় ও কবিতায়। যদিও, তিনি ছবি আঁকতেন এবং তাঁর শিল্পকলা প্রদর্শনীতে প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি মাঝে মধ্যেই হিমাচল থেকে লাদাখের বিভিন্ন পাহাড় পর্বতে ট্রেকিং করতে ভালবাসেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজান। গানের প্রতিও রয়েছে তার গভীর অনুরাগ। মহিলা ও শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়ানোর উদ্দেশ্যে একটি চ্যারিটেবিল ট্রাস্ট গঠন করেছেন।
গুলজার সাহেব দীপ্তি সম্বন্ধে বলেছেন 'দীপ্তি সেই পথ অনুসরণ করে যেখানে তাঁর সৌন্দর্য চেতনা তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং সে বাঁচে তাঁর আপন শর্তে। তাঁকে দেখে মনে হয় ভীষণ বাস্তবধর্মী, ভীষণ ব্যবহারিক কিন্তু সে একদমই তাঁর বিপরীত। তাঁর স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত হওয়ার লক্ষ্যে দৌড়চ্ছে আর তাঁর বাস্তব সেই স্বপ্নের পিছনে ধাওয়া করে চলেছে।'
অজানা পথ
অজানা পথে
চলো আরও কিছুদূর হেঁটে যাই
কোন কথা না বলে
নিজের নিজের নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গে নিয়ে
প্রশ্ন উত্তরের ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে
রীতিনীতির কাঁটাতার পেরিয়ে
এসো আমরা পাশাপাশি চলি
কিছুই না বলে
হেঁটে যাই অনেকটা দূর
তুমি বিগত দিনের
কোনও প্রসঙ্গ উত্থাপন করো না
আমিও ভুলে যাওয়া
কবিতার ছত্র না উচ্চারণ করে
কে তুমি
কে বা আমি
এই সমস্ত কথা
আর কিছুই না বলে ...
চলো আরও অনেকটা দূর
অজানা পথে আমরা হেঁটে যাই
একাকী রাত
ঠান্ডা! একাকী রাত
আর সে
হেঁটে যাচ্ছিল অনেকক্ষণ
স্মৃতির চাদর গায়ে জড়িয়ে!
মিটি মিটি আলো
কিছু মিটি মিটি আলো
আর তুষার শৃঙ্গ থেকে গড়িয়ে আসা জোৎস্না
সমস্ত চরাচরে যেন একটিই সুর প্রতিধ্বনিত
নীরবতার তো এমনি শব্দ
হয় তাই না...
তুমিই তো বলেছিলে!
এমনই প্রশান্তি যেন বাকি কোন কিছুই সত্যি নয়
এই রাত চুরি করেছি আমি
আমার জীবন থেকে আমারই জন্য
মসৃণ ঢালের ওপর
মসৃণ ঢালে মেষপালকদের প্রাত্যহিক শোরগোল শেষ হয়েছে ইতিমধ্যে
দিন যেন নিশ্চুপে পার হয়ে যাচ্ছে খুব পাশ ঘেঁষে
সাদা শিখরে দিগন্ত তার গোধূলি রঙ ছড়িয়ে দিচ্ছে
কোমল হাওয়ার গুনগুনানি ভেসে যাচ্ছে
সমতলের মেঠো পথে আবার জলের ধারার মতো
সরু পথের আঁকা বাঁকা চলনে
খেলে বেড়ায় পড়ন্ত সূর্যের শেষ কিরণ এখনও পর্যন্ত
দেখে মনে হয় যেন গলানো কাঁচের চাদর বিছানো
অনুরণিত হচ্ছে শোনো কোনও এক মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি
আর সামনের ওই টিলা থেকে ভেসে আসছে গির্জার প্রার্থনা স্তব
আরো দূর থেকে কোন এক মসজিদের আজানের স্বর আন্দোলিত হচ্ছে
এ এক সংযোগের সন্ধ্যা, আগে তো কখনও দেখিনি
হয়ত এমন এক সন্ধ্যার প্রতীক্ষাতেই ছিলাম
স্থির হয়ে আছি চলতে চলতে
প্রকৃতি ও ঈশ্বরের ঔদার্য এর আগে
অবনত হই এই সান্ধ্যকালীন উপাসনার কাছে
আমি দেখেছি দিনকে রাত্রিতে বদলে যেতে
আমি দেখেছি দূরে কোনও পর্বতের পায়ের কাছে
যখন সাঁঝ চুপিচুপি তার আস্তানা বানিয়ে নেয়
আর ভেড়ার দল তাড়িয়ে নিয়ে
মেষপালকেরা সুরু কাঁচা পাকদন্ডি বেয়ে পাহাড়
থেকে নিচে নেমে যায়
আমি দেখেছি পাহাড়ের ঢালের ছায়া বাড়তে থাকে
তখন আরও নীচের ঘাঁটিতে
সে এক একলা ছাতা ও চশমা
ছুঁয়ে নিতে চায় শেষবেলার সূর্যকে
হুঁ, দেখেছি এবং শুনেওছি
এই ঠান্ডা উপত্যকায় কখনও কোথাও
প্রতিধ্বনিত হয়
মোহন বাঁশির সুর ....
তখন
এখানেই কোথাও কোনও না কোনও পাহাড়ের
গায়ে হেলান দিয়ে থাকা দেবদারু গাছের নীচে
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি
একটা আস্ত দিনকে দেখেছি রাত্রিতে বদলে যেতে।
বেচারা মানুষগুলি
সব মানুষ মাত্রই একই নজরে দেখে
নারী আর পুরুষের
সম্পর্ককে
কেননা তাদের যেন কোনও নাম দিতে পারে!
ওই নামের ঘেরাটোপে আটকে থাকে
বেচারা মানুষগুলি!
একটি কবিতা
'এত গুমরে গুমরে থাকো..
সহজ কেন হও না তুমি!'
সহজ হতে গেলে কি জানো
অনেকগুলি বছর পিছনে যেতে হবে
আর সেখান থেকেই শুরু করতে হবে
যেখানে কাঁধে ঝুলি নিয়ে
স্কুল যেতে শুরু করেছিলাম
এই মুহূর্ত মন বদল করে
যখন নতুন মন মেজাজ তৈরি করব
আর তারপর যেদিন
সহজ সরল হয়ে
খিলখিলিয়ে
দমকে দমকে
কোনো কথায় হেসে উঠব
তখন আমায় চিনতে পারবে তো?
আমার স্নায়ুর ভিতরে এক সুর আছে
আমার স্নায়ুর ভিতরে এক সুর আছে
এক মহাজাগতিক ছন্দ এখানে প্রবাহিত হচ্ছে
তুমিও শুনতে পাবে, যদি তুমি
তোমার আঙুলের সুচাগ্র দিয়ে স্পর্শ করো
তুমি কি তাকিয়েছ ওই তারাদের দিকে
আর দেখেছো তাদের? দৃষ্টির বাহির হয়ে?
এখানে যে শব্দ আছে, শুনতে পাও?
যখন স্পর্শ করো নুড়ি-- পাথর,
শুকনো পাতা বা বাতাস!
তুমি কি অনুভব করো এভাবেই
তোমার আত্মার আংশিক স্বচ্ছতাকে?
যখন তুমি হেঁটে যাও
তখন ছুঁয়ে দেখো পৃথিবীকে?
সেভাবে জীবনকে ছুঁয়ে দেখো, যেভাবে বেচেঁ আছো
ছুঁয়েছ কি?
কখনও তুমি....
এই প্রথম দীপ্তি নাভালের লেখা পড়লাম। ভাল লাগল। ভাল হয়েছে অনুবাদ
ReplyDeleteপ্রথম পড়লাম দীপ্তি নাভালের লেখা। খুব সহজ বোধগম্য ও মনছোঁয়া।
ReplyDelete