Sunday, January 3, 2021

ফের্নান্দো চেইয়ে-র কবিতা

 


অনুবাদ: জয়া চৌধুরী


সাদা রয়ে যাওয়া পাতার গাথা


সাদা রয়ে যাওয়া পাতারা সাধারণত শুভ্র হয়

এবং সাদা রং তার শূন্যতার ইঙ্গিত দেয়

এক এমন শূন্যের কথা বলে যেখানে

অক্ষর, এবং শব্দের অনুপস্থিতিতে থাকে

আলাপচারিতার এক অনন্ত সম্ভাবনা।


সাদা থেকে যাওয়া পাতা

ভাষার প্রতি এক ধরনের আমন্ত্রণ

সে চায় ওরা যেন তাকে অধিকার করে

মহাবিশ্বের ওই অনন্ত শূন্যতা

হৃদয়শূন্য ছিদ্রময় ওই ধাতু

ওই শূন্যের হতভাগ্য অংশটুকুর নিশ্চিতভাবে হয়ে ওঠাকে

ছেড়ে যেতে গিয়ে যে তাকে


অসম্মান করে সাদা পাতা চায় তাকে যেন

অতিক্রম করে যায় ওরা।


অনুতাপ


স্বীকার করছি,

প্রজাপতিদের আমি হত্যা করেছি।

সাধারণত ভাইয়ের সঙ্গে বেরিয়ে পড়তাম

সূর্য যখন গাছের শাখা ঝলসে

দিতে দিতে দুপুরের ঘুম সারতেন,

সে ঘুম যত ঘন ততই ভাল।

দিন, নিচের দিকে

নদীর বুকে ঢলে

পড়তে পড়তে কষ্ট পায়

টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যায় প্রজাপতিতে

ওদের বেশির ভাগই

ছিল হলদে

কমলা ও আরো আরো রঙের

দেখে মনে হত যেন ডানায় আঁকা আছে ঘড়িমুখ ।

অদেখাকে পাশ কাটাতে কাটাতে

উড়ে আসত স্পষ্ট হয়ে

যেন তারা জানত

ওদের জন্যই অপেক্ষমান

দানবাকারের অস্তিত্ব।

তাদের সর্পিল ঋতু জুড়ে

ভঙ্গুর রূপ উপহার দিতে দিতে

আঁকাবাঁকা পথে বেয়ে আসত ওরা

আগাম না দেখেই

ফুঁসে ওঠা প্রকৃতির কারণে

শাখাদের টুপটাপ ঝরে পড়া।


ওরা আসত সৌরতাপের ফুলকি বয়ে

ছন্দহীন নৃত্যে এবং নীরবে

প্রখর আলোয় এক হাস্যকর

হত্যায় ঘটা মৃত্যু হয়ে।

একথা স্বীকার করায় কী দারুণ যন্ত্রণা!

আমি প্রজাপতিদের হত্যা করেছি

এক ঘৃণ্য সৈনিক হয়েছি

রূপের বিরুদ্ধে

যে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র।


জীবন্ত দেহ যা গান গেয়ে চলে


এই অপ্রমাণিত ও প্রাচীন সঙ্গীতই হল

একটি একলা ছোট ছেলের অস্তিত্ব

ফলবান বৃক্ষ ও ফুলভরা গাছময় রোদমাখা উঠোন

যেখানে ধ্বনিত হয় বিশ্বপ্রকৃতির আনন্দময় স্বরকম্প

দূরাগত হালকা বৃষ্টির ছাঁটে নেচে ওঠে ফুল।

কত উদ্বেগের ভেতর কতখানি নিস্তব্ধতা,

বস্তুর সামনে এই অ্যারিস্টটলীয় বিস্ময়,

যেখানে বৃক্ষের আশ্রয়ে হ্রস্ব হয় প্রেম

এবং চলে যেতে যেতে শামুক ফেলে যায় হীরেকুচি।

আমি সেই ছোট ছেলেটি যে জীবিত এবং গান গায়

পূর্বপুরুষের দেয়া এই ভালবাসামাখা ভাষায়

ওঁরা এই স্তবকের স্বপ্নের শেকড় ছিলেন না,

হ্যাঁ তবুও তাঁরা সেই উপযুক্ত মৃত্তিকা জীবনের ঝাপটা আসে যেখানে।

কালো নদীর এক কবি, মৃত্যু অবধি উড়বার জন্য

যেখানে জন্মায় পাখি

কখনো কখনো, থেমে যায়, শব্দের ঘাটে,

এক অনন্ত আঙিনায় ঋতুস্নাত ফুলেদের ওপর।

খুঁজে ফেরা একাকীত্ব, প্রয়োজন, পরিপূর্ণ আলোয় শিশু থেকে

মহাবৈশ্বিক ভাষা থেকে কবি যেখানে পড়েন

বাস করেন আমার সাথে, এমনকি, মাঝরাতে

এবং পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসে দুপুরের ঘুমের সুগন্ধ

যখন কেউ ঘুমোয় না, এবং নক্ষত্ররা যায় কেঁপে।

অটুট স্বপ্ন ও নিশ্চিত ভাবনার এক কবি

আমি যার অপ্রমাণিত ও প্রাচীন সঙ্গীতই হল


একটি একলা ছোট ছেলের অস্তিত্ব।


----------------------------

ফেরনান্দো চেইয়ে: কবি, গদ্যকার, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য-সমালোচক এবং স্টাইল-সংশোধক ফেরনান্দো চেইয়ের জন্ম ১৯৭৬

সালে উরুগুয়ের মেরসেদেস শহরে। “আঁকা পাখিদের কবিতা”, “লিখনভাষ্য ও স্টাইল সংশোধন-এর জেনারেল

কোর্স” “রিও দে প্লাতার ভূতের গল্প” “শব্দের দেয়াল” ইত্যাদি প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১০ টি।

কলম্বিয়ার গোল্ডেন বুক অফ দ্য ইয়ার(২০১৯), সাহিত্য সম্বন্ধীয় প্রবন্ধের জন্য জাতীয় পুরষ্কার

(২০১৭ এবং ২০১৯) ইত্যাদি অসংখ্য পুরষ্কারে সম্মানিত।

---------------------

জয়া চৌধুরী মূলতঃ অনুবাদক। মূল স্প্যানিশ ভাষা থেকে বাংলায় প্রকাশিত উপন্যাস, নাটক, ছোট গল্প,

কবিতার এতাবৎ ১০টি অনূদিত বই ও বাংলায় মৌলিক উপন্যাস একটি ও কবিতার বই দুটি প্রকাশিত।

ভারত বাংলাদেশ আমেরিকা প্যারাগুয়ে কিউবা আর্জেন্টিনা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ব্লগে

নিয়মিত অনুবাদ ও মৌলিক লেখা প্রকাশ করে থাকেন। প্রিয় শখ সেতার বাজান। স্প্যানিশ ভাষা শেখান

রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল অফ ল্যাঙ্গুয়েজ এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।