Sunday, January 28, 2024

কৃষ্ণমোহন ঝা-র কবিতা | অনুবাদ: দেবলীনা চক্রবর্তী

কৃষ্ণমোহন ঝা-র জন্ম ১৯৬৮ সালে বিহারের মধুপুরায়। হিন্দি এবং মৈথিলী ভাষায় কবিতা লেখেন। তাঁর হিন্দি কবিতা সংগ্রহ 'সময় কো চিরকর' ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এবং মৈথিলী ভাষায় 'একটা হেরায়েল দুনিয়া' ২০০৮ প্রকাশিত হয়। বিদ্যাপতির পদের একটি সংকলন 'ভনই বিদ্যাপতি'র সম্পাদনা করেন তিনি এবং হিন্দি কবিতার ইংরেজি সংকলন 'হোম ফ্রম এ ডিসটেন্স'-এর একজন সহযোগী সম্পাদক কৃষ্ণমোহন ঝা। এছাড়া বহু পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কবিতা ইংরেজি, অসমিয়া, বাংলা, মারাঠি, তেলেগু, উর্দু এবং নেপালি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে তিনি 'কানাইহা স্মৃতি সম্মান' এবং 'হেমন্ত স্মৃতি কবিতা পুরস্কার' পান। ২০০৩ সালে এবং ২০১৩ সালে 'কীর্তি নারায়ণ মিশ্র সাহিত্য' পুরস্কার পান। বর্তমানে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দি বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান। 

মূল হিন্দি থেকে বাংলায় অনুবাদ দেবলীনা চক্রবর্তী


মৃৎ পাত্র

(শক্তি চট্টোপাধ্যায় স্মরণে)


আবার আসবো ফিরে এমন কথা বলব না

কারণ আমি যে কোথাও যাব না


কুয়াশার ওই পারে

হয়ত ভাষার কোনও জীবন হতেও পারে 

তবু আমার উচ্চারিত শব্দ

এইখানেই 

কার্তিকের ভোরে

ধানের শীষ থেকে ঝরে পড়বে

টুপটাপ 


আমার সমস্ত আকাঙ্ক্ষা

আমার ঝরে যাওয়া অশ্রু ও স্বেদজলের সঙ্গে 

এই বেদনা তটের উপরে ভাপ হয়ে উঠবে

আর যেখানে আমার জন্ম 

সেই বিদগ্ধ আকাশে মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াবে


আমার আত্মা ও মজ্জাস্থিত সমস্ত দৃশ্যপট

এই ধুলোমাটি, এই ক্ষেতখামার 

এই ঘরদুয়ারে আপন সত্তা খুঁজতে 

বারবার আসবে 

এখানে ছাড়া আমার আমিকে

আর কোথায় পাবে খুঁজে 

আদৌ কোথায় যাবে!


আর যদি একান্তই যেতে হয়

স্বপ্ন-দৃষ্টি ও বাসনা ছাড়া 

কী করে আর কতটুকু বাঁচা সম্ভব 

তাহলে তাকে কি বলা যায় 'চলে যাওয়া'?


এসেছি যখন থাকব এখানেই....


আষাঢ়ের ঘনঘোর বৃষ্টিতে

ধরণীর উচ্ছ্বসিত অবিরাম গন্ধ বিধুরতায়


সোঁদা মাটির অন্ধকার ঘরে

প্রতিদিন দুপুর ছেয়ে থাকা

সূর্য কিরণে


চিড় ধরা আয়নার গায়ে 

বারেবারে নিশ্চুপে ছুঁয়ে যাওয়া

ধুলোর এক একটি কণা'তে 


এসেছি যখন, এখানেই রয়ে যাব 

আমি যাব না কোথাও


---------------------------------------------------------


জীবনানন্দ দ্বিতীয়


আমি ছাড়া আর কেই বা জানে

যে তোমার ভাগ্যে 

না তো কার্তিকের ভোরে শিশির নিমজ্জিত 

বৈজয়ন্তী ফুলের মতো দুর্লভ প্রেমী এসেছে

না অখণ্ড লালিমায় গড়া কাব্য সৌন্দর্য্য নিয়ে প্রেম এসেছে 


আর তুমি ছাড়া আর কে বা জানে

যে আমার ভাগ্যে 

না তো বিদ্যুৎ লতার মতো ঝলমলে রাত এসেছে

না তো এই মৃৎ পাত্র পেয়েছে 

গাঢ় অমৃতের ও শিউলি ফুলের মতো আশ্রয়


আমি জানি যে

তুমি নাটরের বাসিন্দা নও

না আমার জন্ম বরিশালে


মাঝরাস্তায় 

ট্রামের ঘড়ঘড় শব্দ দেখে শুনে 

কাছে যাওয়া তো দূরের কথা

রূপসী বাংলার সজল ভূমি স্পর্শ করার সুযোগ হয়নি এখনও 


কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায়

আমার বুকের ওপর ভয়ঙ্করভাবে 

পিষে দিয়ে যায় কিছু 

সে ট্রাম নয় তো আর কি!