Saturday, October 14, 2023

চাহনি | পর্ব ৮ | মন্দার মুখোপাধ্যায়


প্রস্তাব

ইশকুল বয়স। মনে হয় চোদ্দ। ক্লাস এইট। ইশকুলের পাঁচিল আর তাদের বাড়ির মধ্যে একটাই সরু পিচ রাস্তা। বাড়িটাও এই রাস্তার ওপরেই। দোতলায়, কাঠের খড়খড়ি দেওয়া জানলাগুলো খুব বড় বড়। খড়খড়ি টেনে, তার ফাঁক দিয়ে এখান থেকেই যে সে রোজ আমাকে দেখে, তা আমি বেশ অনুমান  করতে পারি। কী করে বুঝি! তা জানি না। বয়সে আমার থেকে বছর কয়েকের বড় বলেই আন্দাজ হয়। কিন্তু সে অনুপাতে চালচলনে একটু বেশিরকমই আত্মবিশ্বাসী। মাঝে মাঝে সামনে দিয়ে হেঁটে যায়, নিজেকে চেনাতে। চিনিয়েছে, মোড়ের আড্ডায় দাঁড়িয়েও চকিতে আমার দিকে তাকিয়ে। এসবে আমল না দিলেও সামান্য কেঁপে, মাথা নিচু করে নিজের রাস্তায় চলে গিয়েছি বার বার। তাই তার দিক থেকে এগিয়ে এসে কথা বলা বা আলাপ করার প্রশ্নই ওঠে না। তাকে আমি এভাবেই চিহ্নিত করেছিলাম তার ওই চকিত দেখায়। সুঠাম এবং রূপবান চেহারা। একমুখ নরম দাড়ি, কোঁকড়া চুল আর দৃপ্ত চোখ।

শনি রবিবারও ওই স্কুলে যেতাম, ছবি আঁকা শিখতে। সেদিন ক্লাস শেষ হলে দারোয়ানের চোখ এড়িয়ে, বাউন্ডারি পাঁচিলের কোনায় গিয়ে সেই গাছটার নীচে এসে দাড়িয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কিছু কমলা ফুল কুড়িয়ে নেব, যদি দু’একটা পাই! গাছটার নাম জানতাম না। ফুলগুলো এত সুন্দর যে মাঝে মাঝেই কুড়িয়ে এনে পাত্রে সাজিয়ে স্টিল লাইফ আঁকতাম। কখনও স্কার্ট বা ফ্রকের ঘেরে ফেব্রিক পেইন্ট করলেও ওই ফুল। তখন আমার প্রিয় বই বা ডায়েরির ভাঁজেও পাওয়া যেত ওই শুকনো ফুল আর তার পাতা। পাতাগুলিও অন্যরকম সবুজ। গাঢ় নয়, হালকা। 

সেদিন নাগালের মধ্যেই ছোট ছোট স্তবক দেখে, মাথা তুলে হাত বাড়াতেই ওদের জানলাটায় চোখ পড়েছিল। সেদিন আর খড়খড়ির আড়াল থেকে নয়। জানলাটা হাট খুলে, দু'হাতে দু'টো লোহার রেলিং ধরে সে দাঁড়িয়ে আছে। যেন এক অকপট মুগ্ধতায় স্নান করে। গায়ে ছিল সাদা পায়জামা আর গেঞ্জি। কোঁকড়া চুলগুলো ভিজে পাট পাট। তার সর্বাঙ্গে রবিবারের আরাম। জানলাটা মানুষের থেকেও লম্বা বলে তার পুরো শরীরটাই সেদিনও দেখা গিয়ছিল।

ফুলের ফাঁক দিয়ে তার চোখে আমার চোখ পড়তেই সে হাসল নিভৃতে। তার সেই নিজস্ব চাহনিতে কোনও সংকোচ নেই। আমি কেমন কুঁকড়ে গেলাম। চোখ নামিয়ে ফুল-সমেত ডালটা ছেড়ে, মাথা নামিয়ে গেটের দিকে হাঁটা দিলাম দ্রুত। মায়ের ডিজাইনে বানানো কমলা রঙের আমব্রেলা কাটের  সুতির ফ্রক  পরা, আমার সেই টিংটিঙে শরীরে সে কী ভাললাগা! আর তার ওই চাহনিতে যেন বড় হয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি।

সে কি বুঝেছিল, হাসি ফিরিয়ে না দিলেও কতখানি সম্মতি ছিল আমার! অচেনা শিহরণে কত হাসি ঝরেছিল মনের গভীরে!

আজও জানি না যে কী ফুলের গাছ ছিল সেটা! রাস্তায় বা বাগানে ওই কমলা ফুলের গাছ দেখলেই এখনও তো কেঁপে উঠি। মনে পড়ে তার সেই নির্ণিমেষ চেয়ে থাকা; অভ্যর্থনার উষ্ণ প্রকাশ; সপ্রতিভ হাসি। 

আমার মন থেকে কোনওদিন কি মুছে যাবে তার সেই নির্ণিমেষ চাহনি…… প্রেমের প্রস্তাব!

Tuesday, October 10, 2023

উত্তর শিলালিপি | কমলেশ রাহারায় স্মরণ সংখ্যা | শরৎ ১৪৩০


স্বাগতকথন

কবি কমলেশ রাহারায়ের (১৯৪৬-২০২১) পারলৌকিক কাজে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু-স্বজন। সেদিনের অনুষ্ঠানে একটি ডায়রিতে তাঁরা লিখে দিয়েছিলেন এইসব স্মৃতিকথন। পরেও অনেকে এসে নানা সময় ভরিয়ে তুলেছেন সেই ডায়রির পৃষ্ঠা। কবির স্বপ্নের পত্রিকা 'উত্তর শিলালিপি' এবার সেইসব লেখাকে একসঙ্গে প্রকাশ করল। সেই সঙ্গে শুরুতেই রইল তাঁর একটি কবিতা এবং অনুবাদ। পাশাপাশি থাকল আমাকে লেখা কমলেশ রাহারায় সম্পর্কিত পাঁচটি চিঠি। সবশেষে কবির তিন পর্বের ভিডিও সাক্ষাৎকার।

অরুণাভ রাহারায়

সম্পাদক, উত্তর শিলালিপি

---------------------------------------------------------

ক্রম

কমলেশ রাহারায়ের কবিতা ও জগন্নাথ বিশ্বাসের অনুবাদ

ই-চিঠি: শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সিতাংশু যশশ্চন্দ্র, হান্স হার্ডার, অশ্বিনী কুমার, উদয়ন বাজপেয়ী

স্মরণলিপি: অর্ণব সেন, পবিত্রভূষণ সরকার, নিখিলেশ রায়, রামেশ্বর রায়, মধুমিতা চক্রবর্তী, সঞ্চিতা দাশ, উত্তম চৌধুরী, শান্তনু দত্ত, কল্যাণ হোড়, প্রশান্ত দেবনাথ, আমিনুর রাহমান, উত্তমকুমার মোদক, সঞ্জয় সাহা, অম্বরীশ ঘোষ, গৌরব চক্রবর্তী, ব্রহ্মজিৎ সরকার, দেবায়ন চৌধুরী

কমলেশ রাহারায়ের ভিডিও সাক্ষাৎকার

---------------------------------------------------------

কণ্ঠস্বর

কমলেশ রাহারায় 

আজকাল শৃঙ্গহরিণ নিয়ে পুননির্মাণে মেতে উঠি

এই ছায়ারোদে সে একাই যেন উৎসবমুখর

তুরুপের তাস ভেবে তাকেই ছিঁটিয়ে দিচ্ছি তৃষ্ণাজল 

তবু কেন বলে সে, হৃদয়ে রেখেছ পোড়াকাঠ


আমার কণ্ঠস্বর সুদীপ্ত হাওয়ায় ভাসে 

তুমি কি শুনতে পাও এই বেলা অবেলায় 

সাগর দিঘির জলে কতখানি শীতল সহিষ্ণু হয় 


আমি অর্জুন নই শব্দমোহর ক্রমান্বয়ে রেখেছি পাতায় 

এইসব নৈবেদ্য সাজাতে গিয়ে ক্ষণে ক্ষণে বৃক্ষমঙ্গল হই

তুমি অনুভবে হঠাৎ বৃষ্টিদিনে-- রম্য চাঁদ দিলে না কখনও


তবু অকুলবিহারী গন্ধ, সারারাত দিগ্বিদিক

তোমাকে সঙ্গে নিয়ে মুগ্ধতায় হেঁটে যাব বাকি পথ


Voice

Kamalesh Raha Roy

Translated by Jagannath Biswas


Now I devote in reconstructing horned deer,

In this shady sun he seems festive alone

Assuming a trump-card I throw to him his thirst-water

Yet, why he says, burnt wood is kept in heart.


My voice floats in luminous air 

can you hear

how much cold is tolerable

in lake and sea


I am no Arjun, I keep coinages in leaves,

For this oblation I become the plant-god moment by moment 

Your feelings never on a rainy day 

Gave a bright moon


Yet a redolence everywhere, the entire night

I will walk with you enchanted the rest of the path.

---------------------------------------------------------

ই-চিঠি

অরুণাভ,

পিতৃবিয়োগ বড়ই বেদনাদায়ক। ঠাকুর তোমাকে এ শোক সহ্য করার শক্তি দিন।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

---------------------------------------------------------

Dear Arunava, 

in this time of sheer grief and pain, we are with you as much as we can. The image that you have sent,  of your father, poet Kamalesh Raha Roy, at his writing desk early in the morning, enables me to feel your closeness with him. And the absence. "From the hollow of the tree", as your poem says, "a musical melody" is heard. In his poems you would be able to be with him, and in your poems too.... We keep in touch through WhatsApp and email for now. 

Warm personal regards, 

Sitanshu Yashaschandra

বি দ্র: গুজরাটি সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি ও লেখক। সাহিত্য আকদেমি ও পদ্মশ্রী প্রাপক।

---------------------------------------------------------

Priyo Arunabha,

apnar babar mrityusombad peye khub kharap laglo. baba-chheler somporkota amader jibone birat boro ekta bhumika rakhe. tar opor dekhchhi sahityer madhyome apnader dujoner ei prakritik jogajoger baireo ekta jogsutro chhilo.

babara kintu chole geleo onekdin amader songe theke jan bole amar obhiggota.

asha kori apni babake haranor duhkho samle nite parben. amar antorik somobedona neben.

Hans Harder

বি দ্র: হান্স হার্ডার, জার্মান অধ্যাপক ও বাঙালির পরম আত্মীয়।

---------------------------------------------------------

Dear Arunava, 

Sad to hear this- passing away of your dad, a poet too. Very tough to over come grief , yet I am sure you will memorialize him in your works and he will live  in "folklores from oyster shell!"....the best life is to stay etched in the memories and in folklores that is what you father has gifted to you.   Hope, you and your family stay well cherish his memories and his poems...

Ashwani Kumar

বি দ্র: কবি ও মুম্বয়ের টাটা ইনিস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সাইন্সের প্রফেসর।

---------------------------------------------------------

Dear Arunava, 

Both of Kamalesh ji 's are really nice.  I loved reading them.  If I may use a mathematical expression,  I will say: in poems there sadness 'under root' vast expense.

Udayan Vajpeyi

বি দ্র: হিন্দি ভাষার সুপরিচিত কবি। ভোপালবাসী।

---------------------------------------------------------

স্মরণলিপি

তাঁর পরিচিতি ছিল ব্যাপক

অর্ণব সেন

কমলেশ রাহারায়কে আমি কলেজে ছাত্র হিসাবে পেয়েছিলাম। সত্তর-আশির দশকে। বিশ শতকে, তাঁর পরিচিতি ছিল ব্যাপক। তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় ও পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত সম্পাদিত ‘উত্তরের কবিতা’ সংকলনের প্রবীণতম কবি গণেশ রায়, নবীনতম কবি একমাত্র কমলেশ রাহারায়। তবে, জলপাই-ডুয়ার্সে তাঁকে সম্ভাবনাময় কবি হিসাবে আবিষ্কার করেছিলেন কবি বঙ্কিম মাহাতো, কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র হিসাবে। বঙ্কিম অবশ্য রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসাবে চলে যান। 

কমলেশ রাহারায়ের দু’টি মাত্র কাব্যগ্রন্থ ‘বিপরীত বসন্ত’ এবং ‘লিনোকাটে তাপ নিচ্ছি’-– আসলে কবি হিসাবে যত ব্যাপক পরিচিতি তাঁর, সেই তুলনায় কবিতার বই করা হয়নি। স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত কবি বলেই তাঁকে চিনেছি। তবে শুধু কবি নয়, গায়ক হিসাবেও তাঁর বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল মঞ্চে, ঘরেবাইরে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের অনেকের সঙ্গে কমলেশ ডুরুঙ্গামারি গিয়েছিল সাহায্য দিতে। তাঁর গানে বিপুল সাড়া তুলেছিল সমবেত জনতার মধ্যে। সে এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য!

---------------------------------------------------------

কমলেশ সত্যিই আমার গুণমুগ্ধ ছিল

পবিত্রভূষণ সরকার

ছেলেবেলার বন্ধু কমলেশের প্রয়াণ আমার কাছে খুবই বেদনার। দীর্ঘদিন নানা বিষয়ে তাঁর সাথে আমার গভীর সম্পর্ক ছিল। সাহিত্য জগৎ কিংবা কবিতায় তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করত। আমার পত্রিকা (মাটিরছোঁয়া ও উৎস) এবং বিকল্প স্মারক পত্রিকায় তাঁর কবিতাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছি। কমলেশ সত্যিই আমার গুণমুগ্ধ ছিল। সাহিত্যের অঙ্গনে কমলেশের সাহচর্য ও সহযোগিতা চির অম্লান। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

---------------------------------------------------------

আলিপুরদুয়ার শহরে কমলেশদা ছিলেন একটা বড় আশ্রয়

নিখিলেশ রায়

কমলেশদা (রাহারায়) থাকবেন না, আর তাঁর সম্পর্কে এইরকম একটা খাতায় আমাকে কিছু লিখতে হবে-- তা কোনওদিন ভাবিনি। আমার ছাত্রজীবনে লেখালিখি শুরুর দিকটায় আলিপুরদুয়ার শহরে কমলেশদা ছিলেন একটা বড় আশ্রয়। এত ভালোবাসা, ওই দিনগুলোতে, গ্রাম থেকে প্রথম প্রথম শহরে আসা এই ছেলেটি আর কারও কাছে পায়নি। সর্বক্ষণ উৎসাহ দিতেন। তাঁর নতুন লেখা শোনাতেন, নতুন লেখা শুনতে চাইতেন। তাঁর সঙ্গে কাটানো বহু স্মৃতি! অসম্ভব ইতিবাচক একটা বড় মনের অধিকারী কমলেশদা আজ নেই -এই শূন্যতা বহুদিন ভরাট হওয়ার নয়। তাঁকে আমার প্রণাম! 

---------------------------------------------------------

বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

রামেশ্বর রায়

প্রিয় কবি, কমলেশদা, চলে যাবার পর আমরা আলিপুরদুয়ারবাসী, শিল্প-সাহিত্য সকলে গভীরভাবে শোকাহত। ওঁর শেষকৃত্যের ক'টি চিত্রে রইল আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

---------------------------------------------------------

হৃদয়ে আছেন কমলেশদা

মধুমিতা চক্রবর্তী

'নিজেকে বিপন্নতার খাদের ধারে নিয়ে না এলে কীভাবে কবিতা লিখবি'-- কমলেশদার অমোঘ উক্তিটি আজও তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে কবিতার ঝরনাতলায়। আপনি হৃদয়ে আছেন কমলেশদা। অনন্ত শ্রদ্ধা জানাই।

---------------------------------------------------------

কবিতায় আত্মভোলা এমন মানুষ দ্বিতীয়টি দেখিনি

সঞ্চিতা দাশ 

কমলেশদা সাহিত্যজীবনে আমার অভিভাবকস্বরূপ। আসতে যেতে তাঁর কোয়ার্টারে আড্ডা, এটা একসময় নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছিল। অনেক অনুষ্ঠানে দ্বৈত কণ্ঠে গান গেয়েছি। কবিতায় আত্মভোলা এমন মানুষ দ্বিতীয়টি দেখিনি। তিনি চিরদিন আমার অন্তঃস্থলে শ্রদ্ধার আসনে থাকবেন।

---------------------------------------------------------

তাঁর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাই

উত্তম চৌধুরী

জীবনের অমোঘ সত্য মেনে কমলেশদা চলে গিয়েছেন। এ যাওয়া অপূরণীয়। আমাদের প্রিয় মানুষ, প্রিয় কবি। আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। সে সব মনে পড়লে ভীষণ ক্লান্ত হয়ে উঠি। তাঁর স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাই।

---------------------------------------------------------

ওঁর সৌজন্যে আমি মুগ্ধ

শান্তনু দত্ত

প্রথম কমলেশদাকে যখন দেখি সেটা ২০০২ সাল। এর আগে আমি আলিপুরদুয়ারে নিয়মিত থাকলেও সামাজিক প্রতিবেশে সেভাবে মেলামেশার সুযোগ পাইনি। ওঁর পুত্র অরুণাভ আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্র হওয়ার সুবাদে এবং আমার প্রধান শিক্ষকতায় নিয়োজিত হওয়ার পর ওঁর সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ হয় এবং শীঘ্রই আমি কমলেশদার লেখালিখির প্রেমে পড়ি। ‘আপনার কবিতা আমার খুব ভালো লাগে’-- এ কথা শুনে উনি উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। আমার পাঠ-প্রতিক্রিয়া ওঁর মতো বড় মাপের কবির কাছে তুচ্ছ হলেও সেদিন ওঁর সৌজন্যে আমি মুগ্ধ হয়েছি।

---------------------------------------------------------

শূন্যতা কোনও দিনই পূর্ণ হবে না

কল্যাণ হোড়

সেই শৈশব থেকে চিনতাম কমলেশদাকে। পরবর্তীতে ৮০-র দশকে লেখালিখি সূত্রে ওঁর সঙ্গে ঘনিষ্টতা। অসাধারণ মনের এবং অসাধারণ লেখার মধ্যে দিয়ে তিনি সবার প্রিয় ছিলেন। ওঁর শূন্যতা কোনও দিনই পূর্ণ হবে না। দাদা যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন।


লেখালিখির ক্ষেত্রে তাঁর কাছে আমার অনেক ঋণ

প্রশান্ত দেবনাথ

সকলকেই চলে যেতে হয় একদিন জীবনের ওপারে। এই সত্য জানি। কিন্তু কারও চলে যাওয়া একেবারে নির্বাক করে দেয়। কথাগুলো যেন পাথর হয়ে যায়। কবি কমলেশ রাহারায় আমার খুব কাছের মানুষ ছিলেন। লেখালিখির ক্ষেত্রে তাঁর কাছে আমার অনেক ঋণ। তিনি চলে গেছেন এ কথা ঠিক। কিন্তু কমলেশদা আমাদের ভালোবাসায় এখনও আছেন, এভাবে চিরদিনই থাকবেন। তাঁকে আমার শ্রদ্ধা জানাই।

---------------------------------------------------------

তিনি যে আমার জীবনের ধ্রুবতারা

আমিনুর রাহমান

প্রিয় মানুষ। প্রিয় কবি। আমার প্রিয় দাদা আজ ঘরে নেই। কিন্তু এ ঘরে তাঁর ঘ্রাণ পাচ্ছি, তাঁর কণ্ঠে শুনতে পাচ্ছি সৃষ্টি। অন্তরে তাঁর প্রতিধ্বনি আমাকে শিহরিত করছে তেমনই। 'বৈঠা'র জন্মলগ্ন থেকে তাঁর ছায়া পেয়েছি, স্নেহ-মায়া পেয়েছি অনাবিল। সংস্কৃতি আর সাহিত্যের প্রিয় শহর আলিপুরদুয়ারকে চিনিয়েছিলেন হাত ধরে। কত গুণী মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি পিতৃসম দাদার হাত ধরে।

সারা জীবনেও শিক্ষা ফুরায় না দেওয়া-নেওয়ার ফুলেল নৈবেদ্য। তাঁর কাছে শুধু নিয়েছি আর নিয়েছি। দিয়েছি তাঁরই আশির্বাদের 'বৈঠার ছলাৎছল শব্দটুক' শুধু।

যতদিন বইতে পারব-- বৈঠার প্রতিটি ঢেউ ভাঙার ভাষায় মনে রবেন কমলেশদা। জানি প্রতি মুহূর্তে পাব তাঁর সাড়া। তিনি যে আমার জীবনের ধ্রুবতারা। স্মৃতির প্রতি গভীর ও বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।

---------------------------------------------------------

কবি জেগে থাকেনই

উত্তমকুমার মোদক

সঙ্গীত ও সাহিত্যের মাধুর্য্য পাশাপাশি আত্মলীন বহন করে গিয়েছেন কমলেশ রাহারায়। আমি নয় দশকের প্রথমার্ধে কবির সঙ্গে পরিচিত হই। এরপর তিনি স্নেহ ভালোবাসায় জড়িয়ে নিয়েছিলেন আমাদের, বিনিময়ে অকপট, অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা পেয়েছেন সঙ্গীত ও কাব্যকৃতীর জন্য আন্তরিক। বলা যায়, কমলেশদা ছিলেন আমাদের সাহিত্যচর্চার নায়ক ও নেতা। তিনি চিরস্মরণীয় থাকবেন।

---------------------------------------------------------

বিশ্বাসের কাছে সৎ ছিলেন কমলেশদা

সঞ্জয় সাহা

'কেন প্রেম দিলে দ্বীপ্রহরে

ভেবে দেখ,

পুনর্বার ভেবে দেখ, করলি তো ভুল

বৃষ্টিভেজা গল্পবকুল'

কমলেশদার এই কবিতাটা যখন পড়ি তখন আমি কমলেশদাকে চিনি না, জানিও না। বেরিয়েছিল একটি ছোট্ট ফোল্ডারের মতো কাগজ ‘মঞ্জিল’-এ (সম্ভবত)। বাংলার ১৩৯৯ সনের দিকে। কেননা স্মৃতিতে সেই সবুজ ফোল্ডারটির উপরের এই সন আর নিচে কমলেশদার কবিতাটা ভেসে উঠছে। পরিচয় তার একদশক পরে, সম্ভবত কোচবিহারে। বয়সের অনেক তফাৎ থাকলেও স্নেহ ও বন্ধুত্ব দুইই পেয়েছি। কমলেশদা একবার কবিতার নামে যা খুশি শব্দ প্রয়োগে ক্ষেপে গিয়েছিলেন বলে মনে আছে এই আলিপুরদুয়ারেরই বড় কবিসভায়। কেননা কোনও এক জনৈক কবি লিখেছিলেন-- ‘আলেকজান্ডার ট্রেনের কামরায় দাঁতন বেচেন’। বিশ্বাসের কাছে সৎ ছিলেন কমলেশদা। আরও অনেক মজার মজার যাপন কথা শুনেছি ওঁর বন্ধু রমাপ্রসাদ নাগের কাছে। কমলেশদার আত্মার শান্তি কামনা করি। প্রণাম দাদা।  

---------------------------------------------------------

বন্ধুর মতো মেশার সুযোগ পেয়েছি

অম্বরীশ ঘোষ

যেই মানুষটার কাছ থেকে আজীবন শুধু শিখেই গেলাম, দু’হাত পেতে নিয়েই গেলাম, সেই মানুষটা ‘নেই’-- এই শব্দটায় আমি বিশ্বাসী নই। যা কিছু জ্ঞান, প্রাপ্তি, জনসংযোগের উপায়, মানুষ হিসাবে বিস্তার, তার সবটা জুড়েই থেকে যাবেন এই মানুষটা। ‘মামা’ সম্বোধন করলেও বন্ধুর মতো মেশার সুযোগ পেয়েছি, সমাজ-সংস্কৃতিতে বিচরণের সৌভাগ্য হয়েছে ওনার সঙ্গে। যতদিন সাহিত্য-সংস্কৃতি থাকবে, ততদিন কমলেশ রাহারায় থাকবেন।

---------------------------------------------------------

কবিজন্মের কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হয় কবি কমলেশ রাহারায়ের স্নেহস্পর্শে

গৌরব চক্রবর্তী

'অথচ কেউ জানে না

কোন পাহাড়ে অদলবদল হল মেঘ

একা একা সূর্য উদয় হল...' 

              –কমলেশ রাহারায়

কাকু, অর্থাৎ কবি কমলেশ রাহারায় সম্পর্কে এই লেখা কীভাবে লিখব? কী লিখব? আমার এই সামান্য কবিজীবনের সূচনাকালীন ঘ্রাণ এই কাকুর কাছ থেকে পাওয়া! আমার কবিজন্মের কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হয় কবি কমলেশ রাহারায়ের স্নেহস্পর্শে, তাঁর আদরজনিত প্রশ্রয়ে, তাঁর কবিতার আশ্রয়ে এসেই। তিনি যে সন্তানস্নেহে তাঁর কবিতা ভাবনা ও কবিজীবন আমার যাপন ও জীবনের মধ্যে সঞ্চারিত করে দিয়েছেন, সেই বীজ ফেটে ফেটে আজও কিছু চারাগাছের জন্ম হয় আমার লেখার খাতায় –সেগুলোকেই আমি কবিতা বলে ডাকি। কবি কমলেশ রাহারায় আমার শুরুর দিকের কবিতাগুলির ঠিকঠাক দিক-নির্দেশ করিয়া দিয়েছেন বলেই... আজও কেউ কেউ আমার নামের সঙ্গে ‘কবি’ শব্দটি জুড়ে দিতে পারেন আজও! এই ঋণ শোধ হওয়ার নয়... শোধ করার নয়! কাকু আছেন। থাকবেন -কাকু হয়ে, বিরাট মাপের একজন কবি হয়ে থেকে যাবেন আমার হৃদয়ে চিরকাল...

---------------------------------------------------------

শূন্য ঘরে শুধু স্মৃতি পড়ে আছে

ব্রহ্মজিৎ সরকার

এই ঘরে ঢুকেই দেখি বিছানাটি নেই। বিছানার উপর কবিও নেই। প্রায় চার বছর আগে এখানেই কাকুর সঙ্গে অর্থাৎ কবি কমলেশ রাহারায়ের সঙ্গে শেষ আড্ডা ও কথা হয়েছিল।

আজ এই শূন্য ঘরে শুধু স্মৃতি পড়ে আছে। স্বর্গীয় কবি কমলেশ রাহারায়ের জন্য থাকল আমার প্রণাম ও অনেক অনেক শ্রদ্ধা।

---------------------------------------------------------

ভালোবাসাই বুঝি দুঃসাহসী করে তোলে

দেবায়ন চৌধুরী

অরুণাভ কতবার বলেছে বাড়িতে আসতে, হয়ে ওঠেনি। আজ হল। কিন্তু কাকুর সঙ্গে দেখা হল না। ওঁর ছবির সামনে যে দু-কথা লিখছি, এটা হয়তো দুঃসাহস। ভালোবাসাই বুঝি দুঃসাহসী করে তোলে।

কবির বাড়ি দেখলাম। উত্তরাধিকার বয়ে চলেছে নদীর মতো…

শুদ্ধ হবার পালা...

---------------------------------------------------------

ভিডিও সাক্ষাৎকার শুনতে লিংকে ক্লিক করুন

কমলেশ রাহারায়ের ভিডিও সাক্ষাৎকার ১

কমলেশ রাহারায়ের ভিডিও সাক্ষাৎকার ২

কমলেশ রাহারায়ের ভিডিও সাক্ষাৎকার ৩