প্রশ্ন
হাতের উপর হাত রেখেছি, ঠোঁটের ফাঁকে বিষ,
এইটুকুতেই প্রেমের কথা শেষ হলে কি চলে?
মন মেজাজের আবেশটুকু
তৃষ্ণা হয়ে ভিজতে ভিজতে
শরীরজুড়ে নামলো এসে এক আষাঢ়ের জলে।
হাতের উপর হাতটি রাখা, আঙুলরা একজোট,
এমন সময়ে শরীর কি তোর ছুটির কথা বলে?
ভাবিস না আর তার কথাটি, দেখবি ও সব খালি
মন-ভুলোনো ঘর-ফুরোনো প্রেম পিরিতির ধুলো,
প্রতীক্ষাতেই থাকবি যদি
একলা বসে নিরবধি,
কার দুয়ারে আস্তে আস্তে জমবে স্মৃতিগুলো?
হাতের উপর হাত রেখে দেখ, চোখের নীচে কালি,
এই আকালে ঠোঁটদুটি তোর কার অন্ধকার ছুঁলো?
হাতের উপর হাত রেখেছি, ঠোঁটের ফাঁকে ঝড়,
দুটি জিভের এক সহবাস, স্বাদ কি পড়ে মনে?
আষাঢ় গেছে, শ্রাবণ গেছে
নিরুদ্দেশের অন্বেষণে,
এক ফালি মেঘ একরোখা তাও ফুঁসছে ঈশান কোণে।
হাতের উপর হাতের বসত, অনির্বাণ অধর,
এমন সময়ে অপেক্ষাতে শরীর কি দিন গোনে?
নেটিভিটি
আজ ভোরের ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারেরা
আর পাশের বাড়ি থেকে বৃদ্ধ কিশোরবাবু
এসেছেন
নবজাতক শিশুটিকে দেখতে।
এখনও কথা ফোটেনি আধো-আধো বুলিতে,
দীঘির মত স্বচ্ছ চোখে সে অবাক হয়ে দেখছে দুনিয়াটা।
ভাষা নেই, স্মৃতি নেই, শ্লেষ নেই,
তবু তাকে দেখবে বলেই এসেছে
ফড়িং আর মৌমাছি,
রুই কাতলা তেলাপিয়া আর
পাড়ার সবচেয়ে ডাকসাইটে হুলো বেড়ালটা।
রাষ্ট্রপতি কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন,
তাঁর হেলিকপ্টার নামবে সামনের মাঠে
তাড়াহুড়ো করে বানানো জোড়াতালি হেলিপ্যাডে।
শতদল ক্লাবের চেয়ারম্যান দেবাশিসবাবু
আর বাবাই বলে যে ছেলেটা
পাড়ায় সব্বার টিভি সারায়,
সবাই এসেছে নবজাতককে দেখতে।
রিকশা থেকে হন্তদন্ত হয়ে নেমেছেন জ্যোতিষার্ণব,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের অধ্যাপক সাহেব অবশ্য
ট্রামেই এসেছেন,
বেসামাল ধুলোবালি উড়িয়ে এসেছে হেমন্তের হাওয়া,
আর আকাশে টিকিট না কেটেই ঢুকে পড়েছে
অকালের মেঘ।
হালকা বৃষ্টি এসেছে সকাল থেকেই,
তার সঙ্গে মিষ্টির দোকানের মালিক অমিতদাও
দুই মেয়ে আর স্কুলের বন্ধু রনিকে নিয়ে এসেছেন
নবজাতককে দেখবেন বলে।
এ নবজাতকের কথা লেখা আছে
আদিম কবিতার খাতায়।
পৃথিবীর কোনো এক অনির্দিষ্ট যুগে
সমুদ্রের গর্ভ থেকে উঠে আসবে এই শিশু,
আকাশের বুক চিরে ছুটে যাবে আশ্চর্য উল্কা,
আর পূবের দিগন্ত থেকে উপহার নিয়ে আসবে
তিনজন বেরসিক বুড়ো।
আর ঠিক তখনই এই নবজাতক
দেয়ালা করতে করতে
রচনা করবে এক নতুন পৃথিবী।
তার এক পা থাকবে মহাকাশে,
অন্য পা থাকবে আগ্নেয়গিরির অতলে,
আর সে দু’ হাত বাড়িয়ে খেলতে খেলতে
হয় পৃথিবীতে গড়ে তুলবে অতুলনীয় এক স্বর্গরাজ্য,
নয় সবকিছু ধ্বংস করে
আবার নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে বসবে।
দাড়ির গল্প
পঞ্জিকাতে লগ্ন দেখে সেলুন দিলাম পাড়ি,
বাড়ি এবং হাঁড়ির পরেই সবসে প্যায়ারা দাড়ি!
দাড়ি ব্রহ্মা, দাড়ি বিষ্ণু, দাড়ি মহেশ্বর,
আল্লাতালা, গড, যীশু সব দাড়ির মাতব্বর।
সেই দাড়িটিই কাটতে হবে, পাষাণ সমাজ বলে;
আধকামানো গাল নিয়ে কি আপিস যাওয়া চলে?
ক্ষুরটি হাতে যতই কাছে আসেন পরামানিক,
বিষণ্ণতায় দাড়ির কথাই ভাবছি বসে খানিক।
কারোর দাড়ি লম্বামাফিক, কারোর দাড়ি খাটো,
কারোর দাড়ি ছাগল-সমান, থুতনি আঁটোসাঁটো।
এক একজনের দাড়ির ডগা পিছনপানে মোড়া,
কারোর দাড়ি গোঁফের সঙ্গে এক্কেবারে জোড়া।
হরেক রকম দাড়ির বাহার দেখতে যাবো কোথা?
এই জগতের যতেক মহান মানুষ দাড়ির হোতা।
মার্ক্স, ফ্রয়েড, শোপেনহাউয়ার, লেনিন এবং র্যালে,
মাথায় যাঁদের বুদ্ধি, তাঁদের দাড়িও থাকে গালে।
আমার দাড়ি কামায় যে’জন, সে’জন সুজন বটে,
থুতনি জুড়ে রাখছি দাড়ি, মগজ থাকুক ঘটে।
টাকা কামাই সাধ্য কোথায়? দাড়িই কামাই ব্লেডে।
কমুক টাকা, বাড়ুক দাড়ি, দাড়িরই পে-গ্রেডে।
ঢিল মারো
মৌমাছির চাকে ঢিল মারো,
ইচ্ছে করেই।
বহু দিন, বহু যুগ, বহু মুহূর্ত ধরে
ভন ভন ভন ভন শব্দে
বড় ব্যস্ত হয়ে পড়েছো ভায়া।
দিনের বেলা সমস্যা না হলে'ও,
রাত বিরেতে খাওয়ার পালা শেষ করে
শুতে গেলে
অন্ধকার নিঝুম নিস্তব্ধ রাত্তিরে
ঐ একটানা একঘেয়ে ভন ভন শব্দটা
তোমার বিরক্তিকর লাগে না?
হাতের কাছেই পাটকেল আছে,
পাঁচটি মধ্যবিত্ত কলমপেষা আঙ্গুলে
জীবনে প্রথমবার
কোনো কিছুকে শক্ত করে চেপে ধরো,
এক চোখ বন্ধ করে নিশানায় টিপ করে নাও,
অর্জুনের সেই পাখির চোখের মত।
তারপর বেশী না ভেবে,
ইচ্ছেটা কেটে পড়বার আগেই
ধাঁই করে ঢিলখানা ছুঁড়ে মারো
চাকের গায়ে,
যেখানে হাজার হাজার মৌমাছি,
না কি ভীমরুল, না কি বোলতা,
ভন ভন শব্দে যে যার নিজের বাচালতাটুকু,
নিজের অন্ধ বিশ্বাসটুকু ক্রমাগত জাহির করে চলেছে,
বিবাদ বিতর্কের তোয়াক্কা না করে।
মতামতের চাকে ঢিল মারো,
ইচ্ছে করেই।
শত সহস্র হুলের খোঁচা সহ্য করো,
সহ্য করো নির্বোধ গালিগালাজের বিষের জ্বালা,
সহ্য করো ধর্মের দংশন,
সহ্য করো ভদ্রলোকের ক্লীব তিরষ্কার,
সহ্য করো শ্রেণীহিংসার যাতনা,
সহ্য করো, সহ্য করো ভাই,
দাঁতে দাঁত চিপে, জিভ কামড়ে
সব সহ্য করেই
মতামতের চাকে ঢিল মারো,
দেখোই না,
মধু মেলে কি না মেলে।