এক বনরক্ষী
মানুষ যখন মগ্ন গভীর সুনিদ্রায়
আমরা তখন হাতি তাড়াই
ফসল ঘরবাড়ি মানুষকে অক্ষত রেখে
হাতিকে আমরা লোকালয় থেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে জঙ্গলে নিয়ে যাই
সেই যে কবে থেকে আমরা নিজ ঘর-বাড়ি ছাড়া!
সেই যে কবে থেকে আমাদের প্রিয়জন স্বজনদের মুখ দেখা নেই!
আমরা পাহারা দিই, আমরা জঙ্গল বাঁচাই, আমরা থেকেই যাই
রেঞ্জ থেকে বিট, বিট থেকে জঙ্গল আর জঙ্গলেই
বনের ভেতরে গাছ কাটা পড়ে থাকা দেখলে
শরীর আমাদের জ্বলে
বনের গাছেই যে আমাদের সঙ্গে একান্তে
নীরবে নিভৃতে প্রেমের কথা বলে।
শেষের গাঁথা
১
এখন আর থেকে থেকে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠে না
এখন আর খোঁজ রাখার মতো প্রিয় মানুষটিও নেই
এখন দিগন্তরা শুধু অস্পষ্ট কুয়াশার চাদরে মোড়া সকাল সন্ধ্যা
নদীর এপার ওপারে জমে গেছে
এখন শুধু সহস্র ব্যথার পুঞ্জীভূত স্তূপ
এই তো সেদিন যখন খুশি ছুটে যেতাম, যখন খুশি ছুটে আসতো সে
আজ আমাদের জীবন আবৃত চক্রবুহ্যের ঘেরাটোপে আবদ্ধ
আজ শুধু দৃষ্টি ছোটে মন ছুটে চলে যায় বহুদূরে
স্মৃতিবিজড়িত চিরপরিচিত সেই চা-বাগানে
২
আমার রাধিকা মথুরায়...
জানি এলোকেশে সকাল থেকে সাঁঝবেলায়
সে যে এখন বড়ই অসহায়
দোহাই ওকে আর কষ্ট দিও না...
দোয়া করে ওকে আমার কাছ থেকে
কেড়ে নিয়ো না ...
ওকে ছাড়া সত্যিই আমি বাঁচবো না...
অরণ্যের সুন্দর একটি গাছ
একটি জীবন্ত গাছকে কত সুন্দর লাগে!
নদীর তীরে তার বেড়ে ওঠা
অল্প একটু উঁচু, সুন্দর তার কাণ্ড, ডাল, পাতা...
কতো সুন্দর লাগে...!
কত ভালো লাগে...!
যুগ যুগ বেঁচে থেকো হে গাছ...
মন তো করে গাছ তোমায় অরণ্য থেকে তুলে আনি
আর চোখের সামনে উঠোনে রোপন করি
আর তোমায় প্রাণ ভরে
তোমার সৌন্দর্যকে দেখতে থাকি...
কিন্তু সে যে এখন আর সম্ভব নয়...
তুমি যে এখন অরণ্যের গাছ
যুগ যুগ বেঁচে থেকো হে গাছ ...
নির্জন সমাধি
আজ বুকের ভেতর বেদনারা সহস্র পাড় ভেঙে অনন্তে বয়ে যায়
হয়তো আমার জন্মই ভুল ছিল এ ধরায়
তাই হয়তো আমার সরল মনের কান্না আর কেউ দেখতে পেলো না...
গোপনে আমার বেঁচে থাকা কোন দিন যেন পূর্ণ হল
যে দেশে মৃত্যুর আগে সমাধি স্থল ঠিক করেই রাখতে হয়
আমি অবশ্য সে দেশে জন্মাইনি...
তবুও স্বপ্ন দেখি নির্জন, একাকী একটি সমাধির