অনুবাদ: অরিত্র সান্যাল
নিউ ইয়র্ক সিটি
বাচ্চা মেয়েটা নিজে থেকেই
ওর গোলাপ-পাপড়ির মতো ব্যাগটা
পুলিশকে দিতে গেল।
সেই জায়গায় আর তার বাইরেও
তখন তুষার পড়ছে, আকাশ
ভাঙাচোরা, নাপিতের দোকান থেকে
গান, চোদ্দ ডলারের
ওয়াইন গ্লাস,
ধুসর পায়রাগুলো, রাইকার আইল্যাণ্ড,
আইস স্কেটাররা আলিঙ্গন করছে
পরস্পরকে, কারও
উত্থান আর পতন কিন্তু
সে সব এই গল্পে
বলার মতো নয়। মেয়েটার মা
মিটমিট করে জ্বলছে
মেয়েটার পিছনে। পুলিশটি
খামখেয়ালি বাবার মতো
বাঁকা হাসি দেয়। কেউ একটা
স্টিল ড্রাম
বাজাল এই সমস্তকিছুর তলায়। সুড়ঙ্গের
ধাতু মজ্জায় তার মন্ত্র একটা
চকিত ঝলক উচ্চারণ করে, আমাদের
নত হতে বলে। যদি কিছু দেখে থাকো,
বলো তবে, যদি এখানে আছ,
তার মূল্য চোকাও
(৯ মার্চ, ২০১৯)
ভারমন্ট
ওই ছায়াচ্ছন্ন তুষার এতই নীল অদ্ভুত যে
দেখে মনে হয় সে কখনও নিজেকে নিয়ে বাঁধা গান শোনেনি
আর তার বেশিটাই ছাই হয়ে
উঠে যাচ্ছে পাহাড়চূড়োয়
দেখতে পাচ্ছি।
খুব অল্প সময়ের জন্যই এখানে আলো আসে
আর তা এতই ঠাণ্ডা যে জীবন বেরিয়ে যায়
যদি যেতে দাও।
দেবদারু জেগে ওঠে হত পশুপাখির মধ্যে
উজ্জ্বল।
এত রকমের জৈব দশা
বসন্তে বেড়ে ওঠে।
রাখে কোথায় নিজেকে, কীভাবে
জোগায় বিশ্বাস যে
বেঁচে থাকবে?
অন্য জীবনে আমি,
আরিজোনায় পরিচারিকা হয়ে থাকি
আমার লিউকেমিয়া আছে,
আমি পাড়া-প্রতিবেশীদের প্রতি নিষ্ঠুর,
আমি এক মহিলার প্রেমে পড়েছি,
আমি রোজ এক ল্যাপ সাঁতরাই।
অন্য অন্যতর এক জীবনে আমি রুগী,
আমি তুষারপাত করি।
(১১এপ্রিল, ২০১৯)
-------------------------------------------------------------------------
কবি পরিচিতি: রবিন মাইয়ার্স (Robin Myers, B. 1986) আক্ষরিক অর্থেই শূন্য দশকের কবি। আশা করা যায়, বাংলা সাহিত্যের জগতে সে থাকলে কবিতে কবিতে দ্রুত আলাপ জমে উঠত। কিন্তু থাকে সে মেক্সিকোয়, সুদূর মেক্সিকোয়। এ সত্ত্বেও অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ যে ঘটে গেল তা কেবল অরুণাভ রাহারায়ের উদ্যোগেই। কাছ থেকে দেখতে পেলাম পাকেচক্রে আমরা যে অন্তহীন দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে চলেছি, রবিন তাতে স্পষ্ট জেগে আছে; সাধ্যমতো রুখে দাঁড়াচ্ছে, যতটা বিদ্রোহ এক কবিকে মানায়-– করছে। এই লেখাদুটি সেই সক্রিয়তার সাক্ষ্য বহন করে। লেখাদুটির মধ্যে বয়ে চলা চাপা রাজনৈতিক আঁচটি নিয়ে একদিন জিজ্ঞেস করায় রবিন সরাসরি জানাল, আলাদা করে রাজনৈতিক কবিতা লেখার দায় তার নেই। কিন্তু একটা সময়-– যে সময়ে আমরা বেঁচে আছি, তার থেকে তো আর অন্ধ হয়ে নিস্তার লাভ করা যায় না! এই ইঙ্গিতেই পরিষ্কার বোঝা যায় রবিন নিজের ভাষাগত, ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক পরিমণ্ডলে শিকড়ের মতো গেঁথে দিয়েছে তার অস্তিত্বের শিরা উপশিরা। কবিতায় তো বটেই, অনুবাদকর্মেও রবিনের সিদ্ধি আকাশছোঁওয়া। একজন অনুবাদক হিসেবেই রবিন প্রথমত আমাদের কাছে পৌঁছয়। Kenyon Review, the Harvard Review, Two Lines, The Offing, Waxwing, Beloit Poetry Journal, Asymptote, the Los Angeles Review of Books, Granta , Tupelo Quarterly আর Inventory প্রভৃতি শীর্ষস্থানীয় সাহিত্যপত্রে তার বিভিন্ন অনুবাদ প্রকাশিত। ২০০৯ সালে American Literary Translators Association (ALTA)-এর ফেলোশিপ; ২০১৪-তে, Banff Literary Translation Centre (BILTC)-এ রেসিডেন্সি; আর ২০১৭ সালে রবিন feminist translation colloquium A-Fest- অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করে।