Thursday, October 21, 2021

গাবো ও মের্সেদেস: চিরবিদায়


গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস বলতেন, ‘প্রত্যেকের তিনটি জীবন আছে: প্রকাশ্য, ব্যক্তিগত ও গোপন।’ তাঁর স্ত্রী প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যেকার সীমারেখা দৃঢ়ভাবে বজায় রাখার প্রয়াসী ছিলেন, ছেলেদের বারবার মনে করিয়ে দিতেন, ‘আমরা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নই।’ তবুও তাঁদের বড় ছেলে, চিত্রপরিচালক ও চিত্রনাট্যকার রোদ্রিগো গার্সিয়া বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর কলম ধরেছেন। ‘গাবো ও মেরসেদেস: চিরবিদায়’-– এই বইয়ে তিনি তাঁর কিংবদন্তি বাবার জীবন-প্রান্তের সেই সময়টার কথা লিখেছেন, যে সময়ের কথা ডিমেন্সিয়ায় আক্রান্ত গাবো লিখে যেতে পারেননি। এই স্মৃতিকথায় তিনি ধরে রেখেছেন স্মৃতিভ্রষ্ট গাবোর অন্তিম লগ্নের অম্লমধুর কিছু মুহূর্ত আর তাঁর পাশে অর্ধ শতাব্দীরও অধিককালের জীবনসঙ্গী মেরসেদেসের প্রত্যয়ী উপস্থিতি। বইটির মূল ভাষা ইংরেজি, নাম: ‘A Farewell to Gabo and Mercedes’, প্রকাশকাল: ২৭ জুলাই, ২০২১। বইটির পাঠ প্রতিক্রিয়ায় সলমন রুশদি জানিয়েছেন: “This is a beautiful farewell to two extraordinary people. It enthralled and moved me, and it will move and enthral anyone who has ever entered the glorious literary world of Gabriel García Márquez.”

ভাষান্তর: অরুন্ধতী ভট্টাচার্য

আমি আর আমার ভাই যখন ছোট ছিলাম, বাবা আমাদেরকে একটা কথা দিতে বলেছিলেন: আমরা যেন ২০০০ সালের নববর্ষের আগের দিনটি তাঁর সঙ্গে উদযাপন করি। আমাদের কৈশোরেও তিনি বহুবার এই প্রতিজ্ঞার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এমন কি তাঁর জোরাজুরিতে আমার একটু অস্বস্তিই হত। কিন্তু বড় হওয়ার পরে বুঝতে পেরেছিলাম যে এ ছিল তাঁর সেই সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকার আকাঙ্ক্ষা। বিংশ শতাব্দী শেষ লগ্নে যখন পৌঁছবে, তখন তাঁর বয়স হবে বাহাত্তর আর আমার চল্লিশ। ছোটবেলায় কিন্তু ওই সময়টাকে খুব দূরে বলে মনে হত না। পরবর্তীকালে আমরা মানে আমি আর আমার ভাই বড় হয়ে যাওয়ার পর অবশ্য এই প্রতিজ্ঞার কথা আর বিশেষ বলা হত না। তবে ওই দিন আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম বাবার সবচেয়ে পছন্দের শহরে, কার্তাহেনা দে ইন্দিয়াসে। সেদিন বাবা একটু লাজুক স্বরে আমায় বলেছিলেন, ‘তোমার সঙ্গে আমার একটা চুক্তি ছিল, মনে আছে?।’ সম্ভবত আমাকে জোরাজুরি করার জন্য একটু অস্বস্তিতে ছিলেন। আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, মনে আছে।’ সেই দিনের পর থেকে আর কখনও আমরা এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করিনি। তারপর তিনি আরও পনের বছর বেঁচে ছিলেন।

তাঁর বয়স যখন সত্তরের কাছাকাছি, তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘রাতে আলো নিভে যাওয়ার পর কি ভাব?’ ‘ভাবি যে প্রায় শেষ হয়ে এল।’ তারপর একটু হেসে বললেন, ‘তবে আরও কিছু সময় বাকি আছে, এখনই দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই।’ শুধু আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যই যে সেকথা বলেছিলেন তা নয়, বাস্তবিক তিনি আশাবাদী ছিলেন। ‘একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবে যে তুমি বুড়ো হয়ে গেছ। ব্যাপারটা এতটাই আকস্মিক, আগে থেকে কিছুই জানা যায় না, নাটকের মতো আবির্ভূত হয়।’ বাবা বলে চললেন, ‘অনেক বছর আগে একবার শুনেছিলাম যে লেখকের জীবনে এমন একটা সময় আসে যখন আর দীর্ঘ কাহিনি লিখতে পারা যায় না। মস্তিষ্ক আর তখন উপন্যাসের বিস্তৃত আঙ্গিক বা তার জটিল বুননকে ধারণ করতে পারে না। সেটা যে ঠিক তা এখন বুঝতে পারি। তাই এখন থেকে ছোট ছোট লেখা লিখতে হবে।’

তারপর তাঁর বয়স যখন আশি, তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কেমন লাগছে এখন?

-আশির কোঠায় এসে পুরো চিত্রটা বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়। আর শেষের সেই ক্ষণ এগিয়ে আসছে।

-তোমার কি ভয় লাগছে?

-না, গভীর বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হচ্ছি।

এই সব কথাগুলো মনে পড়ে আর তাঁর কথার সারল্য আমায় ভেতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। তবে তার থেকেও বেশি কষ্ট দেয় আমার প্রশ্নের নিষ্ঠুরতা।

২০১৪ সালের মার্চ মাস। একটা সপ্তাহের মাঝামাঝি এক দিন সকালবেলা মাকে ফোন করেছিলাম। মা বললেন যে দুদিন হল ঠাণ্ডা লেগে বাবা বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। বাবার ক্ষেত্রে এটা নতুন কিছু নয়, কিন্তু এবারের অসুখটা যেন একটু আলাদা। মা বললেন, ‘খাচ্ছে না আর উঠেও বসতে চাইছে না। এটা ঠিক আগের মতো নয়, একেবারে কিছুই করতে পারছে না। আলবারোর ঠিক এই রকমভাবেই শুরু হয়েছিল।’ বাবার এক বন্ধুর কথা বললেন মা, তিনি আগের বছর মারা গিয়েছেন। তারপর বললেন, ‘এবার আর ভালো হবে না।’ এ ছিল মায়ের ভবিষ্যৎবাণী। তবুও আমি উদ্বিগ্ন হইনি, ভেবেছিলাম দুশ্চিন্তা থেকেই মা এসব বলছেন। কিছুদিন আগে অল্প সময়ের ব্যবধানে বেশ কয়েকজন কাছের মানুষ চলে গিয়েছেন। তার মধ্যে মাকে সবথেকে কষ্ট দিয়েছিল ছোট দুই ভায়ের মৃত্যু। তাঁরা মায়ের খুব স্নেহের মানুষ ছিলেন। যাই হোক, ফোনটা করার পর থেকে আমি ভাবতে শুরু করলাম, এই কি তবে শেষের শুরু?

আমার মা দু’-দুবার ক্যান্সারকে পরাস্ত করে ভালো হয়ে উঠেছিলেন। সেই ব্যাপারেই কিছু ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে তখন লস অ্যাঞ্জেলসে যেতে হবে। সেই জন্য ঠিক হল যে আমার ভাই প্যারিস (যেখানে সে থাকে) থেকে মেহিকো শহরে আসবে বাবার পাশে থাকার জন্য। আর আমি মায়ের সঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকব। ভাই এখানে আসতেই বাবার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য ডাক্তারেরা বললেন যে বাবার নিউমোনিয়া হয়েছে। তাই হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেশি সুবিধা হবে। মনে হল শেষের দিকে ডাক্তারেরা এ কথাটা মাকে আগেই বলেছিলেন, কিন্তু মা তেমন গা করেননি। হতে পারে ডাক্তারি পরীক্ষায় কি বের হবে তাই নিয়ে মা ভয় পাচ্ছিলেন।

পরের কয়েক দিন ধরে ভায়ের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে হাসপাতালের ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। হাসপাতালে ভর্তি করতে গিয়ে ভাই যেই বাবার নাম বলেছে সেখানে যে মহিলা অফিসার ছিলেন তিনি রীতিমতো আবেগপ্রবণ হয়ে চেয়ার ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে ভগবান! লেখক গার্সিয়া মার্কেস? আমি কি আমার বৌদিকে (অথবা ননদকে) ফোন করে ওনার কথাটা বলতে পারি? এই খবরটা জানা ওঁর পক্ষে খুব জরুরি।’ ভাই তাঁকে সেটা না করতে বিশেষভাবে অনুরোধ করে। তাতে মহিলার মুখটা বেজার হয়ে যায়। তারপর গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য বারান্দার একেবারে শেষে অপেক্ষাকৃত স্বতন্ত্র একটি ঘরে বাবাকে রাখা হয়। কিন্তু সময় যত এগোতে লাগল দেখা গেল ডাক্তার, নার্স, স্ট্রেচার নিয়ে যাওয়ার লোক, টেকনিশিয়ান, অন্য রুগী, হাসপাতালের তত্ত্বাবধানের কর্মী, মায় সেই অফিসারের বৌদি পর্যন্ত একে একে দরজার কাছে আসছে শুধু একবার তাঁকে দেখার জন্য। এর ফলে হাসপাতাল থেকে বেশি লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিল। তাছাড়া, সাংবাদিকেরাও ধীরে ধীরে হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছেন এবং ইতিমধ্যে খবরে প্রকাশিত যে তাঁর অবস্থা সংকটজনক। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে তাঁরা প্রকৃত খবরই প্রকাশ করবেন, কারণ আমার বাবার অসুস্থতা তো এক অর্থে অগণিত মানুষেরও বিষয়। সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া তাই সম্ভব নয়। কেননা আমরা জানি যে এই কৌতূহলের একটা বিরাট অংশের উদ্ভব দুর্ভাবনা থেকে, শ্রদ্ধা থেকে, ভালোবাসা থেকে। আমরা যখন ছোট ছিলাম আমাদের বাবা মা সবাইকে বলতেন যে আমরাই হচ্ছি গোটা বিশ্বের মধ্যে সব চাইতে ভালো ছেলে। এর ফলে ভালো ছেলে হওয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনও পথ ছিল না। তাই সে ক্ষমতা থাক বা না থাক অত্যন্ত ভদ্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে আমরা এই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলাম। আবার সেটা এমনভাবে করতে হল যাতে যে কোনও অবস্থাতেই আমার মা ঠিক যেমন ভাবে চেয়েছেন তেমন ভাবে তাঁর ব্যক্তিজীবন ও বহির্জীবনের মধ্যেকার সীমারেখা বজায় থাকে। তাঁর কাছে এটা সব সময়েই খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সম্ভবত টেলিভিশনে খোশগল্পের যেসব বাজে প্রোগ্রাম হত সেগুলো দেখার ফল। ‘আমরা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নই’, কথাটা আমাদের মনে করিয়ে দিতে পছন্দ করতেন তিনি। তাই এটা আমার অজানা ছিল না যে তাঁর জীবদ্দশায় এই স্মৃতিচারণ প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না।

আমার ভায়ের সঙ্গে বাবার দেখা হয়নি প্রায় দু'মাস হয়ে গেছে। তাই বাবাকে খুব বিচলিত দেখাচ্ছিল। কারণ ভাইকে চিনতে পারছেন না আর কোথায় আছেন সেটাও বুঝতে পারছেন না। ফলে আরও বেশি নার্ভাস হয়ে পড়ছেন। এরই মধ্যে ড্রাইভার ও সেক্রেটারির উপস্থিতি তাঁকে একটু শান্ত করছিল। ওঁরা পালা করে বাবার কাছে থাকছিলেন। আর ছিলেন বাড়ির রাঁধুনি ও গৃহকর্মে সাহায্যকারী মহিলা। তাঁরাই রাতে বাবার কাছে থাকছিলেন। ভায়ের সেখানে থাকার বিশেষ প্রয়োজন ছিল না, বরং দরকার ছিল একটি পরিচিত মুখ, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে উঠে যাকে দেখলে বাবা শান্ত থাকবেন। ডাক্তারেরা আমার ভাইকে জিজ্ঞাসা করলেন কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় এখন বাবাকে সে কেমন দেখছে। কেননা তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না তাঁর মানসিক অবস্থা ডেমেন্সিয়ার কারণে না শারীরিক দুর্বলতার জন্য। তিনি প্রায় কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। অতি সাধারণ কিছু প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারছিলেন না। ভাই ডাক্তারদের বলল যে এখন অবস্থা একটু বেশি খারাপ হয়েছে ঠিকই, তবে বহু মাস যাবৎ বাবা এই রকম অবস্থাতেই আছেন। 

এই হাসপাতালটি দেশের মধ্যে চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষণের অন্যতম একটি কেন্দ্র। তাই সকাল হতে না হতেই একজন চিকিৎসক আবির্ভূত হন একদল ইনটার্ন চিকিৎসক সঙ্গে নিয়ে। তাঁরা রোগীর বিছানার পায়ের কাছে জড়ো হয়ে অধ্যাপক চিকিৎসকের কথা শোনেন আর তিনি রোগীর অবস্থা ও তৎসংক্রান্ত চিকিৎসা নিয়ে কথা বলে যান। আমার ভায়ের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে ওই ইনটার্নদের কোনওই ধারণা ছিল না তাঁরা ঠিক কার চিকিৎসা করছেন। কিন্তু তাঁকে দেখতে দেখতে তাঁদের মুখে যে কৌতূহলের আভাস ফুটে উঠত সেটাই বলে দিত যে তাঁরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছেন। তারপর চিকিৎসক তাঁদের জিজ্ঞাসা করলেন কারুর কোনও প্রশ্ন আছে কিনা, তাঁরা সকলেই মাথা নাড়লেন এবং বাধ্য ছাত্রের মতো অধ্যাপককে অনুসরণ করে বেরিয়ে গেলেন।

দিনে অন্তত পক্ষে দু’বার, যখন হাসপাতালে ঢোকে আর বেরোয়, অগণিত সাংবাদিকের দল আমার ভাইকে চিৎকার করে ডাকে। আর সেও উনিশ শতকের প্রারম্ভের ভদ্রলোকের মতো ভদ্রতা বজায় না রেখে পারে না। তাই কেউ তাকে সরাসরি ডাকলে তাকে অগ্রাহ্যও করতে পারে না। ফলে যখনই তাকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ‘গোনসালো, আপনার বাবা আজ কেমন আছেন?’, সে বাধ্য হয়ে তাঁদের দিকে এগিয়ে যায় আর অমনি তাকে ঘিরে ধরে গণমাধ্যমের চক্রব্যূহ। দূরদর্শনে সেই ছবি দেখে বুঝতে পারতাম একটু ঘাবড়ে গেলেও সবকিছু নিখুঁত শৃঙ্খলার সঙ্গেই সে নিয়ন্ত্রণ করছে। তবুও এই ধরণের আচরণ পরিহার করতে বলতাম। ওকে বোঝালাম যে যদি একজন চিত্রতারকার একটা ছবিতে দেখা যায় যে তিনি ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে আসছেন মাথাটা সামনের দিকে ঝুঁকে আছে, মুখে বিরক্তির চিহ্ন এবং আশপাশের কোনও কিছুকেই গ্রাহ্য করছেন না, তার মানে এই নয় যে তিনি অমার্জিত বা উদ্ধত। তিনি শুধুমাত্র মর্যাদা বজায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমার কথা এমনভাবে শুনল যেন মনে হল ওকে কোনও অপরাধের অংশী হওয়ার জন্য বোঝাবার চেষ্টা করছি। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমার কথা মেনে নিলেও নিজেকে দোষী মনে করছিল। তবে স্বীকার করল যে সময়ের সঙ্গে এই খ্যাতির জগতের অদ্ভুত নিয়ম-কানুনগুলো ধীরে ধীরে রপ্ত করতে পারবে।

চিকিৎসার ফলে বাবার নিউমোনিয়ার সমস্যার কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল, কিন্তু টমোগ্রাফির ছবিতে দেখা গেল যে প্লুরা অঞ্চলে এবং ফুসফুস ও লিভারের কিছু অংশেও জল জমেছে। তার সঙ্গে রয়েছে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। তবে বায়োপ্সি না করে চিকিৎসকেরা সে ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হতে পারছেন না। কিন্তু সম্পূর্ণ অজ্ঞান না করে বায়োপ্সির জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। অথচ তাঁর শরীরের যা অবস্থা তাতে অজ্ঞান করার পরে হয়তো স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন না। তখন তাঁকে ভেন্টিলেটরে দেওয়া ছাড়া আর কোনও পথ থাকবে না। দূরদর্শনের চিকিৎসা সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে এই বিষয়টা দেখায়, তবে ব্যাপারটা খুব সহজে দেখালেও আসলে তা ভয়ংকর। লস অ্যাঞ্জেলসে মাকে পরিস্থিতিটা খুলে বললাম এবং ঠিক যা ভেবেছিলাম, তাই হল, মা ভেন্টিলেটরে দিতে চাইলেন না। সুতরাং অপারেশন ছাড়া বায়োপ্সি করা গেল না, ফলে ক্যান্সার ধরা গেল না আর সেই মতো চিকিৎসাও শুরু হল না।

আমি আর আমার ভাই আলোচনা করে ঠিক করলাম যে সে চিকিৎসকদের মধ্যে একজনকে, জেনারেল ফিজিশিয়ান বা পালমোনোলজিস্টকে রোগনির্ণয়ের জন্য একটু চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ভাই জিজ্ঞাসা করল, ‘যদি ধরা নিই ফুসফুসে বা লিভারে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার আছে, সে ক্ষেত্রে কি করতে হবে?’ সম্ভবত কয়েক মাস বা তার একটু বেশি বেঁচে থাকবেন, তবে অবশ্যই কেমোথেরাপি করতে হবে। লস অ্যাঞ্জেলসে বাবার এক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বন্ধুকে পুরো পরিস্থিতি ও উপসর্গের কথা বললাম। তিনি শান্তভাবে বললেন, ‘সম্ভবত এটি ফুসফুসের ক্যান্সার।’ তারপর বললেন, ‘ওখানকার চিকিৎসকেরাও যদি এটাই সন্দেহ করেন তাহলে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে এসো, যেমন ভাবে রাখলে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন তেমন ভাবে রাখো আর কোনও ভাবেই হাসপাতালে ফিরিয়ে নিয়ে যেও না। হাসপাতালে রাখলে সকলেরই কষ্ট।’ মেহিকোতে আমার শাশুড়ির সঙ্গে কথা বললাম, তিনি একজন চিকিৎসক। সব শুনে তিনিও একই কথা বললেন – হাসপাতাল থেকে দূরে রাখতে যাতে আমার বাবা এবং আমাদের সকলেরই সুবিধা হয়।  

মাকে আমি সব কথা খুলে বললাম। যেখানে তাঁর সবচেয়ে বেশি ভয়, ঠিক সেটাই আমি নিশ্চিত করলাম: অর্ধ শতাব্দীরও অধিক সময় ধরে যিনি তাঁর জীবনসঙ্গী তিনি এখন মৃত্যুর সম্মুখীন। সে দিনটা ছিল শনিবার। সকালবেলা অপেক্ষা করছি কতক্ষণে মা আর আমি একটু একা হব। তারপর তাঁকে বিস্তারিত ভাবে বললাম এই কদিন কি কি হয়েছে আর কিই বা আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। মা আমার কথা শুনলেন, তারপর আমার দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন বিশেষ আগ্রহ নেই, কেমন একটা অবসন্ন ভাব, যেন বা বহুবার শোনা একটা গল্প তিনি আরেকবার শুনছেন। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে দরকারি প্রসঙ্গে এসে পৌঁছলাম; সংক্ষেপে কিন্তু পরিষ্কার করে বললাম: খুব সম্ভবত ফুসফুস বা লিভার অথবা দু’ জায়গাতেই ক্যান্সার হয়েছে, তাই সময় আর বেশি নেই, বড়জোর কয়েক মাস। মা কিছু বলার আগেই টেলিফোন বেজে উঠল। মা ফোন ধরলেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম। তাঁকে হতভম্ব হয়ে দেখছি। স্পেনের কারুর সঙ্গে কথা বলছেন। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকার মতো মনের জোর দেখে আমি বিস্মিত হয়ে গেলাম। মানসিক আলোড়ন সত্ত্বেও তাঁর এমন সহজভাবে কথা বলে যাওয়ার ক্ষমতা অতুলনীয়। তবুও, মনের অতখানি জোর থাকা সত্ত্বেও, শেষ পর্যন্ত আর পাঁচজনের মতোই বিচলিত হয়ে উঠলেন। তাই তাড়াতাড়ি কথা শেষ করে ফোন রেখে দিয়ে আমার দিকে ঘুরে শান্ত স্বরে বললেন, ‘এখন কি হবে?’ যেন বা আমাদের স্থির করতে হবে আমরা বড় রাস্তা ধরে যাব না গলির মধ্যে দিয়ে। ‘পরশু গোনসালো বাবাকে বাড়ি নিয়ে আসবে। আমাদের এখন মেহিকোয় ফিরে যেতে হবে।’ মা মাথা নাড়লেন, সবটুকু আত্মস্থ করলেন, তারপর আমায় জিজ্ঞাসা করলেন,

-তার মানে সেই সময় এসে গেছে? তোমার বাবার শেষ সময়?  

-হ্যাঁ, তাই তো মনে হচ্ছে।

-ওঃ মা গো!

বলে ইলেকট্রনিক সিগারেট ধরালেন।


(ক্রমশ)

Saturday, October 16, 2021

Poems of Arunava Raha Roy


Rabindra Sadan


Suddenly what happened, that your mobile phone flew away & landed inside my pocket directly from the space! What happened suddenly, that we kept stand still on the Rabindra Sadan back stage and the whole auditorium transferred into a ship! Oh look over there in the second floor, the white bearded captain whistling to command & start the journey. The fun & frolic will be starting right now… the young ladies from Andaman were about to start playing billiard! Where will we be floating away with this ship? Let's go, let us stand united close to the deck railing… let the wind starts floating hitting our sails. This scenario alike to Titanic, let it stand here, now let us flee away leaving the scene, leaving ourselves... to have some beer somewhere else.. Let a world, absolutely owned by us, starts revolving around us. The lord himself is standing just a bit outside the universe, with that world keeping on his palm... No other way to go! Without spoiling each other we won't be able to go anywhere else leaving this orbit, never ever...

(Translated from Bengali: Debanjana Mukherjee Bhowmik)


Bygone


Staying far is good.

Staying far means

we can never meet again.


Is it good, not to meet?

Definitely not!


But, being far can mean

that we can perhaps meet in

some coffee shop around

the city...

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


Faraway


You remained silent,

you had a reason too!

I too did not say anything for many days...

So, now, shall we begin to

talk again?


Let alone meeting,

many days you did not even ask me to write and yet

on your words I could have traveled

to Shimla-Manali...

since there were mountains,

there were some more songs


"Hey poet, how are you?"

You can break the

pattern and ask me once.

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


Bodhi


If you gift poems,

how long can I keep writing?

Shall I inscribe you into my

visceral intensity?


Deep inside that tree hollow

whose Esraj plays such a

pristine melody?


As your vibrations come

closer to me, an intense

desire to create more engulfs

my existence.

I revive again to attain the

light through the collaged-water...

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


Spring Restaurant


Come, let us travel from one

Spring to another...


Let us meet.

Let me listen your

Nightingale voice

When you speak.

Tell me about your

father's well-being!


Come,

let us go from one Spring to

another...


Let us both sink and drink

water...


Let us perch

within the moonspace

and converse...

(Translated from Bengali: Anindita Bose)


At Jorasanko with Snija


I ran out of poems

But a few of the songs of you came flipping their wings all the way to me,

I ask my writings to get drenched in soothing water,

I assure them that there is nothing that can be better


My dearest,I give you the name 'Snija'

I shall call you lovingly by this name from this very moment 

I shall drape your love all over my new born poems


During the rainy season the blow came from far away America...

Forget it, I thought with a sigh;

My dear, come, let's take a stroll at Jorasanko, together you and I

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Goddess


For long I had been walking on a rope 

Albeit it was tough

But I travelled a fruitful distance no doubt 

Where I finally stopped is called earth

Some unknown artist meticulously made you with this very earth

I place poems in your ten palms instead of brutal weapons,

But you fling all the poems unto the unknown;

After some moments of loathsome disgust


The poems will become burning stars

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Myth


If you really hurt me I shall not hesitate to go away

And lean against the dejected sky


Why are you so silent yet unfathomable?


You are like a drop of water on the floor


Today I retrieved this drop of water from the River Jalangi 


While still leaning against the sky I shall certainly make you understand-


That you are water


I shall, one day, like the fabled crow, bring you up from the depth of the earthen pitcher by putting stone chips one after the other until I can touch you. 


You are water

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Silent Belle


The colour of your disregard is like that of the dusk in flight

Which hides itself on the back of the moon


Sleepy eyelids are like weary rivulet which wash away all the light within


You come hurriedly to the office gate,

And lo! There drips down your body a lightning divine

(Translated from Bengali: Pratyush Karmakar)


Wonder


You are such a lover! What a poem!

You didn't come to Manali but through pen.

Bloomed in the tub, on the edge of the current...


Bless me, waking up late night

I am sitting in the hotel room to write you.


Those who have come to travel, no one knows

Here you are every day pick up the sun

from the alloy and burn it on the top of the mountain..

(Translated from Bengali: Mahmud Mitul)


---------------------------------------------------------

Arunava Raha Roy born in 1991 in Alipurduar town of West Bengal, India. He did his higher education in Kolkata. He loves poetry from his early age, had stemmed from his father who was a known poet. Since then, his work has been publishing regularly in leading magazine of Bengal. In the first stage of professional career he worked as a Poetry Editor in a print magazine and worked also as the Literary Editor in a web magazine. He has completed M. Phil from Assam University.

He has published four books of his own creation of poetry-- Sabuj Patar Megh (2010), Dinanter Bhasha (2015), Khamkheyali Pashbalish (2018) and Snijar Sange Jorasankoy (2020). He is the recipient of Barnali Smriti Puraskar (2015), Uralpool Puraskar (2017) and Soumen Basu puraskar (2017). He has recieved Travel Grant 2018 from Sahitya Akademi. Attend All India Young Writers Meet, May 2021 (Sahitya Akademi, Government of India). Attend Dhaka Lit Fest, Nov 2018. Went to Bangladesh Amar Ekhushe Grantha Mela, Feb 2018. Email: arunavaraharoy@gmail.com