Thursday, August 18, 2022

অশোক বাজপেয়ীর কবিতা | অনুবাদ: দেবলীনা চক্রবর্তী

আত্মাই শরীরের অনন্ত স্বপ্ন


বৃক্ষ হল সেই প্রাণ যা পৃথিবীর শরীর থেকে বেড়ে ওঠা এক অটুট বন্ধন


ফুল ততক্ষণই ফুল থাকে যতক্ষণ সে গাছের অংশ হয়ে ফুটে থাকে 

আর পাতা ততক্ষণ সজীব থাকে যতক্ষণ সে গাছের শরীরের সঙ্গে গেঁথে থাকে


শরীর সাধনায় লিপ্ত থাকাকালীনই একমাত্র শরীর ও আত্মার অভিন্নতাকে অনুভব করা সম্ভব


কারণ আত্মাই শরীরের অনন্ত স্বপ্ন দেখে।


উপাসনা এবং চিৎকারের মধ্যবর্তীতে


যেভাবে তুমি ছিলে 

তোমার তরঙ্গায়িত দেহ বিভঙ্গ নিয়ে

মহাশূন্যে থেকে ভালোবাসার মতো

সীমিত আধারে সঞ্চারিত হয়ে 

সেইখানে কি আমি স্থাপন করতে পারি কিছু শব্দবন্ধ

যার সংযোজনে কাব্য গঠন হতে পারে?


তোমার উন্মুক্ত একাকী আলোকিত 

আকাশ আছে যাকে আমার কোনও 

ইচ্ছে বাসনা, কোনও চিৎকার ছুঁতে পারে না

সেখানে অতীত হল এক কিরণ 

আর ভবিষৎ এক অপ্রত্যাশিত ফুল:


শাখা পল্লবিত হয় মুদ্রায় 

আর মুদ্রা এক নীরব প্রার্থনা

সংগীত হল নিঃসঙ্গতা 

চট্ট্যান যেমন ফুল তেমনি ফুলও সেই চট্ট্যান

শরীর তো সমুদ্র 

আবার সমুদ্র হল এক আকাশ 

এবং আকাশই একমাত্র চিৎকার

সেই চিৎকার হল উপাসনা


আমি দেখি 

ক্রমশ কাছে আসা অন্তকে

নদী একাকার হয় সাগরে 

আর অবাঞ্ছিত জল ফিরে আসে 

সময় এবং কামনায়,

আমি প্রথমবার চিনতে পারি 

শব্দকে অবসাদগ্রস্থ হতে 

উপাসনা এবং চিৎকারের মধ্যবর্তীতে অপেক্ষারত 

কবিতা 

যা কোথাও স্থাপন করা সম্ভব নয়।


পাত্র


হটাৎ জানা গেল যে এমন কোনও 

কানা উঁচু পাত্র নেই যেখানে কিছু

দুঃখ আর হরিয়ালি সব্জি রাখা হত

এখন আর নেই..

দুঃখ রাখার জায়গা

ধীরে ধীরে কমে আসছে।


সে আমাতে 


আমার মধ্যে যে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে তাকে নিয়ে আমি ভাবি না

আমার দেহের হাড় মজ্জা নিয়েও আমার ভ্রুক্ষেপ নেই 

যে আত্মা আমারই তাকেও আমি স্মরণ করি না 

যে আমার মনের ভিতর আছে, তবে তাকে কেন ভুলতে পারি না!


তাকে প্রশ্ন করো


হাওয়াকে নয়, তাকে প্রশ্ন করো

সে শব্দ থেকে এখনও অদৃশ্য কেন?

শব্দকে নয় বরং তার কাছে জানো 

সে শব্দের ধরা ছোঁয়ার বাইরে কেন? 

মৌনতাকে নয়, তার কাছে জানতে চাও

ঠিকানা তার ধ্বনি থেকে দূরে...

কিন্তু কত দূর আর কোথায়?


প্রেমের জন্য


সে তার প্রেমের জন্য স্থান সংরক্ষণ করল

সূর্য চন্দ্রকে একপাশে রেখে

আলাদা করে রাখলো তারাদের

বনলতাদের সরিয়ে দিল

ঝেড়ে ঝুরে নিল পৃথিবী

তারপর আকাশের গায়ের

ভাঁজ পরিপাটি করে

সে তার প্রেমের জন্য স্থান সংরক্ষণ করল


গড়া


কিছু প্রেম

কিছু প্রতীক্ষা 

কিছু কামনা দিয়ে 

রচিত হয়েছিল সে

--রক্ত মাংস দিয়ে 

গড়া তো ছিল বহু আগেই


শুধু শব্দ দিয়ে নয়


শুধুমাত্র শব্দ দিয়ে নয়

তাকে স্পর্শ না করেও ছুঁয়ে

চুম্বন না করেও সিক্ত হয়ে

বন্ধনে না জড়িয়েও দু'বাহুর আলিঙ্গনে 

বহুদূর থেকে তার প্রস্ফুটিত রূপ

চোখে না দেখেও দৃষ্ট হওয়া 

তাকে আমি বললাম।


শেষ 


সব কিছুর পরেও

বেচেঁ থাকবে শুধু প্রেম 

সঙ্গমের পরে সজ্জায় লেগে থাকা ভাঁজ যেমন

আমৃত্যু বিষয় ভাবনা,

অশ্বারোহীর দ্বারা পদদলিত হওয়া সত্ত্বেও

হরিৎ চাদর জড়িয়ে ধরিত্রীর পড়ে থাকা, 

গ্রীষ্মের শীর্ণ শুষ্ক ঝরনার কঠিন বুকে 

লেগে থাকা নোনা জলের ধারার মতো

অব্যাহত থাকবে 

শেষ পর্যন্ত

প্রেম



-------------------------------------------------------------------------

ভারতীয় কবি, প্রাবন্ধিক, সাহিত্য সমালোচক অশোক বাজপেয়ী। সরকারি কর্মচারি ছিলেন। তিনি ললিত কলা আকাদেমি, ভারতের জাতীয় শিল্প আলাদেমি, সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তাঁর কবিতা সংগ্রহ 'কহি নেহি ওহি' জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পান। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ-- শহর আব ভি সম্ভবনা হ্যায় (১৯৬৬), তৎপুরুষ (১৯৮৬), বাহুড়ি আকেলা (১৯৯২)। দায়াবতি মোদী কবি শেখর সম্মান ও কবীর সম্মাননা পেয়েছেন। ফ্রান্স ও পোল্যান্ডের সরকারি সম্মানেও ভূষিত হয়েছেন।

No comments:

Post a Comment